মোফাজ্জল বিদ্যুৎ, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলতি বছর আউশের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবার নতুন করে রোপা আমন চাষে স্বপ্ন দেখছেন রাজশাহীর কৃষকরা। এতে কৃষকের মনে দিচ্ছে এক ভিন্ন আমেজ। মাঠে মাঠে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আউশের ক্ষতি পোষাতে এবার রোপা আমন চাষাবাদে তারা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে বৃষ্টিপাত হলেও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবারও রোপা আমনের বাম্পার ফলন হবে বলে কৃষকরা আশা করছেন

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর আউশ মৌসুমে ধানের দাম ভাল পাওয়ায় চলতি মৌসুমে কৃষকরা ধান চাষের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বিগত কয়েক বছরে একের পর এক ধান চাষ করে কৃষকগণ লোকসানে পড়ে ধান চাষ করা থেকে এক প্রকার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। বিকল্প হিসেবে কৃষি জমিতে মাছ চাষ করার জন্য পুকুর খনন, বাগান করা ও শাক-সবজি চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু আউশ ধানের দাম ভাল পাওয়ায় এই মৌসুমে রোপা আমন চাষে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন চাষিরা।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, গত বছর রাজশাহীতে ৭৪ হাজার ৯৮১ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হয়। এবার রাজশাহীতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৭৬ হাজার ৫০০ হেক্টর। তবে চলতি মৌসুমে ৭৭ হাজার ৫৭০ হেক্টর যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১ হাজার ৭০ হেক্টর বেশি জমিতে রোপা আমনের আবাদ করা হয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে সব চেয়ে রোপা আমন ধানের চাষ হচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলখ্যাত গোদাগাড়ী উপজেলায়। এখানে ২৪,৬২৫ হক্টের জমিতে চাষ হচ্ছে। এছাড়াও তানোরে ২২,৪৩৫ হেক্টর, পুঠিয়ায় ৫৮৭০ হেক্টর, পবায় ৯১৩৫ হেক্টর, মতিহারে ২০ হেক্টর, দুর্গাপুরে ৫৩৫০ হেক্টর, বাঘায় ১৩৫০ হেক্টর, চারঘাটে ৪২৩৫ হেক্টর ও বাগমারায় ৭৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে।

গোদাগাড়ী উপজেলার ধান চাষি আব্দুস সামাদ বলেন, বোরো মৌসুমে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় গত বছরের চাইতে এবার বেশি রোপা আমন আবাদ করেছি। বন্যায় এক বিঘা জমির আউশ তলিয়ে গেছে। সেই ক্ষতি পোষাতে এবার ৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন আবাদ করেছি। ধান গাছের পুষ্টতা ও পাতা দেখে ভালো ফলন হবে বলে জানান তিনি।

আরোও পড়ুন:করোনাকালেও আমনের লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ৮০০ হেক্টর

দিগন্তজোড়া মাঠজুড়ে চলছে রোপা আমন ধান রোপনের মহা উৎসব

একই উপজেলার ধান চাষি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এবার সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে রোপা আমনের আবাদ করেছি। ধানের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে ভালো ফলনের আশা করছি। তবে গত বছর আমাদের উপজেলাতে কারেন্ট পোকার সংক্রমণ দেখা গিয়েছিলো। তাতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিলো। এই পোকার সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে অগ্রিম কোন ব্যবস্থা নিলে আমরা ধানের বাম্পার ফলন পাবো ।

তানোর উপজেলার ধান চাষি গোলাম মোস্তফা বলেন, বোরো মৌসুমে ধানের দাম পেয়ে বেশি করে আউশের আবাদ করি। কি›তু বন্যায় আউশ তলিয়ে গেছে। এতে অনেক ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছি। এখন ঋণ নিয়ে আবার নতুন করে ৫ বিঘা জমিতে রোপা আমনের চাষ করেছি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক এগ্রিকেয়ার.কমকে বলেন, আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারণে রাজশাহীতে বিশেষ করে গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলাতে পোকার আক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন জায়গায় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উঠান বৈঠক ও সমাবেশ নানান পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

কারেন্ট পোকা দমনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তানোর গোদাগাড়ীর কৃষকরা কারেন্ট পোকা সম্পকে চেনেন এবং জানেন । এ ছাড়া কারেন্ট পোকা দমনের কৌশলগুলো সম্পর্কেও তারা অবহিত আছেন। এ নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি এ বছর কারেন্ট পোকাগুলো ধানের তেমন ক্ষতি করতে পারবে না। যেহেতু বৃষ্টি হচ্ছে আবহাওয়া ভালো চলতি মৌসুমে ধানের ভালো ফলন হবে আশা করছি।

 

এগ্রিকেয়ার/ এমএইচ