পাবদা মাছের প্রজনন, পোনা

মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: প্রিয় মাছ চাষি সুস্বাদু পাবদা মাছের তিন পর্বের ধারাবাহিকের আজ পাবদা মাছের প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনা-পর্ব ১ তুলে ধরা হলো।

বিস্তারিত লিখেছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মৎস্য বিজ্ঞানী ড. এএইচএম কোহিনুর ও মোঃ মশিউর রহমান।

বাংলাদেশের ছোট মাছগুলোর মধ্যে সুস্বাদু পাবদা মাছ আমাদের খুব প্রিয় মাছ হিসেবে সমাদৃত। অতীতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক জলাশয় যেমন, নদী-নালা, খাল-বিল, প্লাবনভূমি, ধানক্ষেত, হাওর, বাওড়ে এসব মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত।



বর্তমানে বাজারে এ মাছের সরবরাহ কম এবং চাহিদা বেশী হওয়ার কারণে বাজার মূল্য রুইজাতীয় মাছের তুলনায় অনেক বেশী। সম্প্রতি বিপন্ন প্রজাতির এ মাছ নিয়ে গবেষণায় কৃত্রিম প্রজনন, পোনা লালন-পালন এবং চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

বিপন্ন প্রজাতির এই পাবদা মাছ চাষে চাষী ও উদ্যোক্তাদের মাছে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

কৃত্রিম প্রজনন: পরিপক্কতাঃ পাবদা মাছ মাছ মোটামুটিভাবে এক বছর বা তার চেয়ে কিছুটা বেশী বয়সে পরিপক্কতা লাভ করে থাকে। তবে দুই বছর বয়সের পরিপক্ক মাছ কৃত্রিমভাবে প্রজননের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। চাষাধীন মাছ সুষ্ঠু খাদ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্রুড হিসাবে গড়ে তুললে ভালো ফলাফল পাওযা যায়।

ডিমের সংখ্যাঃ দেশীয় মিঠাপানির অন্যান্য মাছের তুলনায় পাবদা মাছের ডিমের সংখ্যা তুলনামূলক কম। একটি পরিপক্ক ১২.৪-১৭.২ সেমি. আকারের পাবদা মাছ হতে ১,৫০০-৭,০০০ ডিম পাওয়া যায়।

এ মাছের ডিমের আকার তুলনামূলক বড় এবং রং হালকা গোলাপী হয়ে থাকে। পরিপক্ক ডিম ভারী ও হালকা আঠালো হয়ে থাকে।

প্রজনন কালঃ এ মাছটির প্রজনন এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়ে জুলাই মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে জুন মাস এ মাছটির প্রজননের জন্য অত্যানুকূল সময়।

ব্রুড মাছ সংগ্রহ পরিচর্যা: প্রাকৃতিক জলাশয় যেমন বিল, হাওড় অথবা ভাল কয়েকটি হ্যাচারী থেকে সুস্থ-সবল ও রোগমুক্ত পাবদা মাছ সংগ্রহ করতে হবে। পরিপক্ক ব্রুড মাছ তৈরী করতে হলে শতাংশে ৫০-৮০ গ্রাম ওজনের ১০০-১২০ টি মাছ মজুদ করা যায়।

সম্পুরক খাদ্য হিসাবে ৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন মজুদকৃত মাছের দৈহিক ওজনের ৭-৮% সরবরাহ করতে হবে।

ব্রুড মাছের পুকুরে প্রতি সপ্তাহে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে অথবা প্রতি ১৫ দিন অন্তর অন্তর শতাংশ প্রতি ২০০-৩০০ গ্রাম হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। এ পদ্ধতিতে ৫-৬ মাস পালনের পর মাছ প্রজননক্ষম হয়ে থাকে।

প্রজননক্ষম মাছ সনাক্তকরণ: পরিপক্ক পুরুষ পাবদা মাছের পেক্টোরাল স্পাইনের ভিতরের দিকে খাঁজকাটা থাকে, অপরপক্ষে স্ত্রী মাছের পেক্টোরাল স্পাইনের ভিতরের দিকে খাঁজকাটা থাকে না।

তাছাড়া প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী মাছের পেট ডিমে ভর্তি থাকে বিধায় ফোলা দেখা যায় আর পুরুষ মাছের পেট চেপ্টা থাকে। একই বয়সের পুরুষ মাছ সাধারণত স্ত্রী মাছের তুলনায় আকারে ছোট হয়। পাবদা মাছের প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনা-পর্ব ১ প্রকাশের দুইদিনের মধ্যে দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ করা হবে।

আরও পড়ুন: গুতুম মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি পর্ব-১

গুতুম মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি পর্ব-২