মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীতে ২০১৬ সালে বার্ষিক দুধ উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ২৭ মেট্রিক টন। মাত্র ৪ বছরের মাথায় সদ্য বিদায়ী বছর ২০২০ সালে দুধ উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ২৬ মেট্রিক টন। ফলে জেলায় ৪ বছরে দুধ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন।

জেলা প্রাণিসম্পদ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জেলার ৯টি উপজেলা ও একটি মেট্রো অঞ্চল মিলিয়ে দেশী ও সংকর জাতের গাভী থেকে দুধ উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ২৭ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সেই দুধ উৎপাদন বেড়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৪৬ মেট্রিক টন। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করা হলেও পরের দু-বছরে দুধ উৎপাদন কিছুটা মন্থর হয়ে পড়ে।

হটাৎ ২০১৭ সালে ১ লাখ মেট্রিকটন দুধ উৎপাদন বাড়লেও তা পরের তিন বছরে ক্রমাগত নিম্মমুখী। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ হাজার লিটার দুধ কমেছে। এবছর উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৫ মেট্রিক টন। সর্বশেষ ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩ লাখ ৫০ হাজার ২৬ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয়েছে যা ২০১৭ সালের তুলনায় ৩০ হাজার মেট্রিকটন কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ জেলায় বেশিরভাগ খামারি গরু মোটাতাজাকরণের দিকে ঝুঁকছে। ফলে দুধের উৎপাদন কিছুটা কমেছে।

জানা গেছে,  জেলায় হৃষ্টপুষ্ট গরু-মহিষের ১০ হাজার ৪৭৩টি খামারে দেশি গরু রয়েছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ২১৬ টি এবং শংকর জাতের ১ লাখ ২১ হাজার ৪২১ টি গরু রয়েছে। মহিষ রয়েছে ১১ হাজার ৩৪২ টি।

আরোও পড়ুন: জনবল সঙ্কটে রাজশাহী প্রাণিসম্পদ দফতর, চিকিৎসা দিচ্ছে ভুয়া ডাক্তার

এসব দুধ খামারিদের কাছ থেকে প্রাণ, প্রোভিটাসহ বিভিন্ন কোম্পানি ও স্থানীয় দুগ্ধজাতপণ্য বিক্রেতারা সংগ্রহ করে থাকেন। প্রতিলিটার দুধ স্থানভেদে ৪৫-৫০ টাকা লিটারে বিক্রি হয়। তবে খামারিদের অভিযোগ, লাখ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হলেও সরকারিভাবে বিপণন কেন্দ্র নেই। নেই কোন সহযোগিতার আশ্বাস। ফলে তারা দুধ উৎপাদন বাড়ালেও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার নিশ্চয়তা না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলে দক্ষ কর্মীর অভাবে বীজ ভালোভাবে স্থাপনে সমস্যা হচ্ছে, বীজের মান নিয়েও রয়েছে খামারি পর্যায়ে প্রশ্ন। এর বাইরে প্রথম কৃত্রিম প্রজননের ফলে গাভীর গর্ভধারণ হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন (আইএমই) বিভাগের দেওয়া প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও ভ্রমণ স্থানান্তর প্রযুক্তি প্রকল্পের (ফেজ-২) আওতায় উন্নত গাভী উৎপাদনের ফলে দুধের উৎপাদন বেড়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪০ লাখ ডোজ সিমেন উৎপাদন করা হয়। দেশব্যাপী ৯৪২টি ইউনিয়নে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করে সংকর জাতের বাছুর উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। প্রকল্পটি রাজশাহীসহ সারাদেশে পরিচালনা করা হয়।

আরোও পড়ুন: প্রণোদনা না পেলে পথে বসবেন রাজশাহীর দুগ্ধ খামারিরা

দেশীয় গরুর মান বাড়ানোর ফলে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের উৎপাদন বাড়াতে ৪৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরে ২০০৯ সালে ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে মেয়াদ নির্ধারিত থাকলেও ২০১৪ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনযায়ী, ২০১৪ সালে প্রকল্প শেষ হলেও চাহিদা ও সময়ের প্রয়োজনে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে দুধ উৎপাদন। ২০১৩-১৪ উৎপাদন বছরে সারাদেশে ৬০ দশমিক ৯২ লাখ মেট্রিকটন দুধ উৎপাদন হয়। মাত্র ৬ বছরের মাথায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুধ উৎপাদন বেড়ে হয় ১০৬ দশমিক ৮০ লাখ মেট্রিকটন।

আইএমই বিভাগের এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট ২৯ লাখ ৭৭ হাজার গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করানো হয়। এর মাধ্যমে সংকর জাতের বাছুর উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে হয় ৯ লাখ ৮২ হাজার।

প্রাণিসম্পদ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মাথাপিছু দুধ উৎপাদন ছিল দৈনিক ৪৩ দশমিক ৪৩ মিলিলিটার। সে সময় দুধের দৈনিক চাহিদা ছিল ২৫০ মিলিলিটার। কিন্তু বর্তমানে দৈনিক মাথাপিছু দুধের উৎপাদনের পরিমাণ ১৭৫ দশমিক ৬৩ মিলিলিটার।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহা. ইসমাইল হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমাদের নিয়মিত সেবাদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। খামারিদের করোনাকালে, পাশাপাশি শীতকালে নানা পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের লাইভস্টক ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এলডিডিপি) আর্থিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস রয়েছে। খুব শীঘ্রই তাদের কাছে টাকা পৌঁছে যাবে।

উল্লেখ্য, জেলায় ২৬২টি খামারে ১০ লাখ ১৮ হাজার ৪৮টি ছাগল এবং ১৯৬টি খামারে ৮৫ হাজার ৭৯৪টি ভেড়া পালন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে জেলায় ১২৭টি হাঁসের খামারে রয়েছে আট লাখ ২৪ হাজার ৭১৫টি হাঁস। মুরগি আছে ৮৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬৭৯টি। ১২২২টি খামারে আছে তিন লাখ ৭৬৬টি কবুতর।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ