এগ্রিকেয়ার প্রতিবেদক: সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে অর্জিত বঙ্গোপসাগরে ১৭৬ প্রজাতির মৎস্য, ১৩ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৪টি অন্যান্য প্রজাতির ক্রাস্টাসিয়ান ও মোলাস্ক চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে Blue Growth Economy নামে অভিহিত সমুদ্র-অর্থনীতিতে বাংলাদেশ Pilot Country হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আজ (৮ জানুয়ারি) রোববার বাংলাদেশ সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া নারায়ন চন্দ্র চন্দ সাংবাদিক এসব তথ্য জানান। মন্ত্রীর নতুন দায়িত্ব পাওয়ায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

বঙ্গোপসাগরের মৎস্যসম্পদের স্থায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা (Plan of Action) প্রণয়ন করা হয়েছে, বলে জানান তিনি।

সমুদ্রবিজয়ের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার জলসীমায় নতুন-নতুন মৎস্য-আহরণক্ষেত্র চিহ্নিত করায় তলদেশীয় ও ভাসমান মৎস্য-আহরণের এক নতুনদিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, মৎস্য গবেষণা ও জরিপ জাহাজ “আরভি মীন সন্ধানী” বঙ্গোপসাগরে মৎস্যসম্পদের জরিপ ও গবেষণাকার্যক্রম শুরু করেছে। ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ হতে আরভি মীন সন্ধানীদ্বারা নিয়মিত ডিমার্সাল শ্রীম্প সার্ভে ক্রুজ পরিচালনা করা হচ্ছে।  পরিচালিত ৪টি ক্রুজের মাধ্যমে সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে অর্জিত বঙ্গোপসাগরে ১৭৬ প্রজাতির মৎস্য, ১৩ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৪টি অন্যান্য প্রজাতির ক্রাস্টাসিয়ান ও মোলাস্ক চিহ্নিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে স্বাদুপানির মাছ ও ছাগল-উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছি। প্রাণিসম্পদখাতেও অর্থাৎ ডিম ও দুধ-উৎপাদনেও আমরা বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছি।

আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রায় ৬০ শতাংশ আমিষের যোগান দেয় মাছ। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৭ এর তথ্যমতে এদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি’র ৩.৬১ শতাংশ এবং মোট কৃষিজ আয়ের প্রায় এক চতুর্থাংশ মৎস্য খাত হতেই আসে।

নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১১ শতাংশের অধিক বা ১ কোটি ৮৫ লক্ষ লোক এ সেক্টরের বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে।

দেশের রপ্তানি আয়েও এখাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিগত ২০১৫-১৬ বছরে ইলিশের উৎপাদন হয়েছে ৩.৯৫ লক্ষ মে. টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ উৎপাদন ১ লক্ষ মে. টন বৃদ্ধি পেয়ে ৫.০০ লক্ষ মে. টনে উন্নীত হয়েছে। অথচ বিগত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২.৯৮ লক্ষ মে.টন।

অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার ফলে বিলুপ্তপ্রায় এবং বিপন্ন ও দূর্লভ প্রজাতির মাছ, যথা- একঠোঁট, টেরিপুঁটি, মেনি, রাণী, গোড়া গুতুম, চিতল, ফলি, বামোস, কালিবাউস, আইড়, টেংরা,সরপুঁটি, মধু পাবদা, রিটা, কাজলী, চাকা, গজার, বাইম, ইত্যাদির তাৎপর্যপূর্ণ পুনরাবির্ভাব ও প্রাপ্যতাবৃদ্ধি পেয়েছে। অভয়াশ্রমে দেশী কৈ, শিং, মাগুর, পাবদা, ইত্যাদি মাছের পোনা ছাড়ার ফলে এসব মাছের প্রাচুর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে।

আগে প্রকৃত জেলেদের কোন ডাটাবেইজ বা তথ্যাদি ছিল না। জুন ২০১৭ পর্যন্ত ১৬ লক্ষ ২০ হাজার মৎস্যজীবী-জেলেদের নিবন্ধন ও ডাটাবেইজ প্রস্ত্তত এবং ১৪ লক্ষ ২০ হাজার জেলের পরিচয়পত্র প্রস্ত্তত ও  বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে (ঝড়, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস) এবং জলদস্যুর আক্রমন, বাঘের থাবা, কুমির ও সাপের কামড়ের কারণে মৃত্যুবরণকারী জেলেপরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ৩টি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মৎস্য মাননিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে। পরীক্ষণ পদ্ধতির সক্ষমতার মানবিচারে ৩টি মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরি বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড কর্তৃক ISO ১৭০২৫: ২০০৫ এর মান অনুযায়ী অ্যাক্রিডিটেশন অর্জন করেছে।

পরীক্ষাগারসমূহ বিভিন্ন টেষ্ট প্যারামিটারে আন্তর্জাতিক প্রফিসিয়েন্সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সফলতার সাথে পরীক্ষণ কার্যসম্পন্ন করে চলেছে। মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১১ সালে EU FVO Audit Mission- এর সুপারিশে মৎস্যপণ্য রপ্তানিতে আরোপিত ২০% বাধ্যতামূলক পরীক্ষা করার শর্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বিগত ২০০৯ সনে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহে রপ্তানিকৃত ৫০টি কনসাইনমেন্ট বিভিন্ন দূষণের কারণে র‌্যাপিড-এ্যালার্টভুক্ত ও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল; ২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে র‌্যাপিড এ্যালার্টপ্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

বিগত নয়বছরে গিফট তেলাপিয়ার চারটি জেনারেশন, কৈ মাছের ৩টি ও পাঙ্গাস মাছের ০১টি জেনারেশন তৈরী করা হয়েছে। বিগত কয়েকবছর যাবৎ অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ ও ঔষধি গুণসম্পন্ন কুচিয়ামাছ রপ্তানি করে দেশে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা অর্জিত হচ্ছে। বিগত ২০১৪ সালে এখাতে প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে।