নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মেঘনা নদীতে ২ মাস সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার (১ মার্চ) থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।

সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটি পরিপত্র জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, জাটকা রক্ষায় মেঘনা নদীর চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার এলাকায় এ আওতায় পড়বে।

স্থানীয় প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে মেঘনায় অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক মৎস্য কর্মকর্তা।

উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সরকার ঘোষিত পরিপত্রে মাছ ধরা ছাড়াও ইলিশ বা জাটকা পরিবহন, বিক্রি ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়। নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইনে জেল-জরিমানা করার কথাও বলা হয়।

পড়তে পারেন: এক রাজা ইলিশের দাম ৩২০০ টাকা!

মেঘনার তীরবর্তী ষাটনল, এখলাশপুর, মোহনপুর, ছটাকী, শিকিরচর, আমিরাবাদসহ আরও কয়েকটি এলাকায় গত কয়েক দিনে জেলে ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিক সচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ব্যানার টাঙানো হয়েছে। এ ছাড়া এলাকায় একাধিকবার মাইকিং করা হয়েছে।

মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম বলেন, মেঘনায় মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে আগামী মঙ্গলবার থেকে তাঁর অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও কোস্টগার্ড অভিযান চালাবে। জেলে বা মৎস্যজীবীরা যাতে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে মেঘনায় মাছ ধরতে না পারেন, সে জন্য সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

পড়তে পারেন: ইলিশে সয়লাব মৎস্য আড়ত, মিলছে কম দামে

মনোয়ারা বেগম আরও বলেন, মেঘনায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার ফলে তাঁর উপজেলায় কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় ৯ হাজার জেলেকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে। আগামী মার্চ ও এপ্রিলে প্রতিটি জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি চাল দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষে থাকলেও ভারত ইলিশ উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছে। তাই, ইলিশের গায়ে চিহ্ন দিয়ে উজানের দিকে ছেড়ে দিচ্ছে ভারত। সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট সরকারিভাবে এ কাজটি করছে বলে খবর প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা।

ফারাক্কায় গঙ্গা নদীর উত্তরে চিহ্ন দেওয়া মাছগুলো ছেড়ে দেওয়ার কারণ রয়েছে বেশ। বিশ্বের যে ১১টি দেশে ইলিশ উৎপাদন হয় তার মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে শীর্ষস্থানে। বর্তমানে বিশ্বের ৮৬ শতাংশ ইলিশের জোগান দেয় বাংলাদেশ, যেখানে ভারত দেয় ১০ শতাংশ জোগান।

পড়তে পারেন: বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনে শীর্ষে বাংলাদেশ

মাত্র ৪ বছর আগেই বিশ্বের ৬৫ শতাংশ ইলিশের জোগান দিত বাংলাদেশ। এদিকে, ৫ বছর আগে ভারতে ইলিশের উৎপাদন ছিল বিশ্বের মোট উৎপাদনের ২৫ শতাংশ। ইলিশ বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোট ইলিশ ধরার ফলেই ইলিশের এই সঙ্কট। ফলে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইলিশ নিয়ে ফারাক্কা থেকে এলাহাবাদ পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাড়াতে চাইছে ভারত সরকার।

এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই নতুন এই উদ্যোগ নিল ভারতের সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট। জাটকা (ছোট ইলিশ) মাছ ধরে সেগুলোর গায়ে চিহ্ন দিয়ে গঙ্গার উত্তর দিকে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। পানি থেকে তোলা হলে বেশ অল্প সময়ই বাঁচে ইলিশ। ফলে বেশ সতর্কতার সাথে এই কাজ করা হচ্ছে।

ছেড়ে দেওয়া চিহ্নিত ইলিশগুলো যদি নদীর উত্তর দিকের এলাকার কোনো মৎস্যজীবীর হাতে পড়ে, তাহলেই ইলিশের গতিবিধি বোঝা যাবে। সেজন্য মৎস্যজীবীদের চিহ্নিত ইলিশ প্রতি দু’শো টাকা করে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা।

ইনস্টিটিউটের একজন কর্মকর্তা সঞ্জীবকুমার জানান, ইতোমধ্যে প্রায় আড়াইশো চিহ্নিত ইলিশ ধরা পড়েছে গঙ্গার উজানের বিভিন্ন এলাকা থেকে।

সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ফারাক্কার পর থেকে উজানের দিকে ইলিশের প্রজনন এখন প্রায় বন্ধ। ফারাক্কা বাঁধ টপকে গঙ্গার উজানে ইলিশ প্রবেশ করতে না পারায় এই পরিস্থিতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অথচ এই বাঁধ চালু হওয়ার আগে এলাহাবাদ পর্যন্ত প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত।

পড়তে পারেন: সারাদেশে ২২ দিন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

নদীর উজানে ব্যাপক পলি, নদী দূষণ এবং নির্বিচারে জাটকা ধরার ফলে ফারাক্কায় ইলিশের পরিমাণ ব্যাপকহারে কমে গিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে গঙ্গার নির্দিষ্ট এলাকাগুলোকে ডিম পাড়ার উপযোগী করে তুলে সেগুলো সংরক্ষণের মাধ্যমে নদীতে ইলিশের সংখ্যা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ভারত।

এদিকে ফারাক্কায় ২৫০ মিটার লম্বা ও প্রায় ২৬ মিটার চওড়া একটি নতুন নেভিগেশনাল লকগেট তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পুরনো লকগেটটি চালু হয় ১৯৭৮ সালে। তারপর থেকেই উজানে ইলিশের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, নতুন নেভিগেশনাল লকগেট চালু হয়ে গেলে উজানে এলাহাবাদ পর্যন্ত ইলিশের জোগান বাড়বে। এছাড়া মাছের ডিম পাড়ার সম্ভাবনাও তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মৎস্য বিশেষজ্ঞ এ কে সাহু জানান, “ফারাক্কায় ইলিশ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। ডাউন স্ট্রিমে গঙ্গা থেকে ইলিশ ধরে বিশেষ ব্যবস্থায় ট্যাগিং করে তা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে আপ স্ট্রিমে। এরপর মাছগুলোর গতিবিধির উপর নজর রাখা হচ্ছে। এতে ইলিশের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।”

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ