পুকুরে নিয়মিত প্রোবায়োটিকস প্রয়োগ

মুহাম্মদ সালাহ উদ্দীন রাশেদ, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: লাভজনক মাছ চাষে দৈনন্দিন রুটিন কাজ ও তার গুরুত্ব (সূচনা পর্ব) নিয়ে পাঁচ পর্বের ধারাবাহিক লেখা হয়েছে। প্রিয় মাছ চাষি তথ্যবহুল এসব লেখা অনুসরণ করে মাছ চাষ করলে মিলবে শতভাগ সফলতা।

মনে রাখতে হবে পরিকল্পনা হচ্ছে এক ধরণের নীতিমালা আর ব্যবস্থাপনা হল সেই নীতিমালার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। সুন্দর পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা যে কোন কাজ বা উদ্দেশ্যকে সাফল্যের চূড়ায় যেমনি আরোহণ করাতে পারে, অপরদিকে পরিকল্পনাহীন ও ঢিলেঢালা ব্যবস্থাপনাতে যে কোন কাজ বা উদ্দেশ্যই ব্যার্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।

অন্যকথায় বলা যায়, একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর ব্যবস্থাপনা নির্ভর করে একটি সুনির্দিষ্ট ও সার্বিক পরিকল্পনার উপর। আর তাই মৎস্যচাষে ‘সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সঠিক ব্যবস্থাপনা’হচ্ছে সাফল্যের জন্য অন্যতম মৌলিক শর্ত।

বিগত প্রায় একদশক ধরে বাংলাদেশের মৎস্যচাষের সামগ্রিক সাফল্যের অন্যতম কারণ হচ্ছে দেশের চিরাচরিত (Traditional) চাষ পদ্ধতির সাথে আধুনিক (Modern) পদ্ধতির একত্রীকরণে যেই ‘Modern-Traditionalaquaculture system’, তার জনপ্রিয়তা ও চর্চা।

যাকে অনেকে ‘লাভজনক মাছ চাষ পদ্ধতি’হিসেবেও অবিহিত করেন। দেশের চিংড়ি সেক্টরে Semi-Intensive (আধা-নিবিড়) পদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরেই বানিজ্যিকভাবে সাফল্যের সাথে চলমান।

এছাড়াও Recirculatory Aquaculture System (RAS),Intensive (নিবিড়), বায়োফ্লক (Biofloc) পদ্ধতিসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক মাছ চাষ পদ্ধতির প্রচলন দিনদিন বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে।

উল্লেখিত মৎস্য চাষ পদ্ধতিগুলোর সফলতা সবচেয়ে বেশি যার উপর নির্ভর করে তা হচ্ছে, সুনির্দিষ্ট চাষ পদ্ধতির জন্য করণীয় কার্যবিধির সুদক্ষ ও সঠিক বাস্তবায়ন।

পুকুর প্রস্তুতিতে পুকুর শুকানো, চুন, জিওলাইট, উকুননাশক, লবণ, পটাশ বা জীবাণুনাশক প্রয়োগ পরবর্তি উন্নতমানের সুস্থ-সবল পোনা মজুতের পর থেকেই শুরু হয় পুকুরের প্রাত্যহিক রুটিন ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়াগুলো।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে ১. নিয়মিত পুকুরের মাটি ও পানির বিভিন্ন গুনাগুণ (Parameters) পরিমাপ করতে হবে।



২. নিয়মিত চুন বা জিওলাইট প্রয়োগ করতে হবে। ৩. পুকুরে নিয়মিত প্রোবায়োটিকস প্রয়োগ করতে হবে।

৪. নিয়মিত মাছের শারীরিক বৃদ্ধি ও দৈহিক পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এবং ৫. নিয়মিত জীবণুনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

মৎস্য চাষে লাভজনক ও ফলপ্রসূ উৎপাদন সুনিশ্চিত করতে প্রায় ৫০ ভাগই নির্ভর করে একটি সঠিক ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার উপর।

মাছের পোনার পরিচর্যা থেকে শুরু করে, খাদ্য বাবস্থাপনা, পানির বিভিন্ন গুনাগুণের মান ঠিক রাখা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা সহ হারভেস্টিং এর আগ পর্যন্ত প্রণীত দৈনন্দিন কার্য সমূহের সঠিক ও সুনিপুণ বাস্তবায়নই পারে চাষির মুখে হাসি ফোটাতে এবং এভাবেই বাংলাদেশের মৎস্য শিল্পের উন্নয়ন, মানুষের দৈনিক প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা পূরণ সহ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে মৎস্যশিল্প।

লাভজনক মাছ চাষে দৈনন্দিন রুটিন কাজ ও তার গুরুত্ব (সূচনা পর্ব) লেখাটির লেখক; মুহাম্মদ সালাহ উদ্দীন রাশেদ, এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (অ্যাকুয়া) আল-মদিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লি.।

আগামী পর্বে পড়ুন: নিয়মিত পুকুরের মাটি ও পানির বিভিন্ন গুনাগুণ (Parameters) পরিমাপ পদ্ধতি ও গুরুত্ব।

আরও পড়ুন: শীতকালে মাছের রোগ প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতিতে যা করতে হবে