নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত মৎস চাষী ও রিলায়েন্স অ্যাকুয়া ফার্মসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রীতীশ পন্ডিত বলেন, মাছের অতিরিক্ত খাদ্য খরচের কারনে আজ মৎস্য চাষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, আমাদের ১কেজি তেলাপিয়া মাছ উৎপাদন খরচ ৮০ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা।

তিনি আরো বলেন, মাছের রোগব্যাধি নিরসনে গবেষকদের সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রোবায়োটিক আমাদের দেশে আমদানি হচ্ছে কিন্তু এর গুণগত মান সঠিক আছে কী না, তা আমাদের পরীক্ষা করা জরুরি । তিনি আরও বলেন মারাত্নক রোগের কারনে গুলশা-শিং মাছ চাষ করা আমরা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি, গবেষণা করে এর রোগ দমনের পদ্ধতি আবিষ্কার করতে পারলে মাছ চাষীরা লাভবান হতো।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন(কেজিএফ) এর যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের নির্বাচিত চাষযোগ্য মাছের প্রজাতি বৃদ্ধি ও প্রজননে প্রোবায়োটিকের প্রভাব বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

আরোও পড়ুন: শেকৃবিতে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও জলাতঙ্ক প্রতিরোধ কর্মসূচি 

আজ সোমবার (২৫ জানুয়ারি ২০২১) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আমিনুল হক বিল্ডিং কনফারেন্স রুমে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কেজিএফ এর আর্থিক সহযোগিতায় কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন(কেজিএফ) এর নির্বাহী পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস এবং বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম বাউরেস পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, আমাদের গবেষণা ও প্রযুক্তিসমূহ মৎস্যচাষী বান্ধব হতে হবে।গবেষণাসমূহ যেন খামারভিত্তিক হয় সে দিকে খেয়াল রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি মৎস্যচাষীদের বক্তব্য শুনে খুবই আশাবাদী হন এবং এ খাতে আরও বেশী অর্থায়ন ও গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর (পিআই), প্রফেসর ড. মোঃ শাহজাহান উক্ত প্রকল্পের উদ্দেশ্য, কার্যক্রম ও প্রত্যাশিত ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

আরোও পড়ুন: শেকৃবিতে এমএসসি ইন এপ্লাইড এপিডেমিওলজি কোর্স শীর্ষক আলোচনা সভা

তিনি বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে মাছ চাষে প্রোবায়োটিকের ব্যবহারের অবস্থা জানা যাবে এবং রুই, তেলাপিয়া, গুলশা, পাবদা এবং শিং মাছের দ্রুত বিকাশের জন্য উপযুক্ত প্রবায়োটিকগুলি নির্ধারণ করা হবে । কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মো. মামুনুর রশীদ এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড.এ.কে.শাকুর আহম্মদ।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম বাউরেস পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, বাজারে অনেক ধরনের ভেজাল প্রোবায়োটিক রয়েছে, আমাদের সঠিক প্রোবায়োটিকের নির্বাচন ও প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে আরও গবেষণা করা দরকার। সরকারী পর্যায়ে প্রোবায়োটিকের মান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তবেই খামারীরা এ থেকে উপকৃত হবে।

প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর (পিআই) প্রফেসর ড. মোঃ শাহজাহান প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানান, বাংলাদেশে মাছ চাষে প্রোবায়োটিক এর পরিমাণ ও মাত্রা অনুসন্ধান করা; নির্বাচিত প্রোবায়োটিক এর বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করা; প্রোবায়োটিক ব্যবহার করে একুরিয়ামে নাইল তেলাপিয়া মাছের বৃদ্ধির প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা; নির্বাচিত প্রোবায়োটিক ব্যবহার করে পুকুরে পাবদা মাছের বৃদ্ধির প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা; নির্বাচিত প্রোবায়োটিক ব্যবহার করে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে শিং, গুলশা এবং পাবদা মাছের বৃদ্ধির প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা,নির্বাচিত প্রোবায়োটিক ব্যবহারের ফলে নাইল তেলাপিয়ার বৃদ্ধি এবং প্রজননে কি ধরনের প্রভাব পড়ে তা জিন এক্সপ্রেশনের মাধ্যমে যাচাই করা হবে এর মাধ্যমে।

কর্মশালায় গবেষকগণ আরও বলেন, বাংলাদেশে আজ মাছ চাষে রাসায়নিক এবং এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার হচ্ছে এর ফলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিকাশ ঘটছে যা আমাদের জলজ পরিবেশে দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। তাই জলজ পরিবেশে এন্টিবায়োটিকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য পরিবেশ বান্ধব প্রোবায়োটিক এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রোবায়োটিক মূলত অণুজীব যেমন: ব্যাসিলাস গ্রুপের ব্যাকটেরিয়া, ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া, নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া, ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া এর সমাহার। জলজ পরিবেশে প্রোবায়োটিক ব্যবহারের ফলে মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, গ্রোথ প্রোমোটার হিসেবে কাজ করে, হজমে সাহায্য করে, প্রজননের সাহায্য করে, পানির গুণগত মান উন্নত করে, প্রোটিনের অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করে।

বক্তারা আরও জানান, বাংলাদেশে মাছ চাষের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি দেশ। চাষের অধীনে মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। ২০০১-২০০২ সালে মাছের উৎপাদন ছিল ০.৭৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন যা ২০১৮-২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ২.৪০৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন, এটি সম্ভব হয়েছে মাছ চাষে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ, সম্প্রসারণ, বৈচিত্র্যকরণ, এবং নিবিড় করণের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানে সরকারি,বেসরকারী, অফিসার, আমণ্ত্রিত অতিথি, মাছ চাষী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ অংশ নেন।

“মৎস্য চাষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে” সংবাদের তথ্য এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন বাকৃবি’র জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ