মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর মৃত্যুতে শোকসভা

এগ্রিকেয়ার প্রতিবেদক: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক আজ (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (পিজি) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি আগস্ট মাস থেকে প্রোস্টেট গ্লান্ডের সংক্রমণে ভুগছিলেন এবং ১৩ ডিসেম্বর থেকে হাসপাতালের আইসিইউ এর ১৬ নম্বর বেডে লাইফ-সাপোর্টে ছিলেন।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। মরহুম ছায়েদুল হক ১৯৪২ সালের ৪ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও একমাত্র পুত্রসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন এবং গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার একমাত্র পুত্র ডাক্তার এ, এস, এম রায়হানুল হক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন।

তিনি ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসন থেকে মোট ৫ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার নিয়ে মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত সে দায়িত্বপালন করেন।

মরহুম ১৯৬৬ সালে বঙ্গবধুর ৬ দফা আন্দোলনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং ১৯৬৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয় ছিলেন এবং ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো নাসির নগর থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন।

তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদখাতের ব্যাপক উন্নয়নসাধন করেন। তার সময়েই মৎস্য ও ছাগল-উৎপাদনে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে চতুর্থস্থান অর্জন করে। তার প্রচেষ্টায় ইলিশ উৎপাদনেও ঈর্ষণীয় সাফল্যের কারণে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দেশের জনগণ অভাবনীয় স্বল্পমূল্যে ইলিশ খেতে সক্ষম হয়েছে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নাসিরনগরের ব্যাপক উন্নয়নে স্মরণীয় অবদান রেখেছেন।

সদ্যমৃত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক এর জানাজার নামাজ আগামীকাল সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় সংসদভবনে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর হেলিকপ্টারযোগে লাশ তার নির্বাচনী এলাকা নাসিরনগরে নেয়ার পর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়মাঠে সকাল ১১টায় দ্বিতীয় জানাজা এবং তার গ্রামের বাড়ি পূ্র্বভাগে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তাকে সেখানেই মৃত বাবা-মায়ের পাশে দাফন করা হবে।

মরহুম মোহাম্মদ ছায়েদুল হক বাংলাদেশের একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৪২ সালের ৪ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলাধীন পূর্বভাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতা মরহুমা মেহের চান্দ বিবি ও পিতা মরহুম আলহাজ মোহাম্মদ সুন্দর আলী। তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া, তিনি আইনবিষয়ে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি দীর্ঘদিন আইনপেশার সাথে যুক্ত ছিলেন ও বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের এডভোকেট হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্বপালন করেন।

তিনি ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৫-৬৬ সালে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ ছাত্রসংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয়দফায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি স্বাধীনতা-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতের ত্রিপুরায় অবস্থিত লেম্বুছড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর একাধারে ৭ম থেকে ১০ম সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হন। সংসদীয় কাজে তাঁর অভিজ্ঞতা ব্যাপক। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে বাণিজ্য, অর্থ, সরকারি তহবিল ও বিশেষ বিষয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১০ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হবার পর শেখ হাসিনা তাঁকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন।

তিনি একজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থেকে নাসিরনগর ডিগ্রি কলেজ, চাতালপাড় ডিগ্রি কলেজ ও চাতালপাড় উচ্চবিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়নে অবদান রাখেন। সরকারি সফরে ভারত, শ্রীলংকা,পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ইটালি, নেদারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন।