মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পেন পদ্ধতিতে মাছ চাষ। কথাটি নতুন শোনালেও দেশে এখন এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে অনেকেই সফল হচ্ছেন। খুব সহজে উন্মুক্ত জলাশয়, খাল, মরা নদীসহ এরকম বিভিন্ন জায়গায় এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

পাঠক আজ পেন পদ্ধতিতে মাছ চাষের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানবো প্রথম পর্বে।

কোন উন্মুক্ত বা আবদ্ধ জলাশয়ে এক বা একাধিক দিক বাঁশের বানা, জাল বা অন্য কোন উপকরণ দিয়ে গিরে উক্ত জলাশয়ে মাছ মজুদ করে চাষ করাকে পেনে মাছ চাষ বলে।

দেশে মৎস্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে না এমন বৃহৎ আকৃতির জলাশয়, সেচ খাল কিংম্বা রাস্তার পার্শ্বস্থ খাল ইত্যাদিতে পেন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।

পেন পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরণের খাল, মরা নদী, হাওর, বাঁওড় বন্যা প্লাবিত জলাভূমিতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে মাছের উৎপাদন বাড়ানোসহ বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।

পেনে মাছ চাষের বৈশিষ্ট্য হলো পেনের বেড়া বা জাল জলাশয়ের মাটিতে প্রোথিত এবং পেনের পানির সাথে বাহিরের পারনর সংযোগ বা প্রবাহ বিদ্যমান থাকে।

স্থান নির্বাচন: পেনে লাভজনকভাবে মাছ চাষের জন্য স্থান নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেসব বৃহৎ জলাশয় সাধারণভাবে চাষের আওতায় আনা সম্ভব নয় সেসব জলাশয় পেনে মাছ চাষের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে।

তবে যেসমস্ত জলাশয়ের তলদেশ অত্যন্ত অসমান, বালি বা পাথর দ্বারা আবৃত প্রবল স্রোত বিদ্যমান, পানি দূসণসহ ঝড়ো হাওযায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে ও নৌযান চলাচল করে সে সকল স্থান বাদ দিয়ে উন্মুক্ত জলাশয়ের যে কোন স্থানে পেন তৈরি করা যেতে পারে।

প্রয়োজনবোধে অল্প সময়ে পেন এক স্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তর ও তৈরি করা যায়। বৎসরে অন্তত ৬ থেকে ৮ মাস পানি থাকে এমন মৌসুমী জলাশয় যেমন সেচ প্রকল্পের খাল, সংযোগ খাল, মরা নদ নদী এবং নদ নদীর খাড়ী অঞ্চল পেনে মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লোনা পানিতে বৃহৎ ঘেরের জমির মালিকানা অনুযায়ী পেন তৈরি করে নিবিড়ভাবে চিংড়ী চাষ করা সম্ভব। কাপ্তাই হ্রদ, এমনকি দেশের সমুদ্র উপকূলের অগভীর অঞ্চলেও পেন তৈরি করে মাছ চাষ করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

পেন নির্মাণ পদ্ধতি: বাঁশ, গাছের ডাল, নানা উপকরণ দিয়ে তৈরি বেড়া কিংবা জাল দিয়ে পেন তৈরি করা যায়। সাধারণত জলাশয়ের প্রস্থ কম হলে খালের এক পাশ থেকে আরেক পাশ পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে খুঁটি পুঁতে বেড়া দিয়ে পেন তৈরি করা যায়।

জাল দিয়ে রো দেয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জালের ফাঁস ১০ মি.মি এর চেয়ে বেশি না হয়। পেন তৈরির সময় টায়ার কর্ড জাল বা নটলেস পলিথিন জালও ব্যবহার করা প্রয়োজন।

জলাশয়ের ধরণের ওপর পেনের আকার নির্ভর করে। জলাশয়ের মালিকানা, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে ১.০ হতে ১০.০ হেক্টর আয়তনের যে কোন আকৃতির জলাশয়ে পেন নির্মাণ করা যেতে পারে। পেনের আয়তন খুব বেশি বড় হলে কখনও কখনও ব্যবস্থাপনার অসুবিধা দেখা দেয়।

আবার আয়তনে অত্যন্ত ছোট হলে তুলনামুলকভাবে বড় পেনের চেয়ে নির্মাণ ব্যয় বেশি পরে। সাধারণ ১ হতে ৫ হেক্টর আয়তনের পেন মাছ চাষ ও ব্যবস্থাপনার দিক থেকে সবচেয়ে ভাল।

যে এলাকার পানি প্রবাহ বেশি সেসব এলাকার বাঁশ দ্বারা উঁচু বানা তৈরি করে তলদেশের মাটির মধ্যে বেশি করে বানা পুঁতে দিতে হবে। পানির চাপে তলদেশের বালি বা নরম মাটি যেন সরে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

মহাল, বন বাঁশের বেড়া বা বানা ও বরাক বাঁশের খুটি সাধারণত ১ থেকে ২ বৎসর ব্যবহার করা যায়। তবে কাঠের খুঁটি ২ থেকে ৩ বৎসর টিকে। গীটবিহীন জাল ৪ থেকে ৫ বছর ব্যবহার করা যায় আবার টায়ার্ড কর্ড জালের আয়ুস্কাল ২ থেকে ৩ বছর।

বানা তৈরির জন্য ব্যবহৃত নারিকেল কয়ের ও সিনঠেটিক রশি ১ থেকে ২ বছর টিকে থাকে। এছাড়া বেড়া বাঁধার জন্য ব্যবহৃত জিআই তারের আয়ুস্কাল ১ থেকে ২ বছর। সূত্র: মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।

আগামী পর্বে পড়ুন মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা, বিভিন পরামর্শ নিয়ে প্রতিবেদন। আমাদের https://www.facebook.com/AgriCare24com-320632075085761/ ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখলে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি চলে যাবে আপনার ফেসুবক ওয়ালে।