ডাঃমোঃ শাহ্-আজম খান, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ব্রয়লার মুরগি ধনীদের খাবার না গরীবের? রেস্টুরেন্টে ব্রয়লারের বিভিন্ন রেসিপি খেয়ে যারা গর্ববোধ করেন ঠিক তারাই আবার বাসা-বাড়িতে ও সামাজিক আড্ডায় ব্রয়লারের মাংস খাওয়া নিয়ে নাক সিটকান! বিষয়টি খুবই আজব মনে হলেও ইহাই বাংলাদেশের ভেক্তা পর্যায়ের বাস্তবিক চিত্র।

ব্রয়লার মুরগির মাংসকে সামাজিকভাবে হেয় করার মানসিকতা প্রায় জায়গাতেই এখনও দৃশ্যমান। তাঁদের ধারণা ব্রয়লার মাংসের মূল্য অন্যান্য মাংসের তুলনায় কম তাই প্রোটিনের দিক থেকেও অনেক কম। তাছাড়া ব্রয়লার মুরগি ধনীদের খাবার না গরীবের? এমন প্রশ্ন একটি অজ্ঞ ও অর্ধশিক্ষিত মহলের মুখে শোনা যায়।

তাদের ব্রয়লারের জাত, ব্রয়লার মাংসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে পুরোপুরি স্বচ্ছ ধারনা না থাকা; পাশাপাশি মিডিয়ার গুজবের কারনে ব্রয়লার মাংসের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। ব্রয়লার মাংস সুস্বাদু মাংস হওয়ার পরেও শুধুমাত্র ভ্রান্ত ধারণা থাকার কারনে বাংলাদেশে এই মাংসের মুল্যায়ন ভোক্তা শ্রেনীতে কম। সারা বিশ্বেই মুরগির মাংস বলতে ব্রয়লারকেই বুজে শুধু বাংলাদেশে এর ব্যতিক্রম চোখে পড়ে।

আরোও পড়ুন: লাইফ সাপোর্টে পোল্ট্রি ও ডেইরী শিল্প

ব্রয়লারের মাংস প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে অতুলনীয় একটি খাবার সারা বিশ্বের জন্য। ব্রয়লারকে গরীবের খাবার হিসেবে মনে করা হয়। ফলে বিয়ে বাড়িতে বা অথিতি আপ্যায়নে ব্রয়লারকে মেনু হিসেবে রাখা হয় না। অথচ ব্রয়লার মুরগির মাংস খাবারের মেনুতে রাখলে ক্ষতি প্রোটিনের পাশাপাশি আপ্যায়নও সম্ভব হতো।

আপনি কি জানেন? ব্রয়লার মাংস দিয়েই ৫০০টির বেশি রেসিপি তৈরি করা হয়! যাহা অন্য কোন মাংস থেকে করা সম্ভব নয়! যে রেসিপি গুলো বড় বড় করপোরেট প্রোগ্রাম থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়েও অনেক জনপ্রিয়। রেস্টুরেন্টে জনপ্রিয় কিছু ব্রয়লার রেসিপি-চিকেন গ্রিল, চিকেন বল, ক্রিপ্সি ফ্রাইড চিকেন, চিকেন কারি, চিকেন স্যুপ, চিকেন বিরিয়ানি ইত্যাদি।

রেস্টুরেন্টে ব্রয়লার মাংস দিয়ে তৈরি রেসিপি গুলো চড়া মূল্যেই বিক্রি হয়। সাধারণ প্রেক্ষাপটে ব্রয়লারকে গরীবের খাবার বলে বিবেচনা করা হলেও বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন কথাই বলে। বড় বড় রেস্টুরেন্ট গুলোতে গেলেই আপনি বুজতে পারবেন! ব্রয়লার মাংসের রেসিপিগুলোর দাম বিবেচনায় ইহা ধনীদের খাবার বলেই মনে হবে।

পরিশেষে, প্রোটিনের চাহিদা পূরণ ও মাংসের গুণাগুণ বিবেচনায় ব্রয়লার একটি আদর্শ মানের মাংসের উদাহরণ। আমদানিকৃত নিম্ম মানের গো-মাংস/মহিষের মাংসের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে ব্রয়লারের মাংস নিয়মিত খাবার তালিকায় রাখুন। এতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ও পোল্ট্রি খাতের সাথে যুক্ত হাজার হাজার পরিবার বাঁচতে পারবে। মিথ্যে গুজব এবং হেয় মনমানসিকতায় একটা বৃহৎ খাতের ধ্বংশ করতে নিজেকে সামিল করবেন না।

বাংলাদেশের গরীব জনগোষ্টির মাঝে শুধু ব্রয়লারের মাংস ব্যবহার হয় তা নয়। দেশের ধনী-গরীব সবশ্রেণীর মানুষের মাঝে ব্রয়লার মাংস জনপ্রিয়।প্রোটিনের বড় উৎস মাংস। তাই শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করুন, করোনাভাইরাস কে প্রতিরোধ করুন। গুজবে কান দিয়ে নিজের দেশের ও হাজার হাজার খামারিদের সর্বনাশ ডেকে আনবেন না।

ব্রয়লার মুরগি ধনীদের খাবার নাকি গরীবের? লেখাটি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে পাঠিয়েছেন ডাঃমোঃ শাহ্-আজম খান, ডিভিএম, এমএস ইন এনিমেল সায়েন্স, সিনিয়র কাস্টমার সার্ভিস অফিসার, নারিশ পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারী লিমিটেড, সিরাজগঞ্জ রিজিওন।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ