মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে আমের

মেহেদী হাসান, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মহামারি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে রাজশাহীতে নিয়ম মেনে বসবে আমের হাট। চাষিরা বিভিন্ন জায়গায় আমের আড়ৎ খোলা, বাজার বসবে।

এসব তথ্য এগ্রিকেযার২৪.কম কে নিশ্চিত করেছে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসন।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরে ৫ হাজার কোটি টাকার আমের ব্যবসা হয় বছরে। রাজশাহী অঞ্চলের আমের তিনটি বড় মোকাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, নওগাঁর সাপাহার ও রাজশাহীর বানেশ্বরহাট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব মোকামের আমের আড়তগুলো খোলার অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

বাগান মালিক, আম চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ১৫ মে থেকে রাজশাহীসহ অঞ্চলের চার জেলায় গুটি জাতীয় দেশি আম নামানোর সময়সূচি ঘোষণা করেছে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জাতের পাকা আম গাছ থেকে নামানোর কথাও বলা হয়েছে প্রশাসনের ঘোষণায়।

রাজশাহীতে নিয়ম মেনে বসবে আমের হাট তথ্য নিশ্চিত করে রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, কৃষি পণ্য হিসেবে আম পরিবহনে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। শুধু রাজশাহীতেই নয় সারাদেশে কৃষি পণ্য পরিবহনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সাহায্য সহযোগিতা করবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা আম নিয়ে যেতে পারবেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক শামসুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, রাজশাহী অঞ্চলের অধিকাংশ আম চালান হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন মোকামে। আম পাড়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

নিময় মেনে তারা আম কেনাবেচাঁ করতে পারবেন। এবার রাজশাহী জেলায় আমের চাষ হয়েছে ১৭ হাজার ৬’শ ৮৬ হেক্টর জমিতে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ৯’শ ৪৭ মেট্রিকটন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আম চাষি বদরুদ্দোজা জানান, এবছর আম নিয়ে চিন্তা। করোনায় মানুষের মনে সুখ-শান্তি নেই। চাঁপাইয়ের আম ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। এবার ফলন ভালো হয়েছে। ৩০ তারিখের দিকে কিছু আম পাড়া যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, রাজশাহী অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আমবাগান রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। এখানে ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। হেক্টরপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন হিসাবে উৎপাদন হবে। এবার শুধুমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতেই আমের উৎপাদন হবে ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন।

আরও পড়ুন: রাজশাহীর বাজারে আসছে নতুন চাল, কমছে দাম

তিনি আরো বলেন, আমাদের আম পড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়নি । যে যার মতো আম পরিপক্ক হলেই পাড়তে পারবেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২২৯ আমের আড়ৎ আছে সবার সাথে যোগাযোগ এবং আড়ৎ পরিদর্শন করা হয়েছে। বাজার বসাতে কোন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। প্রয়োজনে পুলিশ প্রশাসন, কৃষি বিভাগ তাদের সহায়তা করবেন।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যে কেউ নিয়ম মেনে আমের বড় হাট-বাজার বসাতে পারেন। কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। আম বিক্রি করতে না পারলে আম চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আমাদের একটি বিষয় মানুষ যেন নিময় মেনে, দুরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করেন। দুঃখের বিষয়, মানুষ নিজের ভালো না বুঝে এলোমেলো চলাফেরা করছে বেশি। নওগাঁ জেলায় ১৮ হাজার ৬৬৬ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩২৫ মেট্রিক টন আম ফলনের আশা রয়েছে। এ পরিমাণ আমের বাজার মূল্য ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, রাজশাহী অঞ্চলের জেলা প্রশাসন ৭ মে গাছ থেকে পাড়ার সময়সূচি ঘোষণা করে। সূচি অনুযায়ী, সব ধরনের গুটি জাতের আম ১৫ মে, গোপালভোগ ২০ মে, লক্ষণভোগ ও রানীপসন্দ ২৫ মে, ক্ষিরসাপাত বা হিমসাগর ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন, আশ্বিনা ও বারি-৪ জাতের আম ১০ জুলাই গাছ থেকে পেড়ে বিক্রি ও চালান করা যাবে।

রাজশাহীতে নিয়ম মেনে বসবে আমের হাট এমন সিদ্ধান্ত আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের জন্যে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।