মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কয়েক বছর আগেও আমদানি করা মাছের ভালো চাহিদা ছিল। তবে গত দু বছর ধরে দেশে আমদানির পরিমাণ কমেছে। মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতে মাছ আমদানি কমেছে।

সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) দেশে মাছ আমদানি হয়েছে ৪৫ হাজার ৮৬০ টন। আগের অর্থবছরে (২০১৬-১৭) এর পরিমাণ ছিল ৭৮ হাজার টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মাছ আমদানির পরিমাণ কমেছে ৩২ হাজার ১৪০ টন।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে মাছ আমদানি হয় প্রায় ৮৮ হাজার টন। এ হিসাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি কমেছিল ১০ হাজার টন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে মাছ উৎপাদন বাড়ার কারণে আমদানির পরিমাণ কমছে। এছাড়া আগে চট্টগ্রামেই আমদানিকৃত মাছ পরীক্ষার পর তা বাজারজাতের সুযোগ থাকলেও এখন ঢাকায় পরীক্ষার পর বাজারজাত করতে হয়। এ প্রক্রিয়ায় আমদানিকৃত মাছ বাজারজাতে সময় বেশি লেগে যায়। ফলে আমদানিকারকরা মাছ আমদানিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

গত অর্থবছরে দেশে ২ কোটি ৭৬ লাখ ১০ হাজার ডলারের মাছ আমদানি করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মিঠা পানির ও সামুদ্রিক মাছ আমদানি হয়। এসব দেশের মধ্যে ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, চীন, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, ইয়েমেন ও উরুগুয়ে উল্লেখযোগ্য।

আমদানিকৃত স্বাদু পানির মাছের মধ্যে কার্পজাতীয় রুই ও কাতল রয়েছে। ক্যাটফিশ জাতীয় মাছের মধ্যে রয়েছে মাগুর, শিং, বোয়াল, আইড় ও চিতল। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে রয়েছে পারসে, কাওয়া, মেকারেল, টুনা, পাইল্লা, ইয়েলো ক্রোকার, পমফ্রেট, বিভিন্ন সার্ডিন বা সেড, ইচরি মলার শুঁটকি, সামুদ্রিক আইড়, কালো চান্দা, কোরাল বা ভেটকি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে মাছ উৎপাদন বাড়লেও এখনো মাছ আমদানি করতে হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হলো, দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে। আবার মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। এছাড়া দেশে অবস্থানরত বিদেশীদের সংখ্যাও বেড়েছে। রেস্তোরাঁগুলোয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সামুদ্রিক মাছ রান্না করা হয়। এজন্য এখনো মাছ আমদানি অব্যাহত রয়েছে।

তাদের মতে, আমদানি কমার ক্ষেত্রে দেশে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে মাছ উৎপাদন হয়েছে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার টন। ২০১৭-১৮ সালে তা বেড়ে আনুমানিক ৪২ লাখ ৭৭ হাজার টন হয়েছে।

অথচ এক দশক আগে অর্থাৎ ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে মাছ উৎপাদন ছিল মাত্র ২৫ লাখ ৬৩ হাজার টন। পরের অর্থবছরগুলোয় মাছ উৎপাদন ক্রমেই বেড়েছে।

২০০৮-০৯ থেকে ২০১৫-১৬ পর্যন্ত সাত অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎসে মাছ উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ২৭ লাখ, ২৯ লাখ, ৩০ লাখ ৬১ হাজার, ৩২ লাখ ৬২ হাজার, ৩৪ লাখ ১০ হাজার, ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ও ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার টন।

মত্স্য খাতে অবকাঠামো ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা গেলে অভ্যন্তরীণ উৎসে মাছ উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব। এছাড়া সঠিক প্রক্রিয়ায় বরফ দেয়া, প্রক্রিয়াজাত করা, ক্রমানুসারে সাজানো, হিমায়িত করা ইত্যাদি কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পাদন করতে হবে। কারণ মত্স্য আহরণ থেকে ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। সূত্র: বণিক বার্তা।