অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ চাল উত্পাদনকারী দেশগুলোর অন্যতম। দেশে বছরে সাড়ে ৩ কোটি টন চাল উৎপাদন হয়। উৎপাদিত চালের বেশিরভাগই স্থানীয় খাদ্য চাহিদা মেটাতে ব্যবহার হয়। বর্তমানে দেশের বাজারে চালের দাম কমাতে এবং মজুত বাড়াতে ভিয়েতনাম ও ভারত থেকে চাল আমদানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে,  ভিয়েতনাম ও ভারত দেশদুটি থেকে সব মিলিয়ে ৩ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানি করা হবে।

এ চাল কেনার ঘোষণা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো দেয়নি বাংলাদেশ সরকার। রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে কিছু চাল আসবে রেলপথে আর কিছু আসবে জলপথে। রেলপথে যে চাল আসবে তার প্রতি টনের দাম পড়বে ৪২৮ দশমিক ৫০ ডলার এবং সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা প্রতি টন চাল কেনা হবে ৪৪৩ দশমিক ৫০ ডলারে। চালের এ দামের সঙ্গে পরিবহন, বীমা ও খালাসের খরচ হিসাব করা হয়েছে।

পড়তে পারেন: দাম কমাতে আরও ৩২ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের প্রধান খাদ্যশস্যের দামের উর্ধ্বগতি সরকারের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় চালের দাম বৃদ্ধির কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সহায়তায় কম দামে চাল বিক্রির কার্যক্রম আরো সম্প্রসারিত করা হয়েছে।

সরকারি একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের বেসরকারি খাতের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ লাখ টন সেদ্ধ চাল কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া ভিয়েতনাম থেকে আরো দুই লাখ টন সেদ্ধ চাল ও ৩০ হাজার টন আতপ কেনা হচ্ছে। ভিয়েতনামের প্রতি টন সেদ্ধ চালের দাম ৫২১ ডলার এবং আতপ চালের দাম ৪৯৪ ডলার।

সরকারি সূত্রটি জানিয়েছে, এ সংক্রান্ত চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি চলছে। চুক্তি সই হলে তার দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এসব চাল বাংলাদেশে পৌঁছবে। কেবল ভারত ও ভিয়েতনামই নয়, চাল আমদানির বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গেও আলোচনা করছে বাংলাদেশ সরকার। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের ইস্যুটি সরিয়ে রেখেই চাল আমদানির আলোচনা চলছে।

পড়তে পারেন: বন্দরে আটকে থাকা চাল খালাশ শুরু

এর আগে রোববার জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে চালের আমদানি শুল্ক তুলে নেয়ার কথা জানায় সরকার। একই সঙ্গে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে চাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। চাল আমদানির সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সুগন্ধি চাল ছাড়া অন্য যে কোনো চাল অর্থাৎ সেদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির ক্ষেত্রে এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুবিধা বহাল থাকবে বলেও সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারিভাবে চাল আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনায় কিছু বিপত্তি দেখা দেয়। ব্যবসায়ীদের জন্য শুল্ক কমিয়ে দেয়ার পরও জুলাই পর্যন্ত কেবল ৩৬ হাজার টন চাল আমদানি করা গিয়েছে।

ক্রমবর্ধমান চালের দামের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ৫০ লাখ দরিদ্র মানুষের জন্য কম দামে চাল বিক্রি করতে শুরু করে সরকার। সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ কর্মসূচী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা এলে তার রেশ পড়ে চালের দামেও। এ পরিস্থিতিতে দরিদ্রদের মধ্যে কম দামে চাল বিক্রির মাধ্যমে দেশের বাজারে চালের দামের লাগাম টেনে ধরতে চায় সরকার।

পড়তে পারেন: কমেছে ভারতীয় চালের দাম, দেশের বাজারে বাড়তি

উল্লেখ্য, অনেকদিন ধরেই অস্থিতিশীল বাংলাদেশের চালের বাজার। ভরা বোরো মৌসুমেও চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। মোটা চালের কেজিপ্রতি দাম ৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। সরু চালের কেজি ৬৫ থেকে ৮০ টাকা। এ প্রেক্ষাপটে দাম স্থিতিশীল রাখতে শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

গত ২৩ জুন চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। সেসময় চালের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য করা হয়। এর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তবে রোববার জারি করা নতুন প্রজ্ঞপনে ওই আদেশ বাতিল করার কথা জানায় এনবিআর। কারণ এবার আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের পাশাপাশি নতুন সুবিধা হিসেবে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কও আরো কমানো হয়।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ