নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার জিহাদ আলী। বিদেশ ছিলেন কয়েক বছর। দেশে ফিরে শুরু করেন গাড়ল পালন। শুধু জিহাদ একা নন, বর্তমানে স্বল্প সময়ে বেশি আয়ের গাড়ল পালনে ঝুঁকছেন বিদেশ ফেরত ও স্থানীয় উদ্যোক্তারা।

জিহাদ বলেন, যখন আমি বিদেশ ছিলাম তখন ইউটিউবে দেখতাম ভেড়া পালন কিভাবে করতে হয়। তারপর আমি দেশে এসে ইউটিউব দেখে ভেড়া পালন শুরু করি। এখন আমি ভেড়া পালন করে অনেক কিছু করতে পেরেছি। আমার নিজের আম বাগানে গড়ে তুলেছি গাড়ল খামার। কিন্তু গাড়লের একটা ভালো দিক হচ্ছে, এরা মাটিতে যা পায় তাই খায়। উপরে মুখ করে না। তাই আম বাগানেই গাড়ল খামার বানিয়েছি।

পড়তে পারেন: ভেড়ার খামারে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের উপায়

উদ্যোক্তাদের দাবি, গাড়ল পালনে খরচ কম আর এ লাভ বেশি। এরই মধ্যে গাড়ল পালনে অনেকেই সফলতা পেয়েছেন। কেউ কেউ আবার এ গাড়ল পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নও দেখছেন। গাড়ল খামারিরা বলছেন, প্রাকৃতিক খাবারেই গাড়ল পালন করে স্বল্প খরচে অধিক লাভ হয়।

গাড়ল খামারি শীষ মোহাম্মদ বলেন, আমার সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকত। তাই গত ৫ বছর আগে গাড়ল পালন শুরু করি। প্রথমে ২৮টি মা গাড়ল ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় কিনে বাড়িতে পালন করতে থাকি। এখন আমার খামারে ১০০টির বেশি গাড়ল রয়েছে। অনেকগুলো বিক্রিও করেছি। এ গাড়ল বিক্রির জন্য হাটে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে খামারিরা এসে আমার কাছে থেকে গাড়ল কিনে নিয়ে যায়। এখন আমার গাড়ল পালন করে বছরে ৩ লাখ টাকা আয় হয়।

পড়তে পারেন: গরু মোটাতাজাকরণ ও ছাগল, ভেড়া, গাভী পালনে মিলবে কৃষি ঋণ

তিনি আরও বলেন, গাড়লের মাংস অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণেও বেশ ভালো। দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়লের মাংসের ব্যাপক চাহিদা। আমাদের স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি মাংস ৭০০-৮০০ কেজি ধরে বিক্রি হয়। আর মাঠে ছেড়ে দিয়ে প্রাকৃতিক খাবার ঘাস ও লতাপাতা থেকেই গাড়ল পালন করা সম্ভব। তবে সারাদিন মাঠের লতাপাতা খাওয়ানোর পরে সন্ধ্যায় কিছু শুকনো খাবার আমরা দিয়ে থাকি। গাড়ল প্রতি বছর দুটি করে বাচ্চা দেয়। গাড়ল পালন করেই আমার সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরেছে।

এবিষয়ে জানতে গোমস্তাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাওসার আলী এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, গাড়ল পালন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে উপজেলায় মোট গাড়ল খামার আছে ৪৮টি। এর মধ্যে নিবন্ধিত খামারের সংখ্যা ২৬টি।

পড়তে পারেন: গোপনে নয়, প্রকাশ্যে ভেড়ার মাংস বিক্রয়ের প্রতিশ্রুতি

তিনি আরো বলেন, গাড়ল ভেড়ার একটি উন্নত জাত। অন্য গৃহপালিত প্রাণির চেয়ে গাড়লের রোগবালাই কম হয়। গাড়লের মাংস দ্রুত বৃদ্ধি হয়। লাভজনক হওয়ায় গাড়ল পালনে অনেকে এগিয়ে আসছেন। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে গাড়ল প্রজাতির ভেড়া পালনে চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শসহ দেওয়া হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার ডেস্ক: প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ পশু পালনের সাথে জড়িত। এমনই গৃহপালিত প্রাণি ভেড়া। মাংস, চামড়া, পশম এবং দুধ উৎপাদনের জন্য বিশ্বজুড়ে ভেড়ার জনপ্রিয় কয়েকটি জাত রয়েছে। আজ বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত ১০ টি ভেড়ার জাত সম্পর্কে জানুন।

বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত ১০ টি ভেড়ার জাত সম্পর্কে জানুন

আমাদের আজকের আলোচনায় মাংস এবং পশমের জন্য বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত ১০ টি ভেড়ার জাতে সম্পর্কে পরিচয় দেয়া যাকঃ

১। মেরিনো

ফাইবারের প্রিমিয়াম ও উন্নত মানের কারণে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ভেড়ার জাত গুলোর একটি। মেরিনো জাতের ভেড়ার পশম পোশাক শিল্প বিশেষত বাচ্চাদের জন্য উন্নত মানের পোশাক এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

২। লিসেস্টার লং-উল শিপ

মানসম্পন্ন মাংস এবং চামড়া উৎপাদন, এই দুটি কারণে এটিকে উন্নত জাতের ভেড়ার তালিকায় রাখা হয়। বিভিন্ন দেশের তাঁতিদের কাছেও এর লোম বিরল এবং পছন্দনীয়।

পড়তে পারেন: ছাগলের বাচ্চার কৃমি দমনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

৩। লিংকন

এই জাতটি তার উন্নত ফাইবারের জন্য সুপরিচিত এবং সারা বিশ্বজুড়ে ফেব্রিক ডিজাইনার এবং তাঁতিদের দ্বারা প্রশংসীত। এর ওজন 260 থেকে 350 পাউন্ডের মধ্যে হয়ে থাকে।

৪। ডরসেট

এই ভেড়ার জাতটি অধিক পরিমানে ভাল মানের দুধ এবং সুস্বাদু মাংস উৎপাদন করে। এবং এর এই উন্নত মানের মাংস ও দুধের জন্যই ডরসেট জাতটি বিশ্ব বাজারে বিশেষভাবে প্রশংসনীয়।

পড়তে পারেন: ভেড়ার পশম সম্ভাবনাময় সম্পদ, জিডিপিতে যোগ হতে পারে শত কোটি টাকা

৫। টার্কানা

পাহাড়ের রানী হিসাবে পরিচিত, টার্কানা রোমানিয়া, ইউক্রেন, মোল্দাভিয়া, গ্রীস, আলবেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, পোল্যান্ড এবং বালকান দেশগুলির অন্যতম প্রশংসিত জাত। তুর্কানার পশম বিশেষ ভাবে প্রাচ্যীয় গালিচা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি এর মাংসের জন্যও বিখ্যাত এবং অবশ্যই সেই সাথে তাদের দুধ থেকে উৎপন্ন উন্নত মানের দুগ্ধজাত পণ্যগুলির জন্য যেমন – ফেটা, দই এবং বিভিন্ন ধরণের পনির। এছাড়াও এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় উল্লেখযোগ্য।

৬। ডার্পার

ডার্পার জাতের ভেড়া পালনের জন্য বিশেষ কোন সুবিধার প্রয়োজন নেই – এটি শুষ্ক অঞ্চলেও পালন করা যায়। এরা মাঝারি থেকে বড় আকারের হয়। পাশ্চাত্য, এই ধরণের জাতটি বিশেষ জনপ্রিয় কারণ এরা সহজেই মৌসুম পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারার দক্ষতার জন্য। এর পশম উন্নত মানের পোশাক তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

পড়তে পারেন: বিদেশে মাংস রফতানির সুযোগ এসেছে

৭। সিগাই

এই হাতের ভেড়া মূলত পশম উৎপাদন এবং পাশাপাশি দুধ এবং মাংসের জন্য পালিত হয়। রোমানিয়ান রাখালরা জিনগত পারফরম্যান্সকে উন্নত করার জন্য এর উন্নয়ন ঘটিয়েছে।

৮। হ্যাম্পশায়ার

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অঞ্চলের রাখালরা একাধিক প্রজাতির জাত থেকে সেরা গুণাবলী অর্জনের জন্য ভেড়ার বিভিন্ন ক্রসব্রিড তৈরি করেছিলো। এই ক্রস ব্রিড গুলির মধ্যে একটি অন্যতম জাত হ্যাম্পশায়ার । এই জাতের ভেড়া মাঝারি আকারের এবং শিংহীন।

৯। সাফলক ভেড়া

এই জাতের ভেড়া এদের উন্নত মানের গুণাবলির জন্য বিখ্যাত। সাফলক ভেড়া এদের স্ট্যামিনা এবং উন্নত মাংস উৎপাদনের জন্য বিশেষ ভাবে পরিচিত।

১০। ইস্ট ফ্রিজিয়ান

ফ্রিজিয়ান জাতের ভেড়ার আরেকটি বিভাগ হলো ইস্ট ফ্রিজিয়ান, অধিক পরিমাণ দুধ উৎপাদন এর জন্য এরা পরিচিত – এরা প্রজননের পর ২২০ থেকে ২৪০ দিনে প্রায় ৯৯০ থেকে ১১০০ দুধ প্রদান করে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ