কৃষিবিদ মিঠু চন্দ্র অধিকারী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: জামরুল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণসম্পন্ন ও ফাইবারে সমৃদ্ধ। সুস্বাদু এই ফল ভালো হজমে সাহায্য করে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, ইনফ্লেম্যাশন, গলার সংক্রমণ, স্কার্ভি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিসসহ একাধিক অসুখ সারাতে কাজ করে জামরুল। এই অতি গুণাগুণ সম্পন্ন ফল চাষ করতে পারেন টবে। আসুন জেনে নিই বাড়ির ছাদে জামরুল চাষ পদ্ধতি।

জলবায়ু
উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু জামরুল চাষের জন্য অধিক উপযোগী। অতি ঠান্ডা বা গরম উভয়ই জামরুল গাছের জন্য ক্ষতি কর।

জাত: প্রধানত তিন ধরনের জামরুল ফল দেখা যায়। ধবধবে সাদা, সবুজাভ সাদা ও গোলাপীলাল বা মেরুন বর্ণের।

বংশ বিস্তার:
গুটি কলম ও শাখা কলমের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা যায়। সাধারণত ফল সংগ্রহের পর গাছে নতুন পাতা গজাতে শুরু করলে কলম করা উচিত। শাখা কলমের জন্য এক বছর বয়সী গাছ নির্বাচন করে মে-জুন মাসে কমল করতে হবে। শাখা কলমের জন্য বর্ষা মৌসুমে ৪ থেকে ৫টি পর্ব সহকারে ডাল কেটে বেডে বা পলিব্যাগে রাখাতে হবে। রোপণকৃত ডাল থেকে নতুন কুঁড়ি বের হলে তা পরবর্তী বছরে মূল জমিতে বা তৈরীকৃত মাদায় রোপণ করতে হবে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

সোনা ফলছে আম বাগানের পতিত জমিতে

ছাদ বাগানে টবে চাষ করুন ড্রাগন ফল

টবে ড্রাগন ফল চাষ করবেন যেভাবে

টবে বোম্বাই মরিচ চাষ পদ্ধতি

জমি নির্বাচন ও তৈরী:
সুনিকাশিত দোঁ-আশ মাটি জামরুল চাষের জন্য বেশি উপযোগী। তবে সব ধরনের মাটিতেই জামরুল চাষ করা যায়। বৃষ্টি পানি জমে না এমন ধরনের উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। চাষ দিয়ে অথবা কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে সমতল ও আগাছামুক্ত করতে হবে।

রোপণ পদ্ধতি:
সমতল ভূমিতে বর্গাকারে বা ষড়ভূজী এবং পাহাড়ী এলাকায় কণ্টুর পদ্ধতিতে চারা রোপণ করা হয়। মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য শ্রাবণ মাস হলো জামরুলের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে জল সেচের সুবিধা থাকলে বৈশাখ থেকে মধ্য কার্তিক মাস পর্যন্ত জামরুলের চারা রোপণ করা যায়।

গর্ত তৈরী:
কলম রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন পূর্বে ৬ মিটার দূরত্বে ১ মিটার গভীর গর্ত করতে হবে। গর্তের ওপরের মাটির সাথে ১৫ থেকে ২০ কেজি জৈব সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি ও ১০০ গ্রাম জিপসাম সার ভালভাবে মিশিয়ে গর্তটি ভরাট করে তাতে পানি দিতে হবে।

গর্তে চারা/ কলম রোপণ ও পরিচর্যা:
গর্তে সার প্রয়োগের ১০ থেকে ১৫ দিন পর নির্বাচিত কলমটি গর্তের মাঝখানে খাড়াভাবে রোপণ করে প্রয়োজন মতো পানি, খুঁটি ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

গাছে সার প্রয়োগ:
বৃদ্ধির সাথে সাথে গাছে প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে। গোবর ইউরিয়া টিএসপি, এমওপি উপযুক্ত পরিমাণে ব্যবহার করা হয়।
প্রতিবার সার দেয়ার পর প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে।

আগাছা দমন:
গাছের গোড়া সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। সাধারণত বর্ষার শুরুতে ও বর্ষার পর সম্পূর্ণ বাগানে হালকা চাষ দিয়ে আগাছা পরিস্কার করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি

টবে-ই উৎপাদন হবে পছন্দের আম, জেনে নিন পদ্ধতি

টবে বোম্বাই মরিচ চাষ পদ্ধতি

টবে বারোমাসি আম চাষ পদ্ধতি

মাটিতে চাষ করলে:

চারা তৈরি
সাধারণত গুটি কলমের মাধ্যমে জামরুলের বংশ বিস্তার করা হয়।

চারা রোপণ
মধ্য জৈষ্ঠ্য থেকে মধ্য আসাঢ় (জুন) মাসে চারিদিকে ১ মিটার করে গর্ত করে ৩ সপ্তাহ উন্মুক্ত রাখতে হয়। এর পর সার মিশিয়ে নির্বাচিত চারা/ কলমটি গর্তের মাঝে সোজা করে রোপণ করা হয়। ৫-৭ মিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করা দরকার।

সার ব্যবস্থাপনা
প্রতি গর্তে পচা গোবর ১৫ কেজি, টিএসপি সার ৫০০ গ্রাম এবং এমওপি সার ৫০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।
১-৩ বছর বয়সী গাছের জন্য পচা গোবর ২০ কেজি, টিএসপি সার ২৫০ গ্রাম এবং এমওপি সার ২৫০ গ্রাম এবং ইউরিয়া সার ২৫০ গ্রাম দুইভাগে প্রয়োগ করতে হয়। এক ভাগ মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য আষাঢ় ও অন্যভাগ মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক মাসে প্রয়োগ করতে হয়। গাছের চারিদিকে বৃত্তাকার নালা তৈরি করে সার প্রয়োগ করা দরকার। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে সারের পরিমানও বাড়াতে হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ