মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: “আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা, কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে” হ্যাঁ, হাজারো ফুলের সমারোহ জানিয়ে দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা। দরজায় আনুষ্ঠানিক বসন্তবরণ কড়া নাড়লেও রাজশাহীর ফুল ব্যবসায়ীদের মুখে ঘিরে আছে বিষন্নতা।

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে শিক্ষা নগরীর প্রতিষ্ঠানগুলো। শহরে নেই শিক্ষার্থীরাও। থাকবে না বসন্তবরণের আনুষ্ঠানিক তেমন আয়োজন। তাই, বসন্ত আসলেও বসন্তের হাসি নেই ফুল ব্যবসায়ীদের মুখে।

ফুল বিক্রির ভরা মৌসুমেও আশানুরুপ ক্রেতা পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। টানা প্রায় ১১ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ফুল বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে বলে জানায় দোকানীরা। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় অল্প দিনের মধ্যেই লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশাবাদী ফুল সংশ্লিষ্টরা।


রাজশাহী নগরীর অন্যতম ব্যস্ত জায়গা সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট। জিরো পয়েন্ট থেকে আরডি মার্কেট পর্যন্ত কোল ঘেষে গড়ে উঠেছে হরেক রকম ফুলের দোকান। সকাল থেকেই যেখানে লেগে থাকতো উপচে পড়া ভিড়, সেখানে এখন ক্রেতাশূন্য না হলেও বিক্রি কমেছে কয়েক গুণ। সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের বাহিরে তেমন অর্ডারও থাকছে না দোকানগুলোতে। সাধারন ক্রেতাদের উপস্থিতিও নেই বললেই চলে।


স্বভাবতই বাংলাদেশে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফুলের চাহিদা থাকে প্রচুর। বিজয় দিবস, থার্টিফাস্ট নাইট, বসন্ত বরণ, ভ্যালেন্টাইন ডে, শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে ফুলের ব্যবহার বাড়ছে ক্রমেই। আর এসব ফুলের একটা বড় অংশই চলে যায় শিক্ষার্থীদের হাতে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্টান বন্ধ থাকায় এবারের বসন্ত বরণ ও ভ্যালেন্টাইন ডে’তে ফুল বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় দোকানীরা।


বর্তমান পরিস্থিতিতে বেচা-বিক্রি নিয়ে কথা হয় ফুল বিক্রেতা মাইনুল ইসলামের সাথে। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বিক্রি করে আসা এ দোকানী জানান, এর আগে এত খারাপ অবস্থা দেখতে হয় নি কোনদিন। করানার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্টান বন্ধ থাকায় সব ছাত্র-ছাত্রী এখনও রাজশাহী ফিরে নি। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্টান বন্ধ থাকায় অনুষ্ঠানও কমে গেছে।

বসন্ত বরণের বিষয়ে তিনি বলেন, বসন্ত বরণ বা ভালোবাসা দিবস যে দিবসের কথায় বলেন; সব অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের নিয়ে। তারা না থাকলে অনুষ্ঠান হয় কিভাবে? আর অন্য বছরের চেয়ে এবারের শীতে বিয়ে অনুষ্ঠানও কমে গেছে। সব মিলিয়ে খুবই খারাপ অবস্থা যাচ্ছে।

রাজশাহীর বাজারে বিক্রি হওয়া ফুলগুলোর অধিকাংশ আসে যশোর থেকেই। বাংলাদেশের ফুলের বাজারে যশোরের গদখালীর ফুলের রয়েছে একক রাজত্ব। এছাড়া নওগাঁ ও রাজশাহীর বেশ কিছু উপজেলা থেকেও আসে বেশ কিছু ফুল।

নগরীর দোকানগুলোতে সাধারণত গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকা, জার্বেরা, গ্লাডিওলাস, জিপসি ফুল প্রভৃতি প্রজাতির ফুল বিক্রি হয়। জাতভেদে একেকটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে। এছাড়াও রজনীগন্ধা ১৫ টাকা, গাঁদা প্রতি ১০০ ফুল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, জার্বেরা ২০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ১০ টাকা, জিপসি ফুল ২০ টাকা, গ্লাডিওলাস ৩০ টাকা দরে খুচরা পাওয়া যায়। আর তোড়া ও বুকেটগুলোর দাম আকার ও ফুলের জাতভেদে ২০০ থেকে শুরু হয়ে রয়েছে ভিন্নতা।
রাজশাহীর ফুলের বাজার প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার। আর ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা দাঁড়ায় দেড় থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে এবারের ফেব্রুয়ারিতে ১ লাখ টাকারও বিক্রি হবে না বলে জানায় একাধিক দোকানী।

এ বিষয়ে ফুল বিক্রেতা রাজিব হাসান বলেন, আগে ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হতো। আর এবার ৫ থেকে ৭ হাজারের উপরে যাচ্ছে না। সরকারি অফিস ছাড়া তেমন কোনো অর্ডারও পাওয়া যাচ্ছে না।

বাজারে ফুলের উপস্থিতি পর্যাপ্ত থাকলেও নেই ক্রেতাদের চাহিদা। তবে আসন্ন একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফুলের চাহিদা বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ