মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ফলের রং লাল-সবুজ। এক একটি ফলের ওজন দেড় থেকে দুই কেজি। পেঁপে পুরু, গাঢ় লাল, স্বাদেও বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধিযুক্ত। অধিক ফলন সম্পন্ন এই রেড লেডি পেঁপে চাষে ঝুঁকছেন রাজশাহীর কৃষকেরা।

রাজশাহী শাহমখদুম ফকিরপাড়া এলাকার চাষি গাফফার হোসেন। ৭ বিঘা জমিতে রেড লেডি জাতের পেঁপে চাষ করে মাসে আয় করছেন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। ২০ থেকে ২২ দিন পর পর এসব জমি থেকে দেড়’শ থেকে ১৬০ মণ পেঁপে বিক্রি করছেন তিনি। প্রতি মণ পেঁপে ৪৫০-৫০০ টাকা করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন।

গাফফার হোসেনের মতো পবা উপজেলার এলাকার অর্ধশতাধিক কৃষক রেড লেডি জাতের পেঁপে চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। এসব কৃষক এর আগে আলু চাষ করতেন। কিন্তু রেড লেডি পেঁপে থেকে একটানা দুই বছর ফলন পাওয়া যায়। সেইসাথে লাভের দিক থেকে আলুর কয়েকগুণ। তাই রেড লেডি পেঁপে চাষে ঝুঁকছে এসব কৃষকেরা। দেশি জাতের চেয়ে পেঁপেও ধরে বেশি। স্বাদ ও গন্ধ ভালো হওয়ায় বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে এই পেঁপের।

রাজশাহীর পবা উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইসরাত জাহান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, কৃষকেরা আলু, বেগুন চাষ করা জমিতে রেড লেডি জাতের পেঁপের চাষ করছেন। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন।
জেলা কৃষি সূত্রে জানা যায়, চৈত্র মাসের প্রথম দু-সপ্তাহের মধ্যে চারা রোপণ করতে হয়। ২৪-২৫ মাস পর্যন্ত একটানা ফলন পাওয়া যায়। এ জাতের পেঁপে পুরু, গাঢ় লাল, স্বাদেও বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধিযুক্ত। গাছের উচ্চতা ৬০-৮০ সেন্টিমিটার হলে ফল ধরা শুরু হয়। প্রতিটি গাছে ৪০টির বেশি ফল হয়। পাকা অবস্থায়ও দূর দূরান্তে বাজারজাত করা যায়। রোগ সহ্য করারও ক্ষমতা দেশী জাতের পেঁপের চাইতে অনেকটাই বেশি।

আরোও পড়ুন: যেভাবে পেঁপের ড্যাম্পিং রোগ দমন করবেন

পেঁপের ফল ঝরার কারণ ও প্রতিকার

রাজশাহীর সিলিন্দা এলাকার চাষি জামসেদ আলী এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ‘গত বছরের শুরুর দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চারা নিয়ে আসি। গাছের বয়স ৭-৮ মাস হলে ফল আসতে শুরু করে। এখন আমার দুই বিঘা জমিতে পেঁপে আছে। আরো ২ বিঘা বন্যায় ডুবে নষ্ট হয়েছে। ২২ দিন পর পর ঢাকা অথবা চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে ৫৫-৬০ মণ করে বিক্রি করছি। সামনে কয়দিন পর আবার বিক্রি হবে। গড়ে ৫০০ টাকা মণ বিক্রি হয়।’

তিরি আরোও বলেন, ‘প্রতিবার ফল ভাঙ্গার পর ডিএপি, ইউরিয়া,পটাস, সালফার দিতে হয়। বৃষ্টি না হলে সেঁচ দিতে হয় ১৫-২০ দিন পর পর। প্রতি বিঘাতে মাসে খরচ হয় ৭-৮ হাজার আর সর্বনিম্ন পেঁপে বিক্রি হয় ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসরাত জাহান আপা প্রায়ই আমাদের এখানে আসে। পরামর্শ দেন। আমি এখন অনেক লাভ করতে পারছি।’

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রাজশাহীতে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পেঁপে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩’শ ৫৪ হেক্টর। এসব জমি থেকে প্রায় উৎপাদন হয়েছিল ৪৪ হাজার ২৮৭ মেট্রিক টন পেঁপে। চলতি অর্থবছরেও একই পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সামনে বছর আরো বাড়বে। রেড লেডি জাতের পেঁপে খুব মিষ্টি এবং পুষ্টিগুণও ভালো। স্বল্প সময়ে ফল পাওয়া যায়। যাঁরা এ পেঁপের চাষ করছেন তাঁদের প্রত্যেককে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ