ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সিলেটে এবার দেড়শ টন শিম উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। এ বিপুল পরিমাণ শিম স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, ইতালিসহ ১৩ দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ফলে এখানকার কৃষকরা ভালো দাম পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন।

সিলেটের গোয়ালগাদ্দা শিম স্থানীয় মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে ফলে এ খাত থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়ে থাকে। এ বছর শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে।

যদিও সিলেটের কেবল একটি উপজেলাতেই গোয়ালগাদ্দা শিম উত্পাদন হবে ৮৫ টন। গোলাপগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে উত্পাদিত এ শিম বিশ্বের ১৩ দেশে রফতানি হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, সিলেট জেলার সবকটি উপজেলায় কম-বেশি শিম উত্পাদন হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি উত্পাদন হয়ে থাকে গোলাপগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন লক্ষণাবন্দ, লক্ষ্মীপাশা ও ফুলবাড়ী ইউনিয়নে। এসব এলাকার মাটি ও পরিবেশ গোয়ালগাদ্দা শিম চাষে ত্যন্ত উপযোগী। ফলে চলতি বছর ৫৫৫ হেক্টর জমিতে গোয়ালগাদ্দা শিম চাষ হয়েছে। আগামী বছর ৬০০ হেক্টর জমিতে গোয়ালগাদ্দা শিমের চাষ উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। চলতি বছর ৮৫ টন শিম উত্পাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কানাডাসহ অন্তত ১৩টি দেশে এ শিম রফতানি হয়। এ শিম চাষ ও রফতানির সঙ্গে স্থানীয় তিনটি ইউনিয়নের সাড়ে চার শতাধিক পরিবার জড়িত। এ শিমের চাষ করে প্রতি মৌসুমে একেকটি পরিবার ৫-৬ লাখ টাকা আয় করে বলে জানা যায়। স্থানীয় কৃষি অফিসের দাবি, গোয়ালগাদ্দা শিমের বীজ এ তিনটি ইউনিয়ন ছাড়া অন্য কোনো এলাকায় নিয়ে রোপণ করলে ফলন তেমন ভালো হয় না।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

শিম-বরবটি চাষে স্বাবলম্বী কেশবপুরের সিরাজুল

বিনা খরচে শিম চাষে লাভবান কৃষকরা

১২ শতকে সপ্তাহে ২ মণ শিম তুলছেন আলমগীর

গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড শিমে ভরপুর রাজগঞ্জের মাঠ

ভাদ্র মাসে লাউ শিমের ‍বিশেষ যত্ন, আগাম শীতকালীন সবজির প্রস্ততি

গোলাপগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা মেলে শিম খেতের। যে দিকে চোখ যায় নয়নাভিরাম সবুজের হাতছানি। সে সঙ্গে কোথাও ফুটেছে ফুল আবার কোথাও শিম ঝুলে আছে গাছে। লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গেলে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। এমনকি পাকা রাস্তার দুই পাশে রয়েছে শিম গাছের সারি।

মাসুক মিয়া জানান, তিনি বেশির ভাগ খেত থেকে শিম সংগ্রহ করেন। এরপর বস্তাবন্দি করে ঢাকা থেকে আসা লরিতে তুলে দেন। তিনি জানান, মৌসুম এলেই ঢাকার কিছু আড়তদার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর সেগুলো ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিমের জন্য ট্রাক, লরি, টেম্পো, ভ্যানগাড়ি নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা।

আবুল হোসেন নামের কৃষক জানান, উপজেলার পুরকায়স্থবাজার ও চৌধুরীবাজার শিম বিক্রির প্রধান হাট। যেখানে পাইকারি বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে শিম নিয়ে আসেন কৃষক। কৃষক খেত থেকে শিম তুলে ঠেলাগাড়ি বা ভ্যানগাড়ি করে বাজারে নিয়ে আসে। কেউ কেউ আবার খেতে থাকা অবস্থায় ব্যবসায়ীদের কাছে শিম বিক্রি করে দেন।

শফিকুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী জানান, পাইকারি ৩৪-৩৫ টাকা দামে শিম বিক্রি করা হয়। গোয়ালগাদ্দা শিমের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। এ শিম চ্যাপ্টা ও সাধারণ শিমের চেয়ে বড় হয়ে থাকে। দেখতেও সুন্দর। যার জন্য ক্রেতারা একটু বেশি দামেই নিয়ে যান।

জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্টার্স গ্রুপের প্রেসিডেন্ট মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সিলেটের গোয়ালগাদ্দা শিম রফতানি হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে সিলেট থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ কেজি শিম রফতানি হয়। চলতি মৌসুমে প্রতিদিন যুক্তরাজ্যে এক হাজার কেজি শিম রফতানি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘সিলেট থেকেও সবজি রফতানি সম্ভব ছিল, শুধু প্যাকিং হাউজের অভাবে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। সিলেট এয়ারপোর্ট ইডিএস মেশিন স্থাপন হলেও প্যাকিং হাউজ নির্মাণ এখনো হয়নি। ফলে শিম, আদা, লেবু, সাতকরাসহ সবজিপণ্য ঢাকা থেকে বিদেশে রফতানি করতে হয় সিলেটের রফতানিকারকদের।’

মো. মোস্তাফিজুর রহমান আরো জানান, সিলেটের শিম মূলত কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। সরাসরি কিছু কৃষক স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন। এরপর ঢাকায় সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজের ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে পাঠাতে হয়। এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত। সিলেটে প্যাকিং হাউজ হলে প্রচুর সবজি পণ্য বিদেশে রফতানি সম্ভব।

স্থানীয় মাদাখাপড়া গ্রামের কৃষক মো. রাহাদ মিয়া জানান, তিনি এ বছর তিন বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। তার খরচ তোলার পর সবশেষ আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা লাভ হবে।

ঢাকা দক্ষিণের বিদাইটিকর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন (৪৫) জানান, চলতি বছর ১৮০ শতক জমিতে শিম চাষ করছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত খরচ বাদে তিন লক্ষাধিক টাকার মতো লাভ করতে পারবেন। তবে সরকারি প্রণোদনা পেলে শিম চাষে আরো অনেকেই উদ্যোগী হবেন বলে জানান তিনি।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাশরেফুল আলম বলেন, ‘চলতি বছর ৫৫৫ হেক্টর জমিতে গোয়ালগাদ্দা শিম চাষ হয়েছে। আগামী বছর ৬০০ হেক্টর জমিতে এ শিমের চাষ উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। চলতি বছর ৮৫ টন শিম উত্পাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক হিজকিল গুলজার বলেন, সিলেটে উত্পাদিত লেবুসহ শাকসবজি বিদেশে রফতানি হয়। গোলাপগঞ্জের গোয়ালগাদ্দা শিমও ইউরোপে বেশ জনপ্রিয়। সিলেট থেকে সবজিপণ্য রফতানি শুরু হলে শিম রফতানি কয়েকগুণ বাড়বে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, সিলেটের গোলাপগঞ্জ শিম চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। এছাড়া গোয়াইনঘাট, সিলেট সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় শিম চাষ হচ্ছে। ভবিষ্যতে কৃষককে শিম চাষে উত্সাহ দিতে উদ্যোগ নেয়া হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ