অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৫৮৭ টন সরিষা আমদানি করেছে। দেশের বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় এবারই প্রথম আমদানি শুরু করে দেশের সরিষা মিলগুলো।

গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত অর্থ্যাৎ দুই মাসে ৫৮৭ টন সরিষা আমদানি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভোজ্যতেল উৎপাদনে আমদানীকৃত সরিষা ব্যবহার করা হবে। বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও তেলের সংকট মোকাবেলায় এটি ভূমিকা রাখবে।

হিলি স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম নুরুল আলম খান বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে সম্প্রতি ভারত থেকে সরিষা আমদানি করছেন আমদানিকারকরা। তবে এ সরিষা আমদানিতে কোনো শুল্ক নেই।

পড়তে পারেন: বাকৃবিতে লবণাক্ত সহনশীল তিন সরিষার জাত উদ্ভাবন

হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্দর দিয়ে চলতি বছরের ১৪ মার্চ প্রথমবারের মতো ভারত থেকে সরিষা আমদানি শুরু হয়। ভারতের রাজস্থান থেকে এসব সরিষা আসছে। গাইবান্ধার মামা ভাগনা অয়েল মিল ও জামাই ভ্যারাইটি স্টোর এসব সরিষা আমদানি করছে। রাজস্থানের মারুতি উদ্যোগ নামের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব সরিষা সরবরাহ করছে। প্রতি টন সরিষা ১ হাজার ৫০ ডলার থেকে শুরু করে ১ হাজার ৮০ মার্কিন ডলার মূল্যে আমদানি করা হচ্ছে।

সরিষা আমদানিকারকের মনোনীত সিআ্য্যন্ডএফ এজেন্ট আহমেদ কবির বাবু বলেন, বন্দর দিয়ে প্রথমবারের মতো ভারত থেকে সরিষা আমদানি করছেন আমদানিকারকরা। দেশে সয়াবিন তেলের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে সরিষা তেলের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত সরিষা না থাকায় এবং দাম বেশি হওয়ায় আমদানি করতে হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত দেশের বাজারে চাহিদা থাকবে, ততদিন আমদানি অব্যাহত রাখা হবে।

এদিকে বাংলাদেশে আমদানি করা হয় এমন ১৩৫টি পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি করার ফলে দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শুল্ক বৃদ্ধির তালিকায় বিদেশি ফুল, বিদেশি ফল,বিদেশি আসবাবপত্র, সুগন্ধি, প্রসাধনী বা রূপসজ্জা পণ্যসহ অপরিশোধিত সরিষা তেল বা পেঁয়াজ রয়েছে। এসব পণ্যের ওপর বাড়তি ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে।

চিনি, পেঁয়াজ, গাড়ী, অপরিশোধিত সরিষার তেলসহ আরও কিছু পণ্যের ওপর আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক রয়েছে। আমদানি করা চিনির ওপর শুল্ক রয়েছে ৩০ শতাংশ।পাশাপাশি গাড়ি, গাড়ির টায়ার ইত্যাদির ওপর আগে থাকা সর্বোচ্চ বিশ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ শুল্ক দিতে হবে।

পড়তে পারেন: চীনে প্রায় নয় হাজার পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবেন দেশের উদ্যোক্তারা

সোমবার রাতে এই নির্দেশনা জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এর ফলে এসব পণ্য আমদানি আরও ব্যয়বহুল হবে এবং ক্রেতাদের এসব পণ্য ক্রয়ে আরো বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ আমদানিকারকদের এসব পণ্য আমদানি করতে বিদ্যমান কাস্টমস ট্যারিফ, মূসক, কর ছাড়াও অতিরিক্ত এই নিয়ন্ত্রণ শুল্ক দিতে হবে।

বাংলাদেশে ফল, খাদ্য দ্রব্য, যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে বেশিরভাগ পণ্য বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। নিয়ন্ত্রণ শুল্ক আরোপের ফলে আপেলসহ বিদেশি ফলের জন্য বেশি মূল্য দিতে হবে। বর্তমানে বিদেশি ফলের ওপর ৫৮ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক দিতে হয়। সেখান নিয়ন্ত্রণ শুল্ক দিতে হয় তিন শতাংশ পর্যন্ত।

নতুন নিয়মে এই শুল্ক তিন শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ দিতে হবে। প্রসাধনী, গাড়ির সরঞ্জাম, সুগন্ধির ওপর এখনো ১০৪ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয়। নিয়ন্ত্রণ শুল্কে এসব পণ্যের দাম আরও বাড়বে। কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সামলাতে তারা এই নিয়ন্ত্রণ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

পড়তে পারেন: জনস্বার্থে পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ

মূল্য বৃদ্ধির ফলে ক্রেতারা এসব পণ্য ব্যবহারে বা আমদানিতে নিরুৎসাহিত হবেন বলে কর্মকর্তাদের ধারণা। কিন্তু দেশেই ফুল, ফল উৎপাদন বা আসবাবপত্র তৈরি হওয়ায় তা বাজারের ওপর প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন তারা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মুখপাত্র সৈয়দ এ মোমেন গণমাধ্যমকে বলছেন, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, বিলাসবহুল পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা ও আমদানি হ্রাস করার উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোসহ পৃথিবীর সব দেশই বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি কমাচ্ছে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিচ্ছে।

এই লক্ষ্যে আমরা মনে করছি, বিদেশি ফল, ফুল, ফার্নিচার, কসমেটিক্স-এ জাতীয় ১৩৫টি পণ্যের ওপর আমদানি করতে বিদ্যমান যে শুল্ক আছে (শূন্য থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত), এর পরিবর্তে আমরা ২০ শতাংশ পর্যন্ত রেগুলেটরি ডিউটি (নিয়ন্ত্রণ শুল্ক) আরোপ করেছি।

পড়তে পারেন: বেসরকারিভাবে চাল আমদানিতে শুল্ক কমলো ৩৭.৫ শতাংশ

নিয়ন্ত্রণ শুল্ক দিতে হবে যেসব পণ্যে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
আপেল, আঙ্গুর, কলা, আম, কমলাসহ বিদেশি ফল- ২০%
ফুল- ২০%
অপরিশোধিত সরিষা তেল- ১০%
চিনি- ৩০%
পেঁয়াজ- ৫%
সুগন্ধি- ২০%
দাঁত সুরক্ষার সরঞ্জাম- ২০%
প্রসাধনী- ২০%
আঠা-১৫%
গাড়ি-৩০%
আসবাবপত্র- ২০%
নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফার্স্ট এইড বক্স- ১০%

বাংলাদেশের শুল্ক আইন ১৯৬৯ অনুযায়ী, সংসদের অনুমোদন ছাড়াই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রণ শুল্ক আরোপ করতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩ হাজার ৪০৮টি পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুল্ক রয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ