নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দিন দিন কমছে ফসলি জমির পরিমাণ। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে এখন অল্প জমিতে বেশি ফসল ফলানোর প্রযুক্তিতে বিশ^াসী হয়ে উঠছেন চাষিরা। উত্তরের জনপদ রাজশাহীতেও ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে মিশ্র চাষাবাদ। গম ছেড়ে সবজি চাষে ঝুঁকছেন, ফলে লাভবান হচ্ছেন তারা।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি খরিপ-২ মৌসুমে রাজশাহীর ৯টি উপজেলায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে মিশ্র সবজি চাষ হয়েছে। এরমধ্যে চলতি মৌসুমে মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, লাউ, করলা, ঢ্যাঁড়শ, মুলা, পটল, লালশাক ও শিম চাষ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। অল্প জমিতে কম খরচে অধিক মাত্রায় ফসল উৎপাদনের জন্য মিশ্র ফসল চাষে কৃষকরা উৎসাহিত হচ্ছেন। জেলায় সবচেয়ে বেশি মিশ্র সবজি চাষ হয়েছে বাঘা, চারঘাট, গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলায়।

বাঘা উপজেলার কলিগ্রাম এলাকার চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, সবজি চাষ করতেই হয়। অন্যান্য ফসলের চেয়ে সবজিতে বেশি টাকা পাওয়া যায়। তাছাড়া গমের চেয়ে সবজিতে বেশি টাকা পাওয়া যায়।

পড়তে পারেন: গম ছেড়ে সবজি চাষে ঝুঁকছে রাজশাহীর চাষিরা

একই এলাকার চাষি আ: হালিম বলেন, গত চার বছর আগে বাড়িতে খাওয়ার জন্য এক থেকে দেড় বিঘা জমিতে গম চাষ করতেন। গত দুই বছর থেকে ৪-৫ বিঘা জমিতে গম চাষ করছেন। বিঘা প্রতি ১৬ মণ হারে গমের ফলন হয়। হাজার টাকা মণ বিক্রি করলেও ১৬ হাজার টাকা পাওয়া যায়। তবে, এক বিঘা জমিতে সবজির আবাদ করলে ৪-৫ গুণ বেশি লাভবান হওয়া যায়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মোজদার হোসেন জানান, রাজশাহীর পবা উপজেলার দামকুড়া, হুজুরীপাড়া, পারিলাসহ কয়েক এলাকার একাধিক কৃষক গড়ে তুলেছেন মিশ্র ফল-সবজির বাগান। একই সঙ্গে সেই বাগানে করেছেন মাল্টা, ড্রাগন, শসা, পেয়ারা, পেঁপে, লেবু, লালশাক, বাঁধাকপি আর মরিচের চাষ।

পড়তে পারেন: ছাদের অল্প জায়গায় বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ পদ্ধতি

এই কর্মকর্তা আরোও বলেন, চলতি খরিপ-২ মৌসুমে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে মিশ্র ফল-সবজি চাষ হয়েছে। অল্প সময়ে অধিক মুনাফা পাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে মিশ্র সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

মিশ্র ফসল চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন পবা উপজেলার হুজুরীপাড়া ইউনিয়নের কৃষক সারোয়ার জাহান। দুই বছর আগে ৯ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন বারি-১ জাতের মাল্টা ও সবজির মিশ্র ফসলের বাগান। তার উৎপাদিত মাল্টা এলাকার চাহিদা পূরণ করে নগরীর বিভিন্ন ফলের দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে।

পড়তে পারেন: বর্ষায় ছাদে সবজি বাগান, জানুন কৌশল

সারোয়ার জাহান বলেন, মরিচের বীজ বপন, সার ও কীটনাশক বাবদ খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। একই জমিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপির চাষও করেছি। এরই মধ্যে বাঁধাকপি ও ফুলকপি বাদে মরিচই বিক্রি হয়েছে ৪৫ হাজার টাকার।

একই ইউনিয়নে আট বিঘা কমলা ও মাল্টার বাগানে মরিচ চাষ করেছেন আলমগীর হোসেন। এই মৌসুমে মরিচের ভালো দাম পেয়েছেন। বাগানের ফল পাওয়া শুরু হলেই খরচ উঠে যাবে। এতে ভালো লাভ আসবে বলে মনে করছেন এই চাষি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ