ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ‘এক সপ্তাহ আগে হাটত লতুন আলু বেচনো ২০ টেকা কেজিতে। আজকা মেলা কমে গেছে। একন ব্যাচা লাগিচ্চে ১০ টেকায়।’ কথাগুলো বলছিলেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম।

বগুড়ার মহাস্থান হাটে ভরা মৌসুমে সব ধরনের আলুর পাইকারি দামে ধস নেমেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন ধরনের আলুর দাম নেমেছে অর্ধেকে। হাটে আলুর আমদানি বেড়ে যাওয়াই দাম কমার কারণ বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

পড়তে পারেন: লালপুরে চাষ হচ্ছে কাজুবাদাম

বগুড়া কৃষি সম্প্সারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এবার জেলায় ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩২ লাখ ৮২ হাজার টন। আগাম লাগানো এই আলুর এবার ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে কৃষকেরা। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি আলুর দাম ১০ টাকা করে কমে গেছে। কৃষকেরা বলছেন, এখন আলু বিক্রি করে তাদের কোনো লাভ হচ্ছে না।

গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মহাস্থান হাটে গিয়ে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। হাটে আড়তসহ যেখানে-সেখানে স্তূপ করে রাখা ছিল আলুর বস্তা। ব্যাপারিরা প্রত্যাশিত দাম না বলায় বেশির ভাগ কৃষক সকালের দিকে আলু বিক্রি করেননি। তবে দুপুরের দিকে অনেকে কম দামেই বিক্রি করে বাড়ি ফেরেন।

পড়তে পারেন: দেশীর কাছে হার ভারতীয় পেঁয়াজের

কৃষক ও আড়ত-দারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগেও প্রতি মণ দেশি লাল পাকড়ি আলু ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই আলু বৃহস্পতিবার বিক্রি হয় ৪৪০ টাকায়। মহাস্থান পাইকারি মোকামে প্রতি মণ কার্ডিনাল আলু বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই হাটে প্রতি মণ কার্ডিনাল আলু বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়। প্রতি মণ সাদা গ্রানুলা আলু বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই মোকামে প্রতি মণ গ্রানুলা জাতের আলু বিক্রি হয় ৪০০ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার উৎপাদিত উন্নতমানের আলু জেলা ও দেশের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। প্রায় এক যুগ ধরে এ জেলার আলু রপ্তানি হচ্ছে এশিয়ার শ্রীলঙ্কা, নেপাল, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের সৌদিআরব, বাহরাইন, সংযুক্তআরব আমিরাতে। জেলার মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আলু উত্পাদন হয়।

পড়তে পারেন: আলুর মণ ২৪০ টাকা, বিপাকে চাষিরা

শিবগঞ্জ উপজেলার মিরেরচক গ্রামের বাসিন্দা মহাস্থান হাটের ব্যাপারি মজনু মিয়া জানান, প্রতিদিন মহাস্থান হাটে প্রচুর আলু আমদানি হচ্ছে। সেই হিসেবে পাইকার বা ব্যাপারিরা আসছেন না। এখানকার বেশির ভাগ আলু শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, সিলেট, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুরে যায়। কিন্তু বেশি শীতের কারণে ঐসব জেলার পাইকাররা আসছেন না। ফলে দাম পড়ে গেছে। শীত কমলেই আলুর দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

এ ব্যাপারে মহাস্থান হাটের সবজির পাইকারি ব্যবসায়ী এবং আড়তদার জাহিদুল ইসলাম বলেন, আলুর দাম নির্ভর করে আমদানির (সরবরাহ) ওপর। এক সপ্তাহ আগেও এই হাটে ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক আলুর আমদানি হয়েছে। এখন আমদানি বেড়ে ১০০ ট্রাকে উঠেছে। তাতে দামও কিছুটা পড়েছে। এছাড়া শৈত্যপ্রবাহ ও ঘনকুয়াশার কারণে আলুর খেতে রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণেও অনেক কৃষক খেত থেকে আলু তুলে বাজারে আনছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতেই বাজারে হঠাৎ সরবরাহ বেড়ে গিয়ে দাম নিম্নমুখী হয়েছে।

পড়তে পারেন: আগাম আলুতেও হচ্ছে না লাভ, বিপাকে চাষিরা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দুলাল হোসেন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আগাম আলুর ফলন ভালো হয়েছে। হঠাৎ করেই আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম সামান্য কমেছে। এছাড়া শীতের কারণে বাইরের জেলায় পাইকাররা না আসায় দাম কিছুটা কমেছে। তবে শীতের প্রকোপ কমলে পাইকার আসতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে সংরক্ষণের জন্য হিমাগারগুলো আলু কেনা শুরু করলে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ