নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: আমের মৌসুম শেষে রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে আম। বাজারে দেখা মিলছে আমের রাজা ফজলি, ঝিনু আশ্বিনা ও ব্যাগিংকরা আশ্বিনা আমের।

শনিবার (৬ আগস্ট) রাজশাহীর সাহেব বাজার স্বর্ণপট্টি, শিরোইল ঢাকা বাস টার্মিনাল, লক্ষীপুর সহ কয়েকটি স্থানে সরেজমিন ঘুরে এসব তথ্য মিলেছে।

আমের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রাজশাহীর সাহেব বাজারের স্বর্ণপট্টির জননী ফল আড়তের লাট্টু মিয়ার সাথে কথা হয়। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রাজশাহীর মানুষ এখন আর আম খাচ্ছে না। অনেক বেশি দাম হওয়ার কারণে আগ্রহ নেই। ১২ আনাই ক্রেতা নাই। যা বিক্রি হচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল অঞ্চলে। সবচেয়ে বেশি কিনছে ঢাকার মানুষ। টাকা-পয়সাওয়ালা মানুষ ছাড়া এখনকার আম সাধারণ মানুষ খেতে পারেনা।

পড়তে পারেন: ১ কোটি ১৫ লাখ টন গম আমদানি করবে ইন্দোনেশিয়া

দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে ফজলি আম সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে; সাড়ে ৪০০ টাকা কেজি। এছাড়া ঝিনু আশ্বিনা আছে; বিক্রি করছি ১২০ টাকা কেজি। আশ্বিনার পলিব্যাগ করা আমও ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আজকেই কিছু আম গাছ থেকে পাড়া হয়েছে।

এদিকে রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল ঢাকা বাস টার্মিনাল এলাকার লিটন ফল ভান্ডারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বাজারে মিলছে- বারি-৪, আম্রপালি, আশ্বিনা, ঝিনুক আশ্বিনা ও গৌরমতি আম। এর মধ্যে বারি-৪ জাতের আম স্বাদ ও ধরনভেদে দুই প্রকারের পাওয়া যাচ্ছে। ।

বর্তমানে বাজারে বারি-৪ জাতের আম আকার, ধরন ও স্বাদভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে। বাজারে এখনও আম্রপালির অস্তিত্ব মিললেও ব্যবসায়ীরা কেজি প্রতি এর দাম হাকছেন ২৫০ টাকা। তবে প্রথমদিকে গৌরমতি ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তুলনামূলক কম স্বাদের আশ্বিনা ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও বেশি স্বাদের ঝিনুক আশ্বিনা জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে।

পড়তে পারেন: এবার ১ কেজি ওজনের “ঐশ্বরিয়া” আম উদ্ভাবন

সাহেববাজারের তুলনায় শালবাগানের বিক্রেতারা বলছেন, শেষের দিকে আমের চড়া দাম হলেও আম বিক্রি নিয়ে একটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। আমের বাজারে পর্যাপ্ত চাহিদা রয়েছে। তবে চাহিদানুসারে আম সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। একারণে রাজশাহীর বাইরের জেলা থেকে আম সংগ্রহ করে আনতে হচ্ছে তাদের।

ব্যবসায়ীরা জানান, রাজশাহী জেলার মধ্যে মোহনপুর, বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় সামান্য কিছু আশ্বিনা ও বারি-৪ আম মিললেও তারা অধিকাংশ আম আনছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলা থেকে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের দাম নওগাঁ জেলার চেয়ে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বেশি। দামের এ তারতম্য হওয়ায় এই বাজারের চার ভাগের তিন ভাগ আম আনছেন নওগাঁর সাপাহার এলাকা থেকে।

পড়তে পারেন: এবার দেখা মিললো বিশ্বের সবচেয়ে বড় আমের

প্রতি বছর শিরোইল ঢাকা বাস টার্মিনাল এলাকায় বসে আমের দোকান। প্রথমদিকে এখানে প্রায় ২০ থেকে ২২ দোকান বসলেও বর্তমানে রয়েছে ৮ থেকে ১০টি আমের দোকান।

এই এলাকার আম ব্যবসায়ী মোমিন ইসলাম বলেন, শিরোইল বাস টার্মিনাল আম বাজারের অধিকাংশ ক্রেতাই স্থানীয়। স্থানীয় ক্রেতারা আম কেনেন ৫কেজি, ১০কেজি অথবা ২০কেজি করে। আর ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা অন্যান্য স্থানের বাইরের যাত্রীরা আম কেনেন বড়জোড় দুই থেকে তিন কেজি। তারপরও প্রতিদিন এক একেক জন ব্যবসায়ী প্রায় ২০ মণ করে আম বিক্রি করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ তথ্য কেন্দ্রের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল কাফি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমের সরবরাহ যত কমবে ততই দাম বাড়বে। মৌসুম শেষে আমের দাম বাড়ে প্রতিবছরই । তবে এবার যে দামে আম বিক্রি হচ্ছে তা রেকর্ড বলা চলে। ফজলি আমের কেজি ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ