মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: ২০১৪ সালে দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান আব্দুল মালেক (৩২)। করোনা মহামারিতে দেশে ফিরে শুরু করেন লেয়ার মুরগির খামার। বিনিয়োগ করেন প্রায় ৬০ লাখ টাকা। তবে এই খামারির দাবি প্রায় দু-বছরে কোন লাভের মুখ দেখেননি। এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন এই তরুন।

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার চকভোলাই গ্রামের মৃত মাদার বক্স মন্ডলের ছেলে মালেক। সাত ভাইবোনের মধ্যে পঞ্চম হলেও ব্যবসায়ী বাবার হাত নিতে চেয়েছিলেন তিনি। ২০২০ সালে দেশে ফিরে বাড়ির পাশের বাগানে তিনটি শেড করে শুরু করেন লেয়ার মুরগি পালন। ৬ হাজার লেয়ার পালনের অবকাঠামো আর আনুষাঙ্গিক খরচে ৬০ টাকা খরচ করেছেন বলে জানান মালেক।

গত ১৬ অক্টোবর সরেজমিনে তাঁর খামারে গিয়ে দেখা যায়, ৪ হাজার মুরগির দুই শেড ফাঁকা পড়ে আছে। মুরগির খাঁচায় মাকড়সা নিশ্চিন্ত মনে জাল বুনেছে। এক শেডে দুই হাজার মুরগি পুলেট অবস্থায়। দিন চল্লিশ পর থেকে উৎপাদনে আসবে এসব মুরগি। তবে, আবার নতুনভাবে খামারে বাচ্চা তোলার পরিকল্পনা করছেন। এইবার লোকসান খেলে ব্যবসা পরিবর্তন করবেন তিনি।

জানতে চাইলে আব্দুল মালেক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মালয়েশিয়াতে ৬ হাজার মুরগির খামার করেছিলাম আমরা ৬ বন্ধু মিলে। সেখানে অনেকটা সহজ; বাংলাদেশের মতো নয়। প্রতি সপ্তাহে মুরগির রোগ-বালাই চেক করে দিয়ে যেতো সরকারি কর্মকর্তারা। আবার খাবারের দিকে বিশেষ নজর ছিল-কোন চিন্তা ছিল না আমাদের। কোন ফি দিতে হতো না। মুরগির পুরো দায়িত্ব তারা নিয়ে নিতো। আর বাংলাদেশে এসে খামার করে বিপদে পড়েছি।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের অন্যান্য নিউজ পড়তে পারেন:

প্রত্যন্ত চরের সফল “শিক্ষিত খামারি” ফরহাদ রেজা

অনলাইনে মুরগি বেচে মাসে আয় ৫০ হাজার!

সোনালী মুরগির নামে আমরা কি খাচ্ছি!

তিনি বলেন, ভেবেছিলাম দেশে খাদ্যের দাম কম হবে, লাভবান হবো। এখানে সরকারি কর্মকর্তাকে ডাকলেও ১ হাজার দিতে হয়। সবকিছুর দাম বেশি। আমি যখন খামার শুরু করি তখন ১৬০০ টাকা খাদ্যের বস্তা ছিল আর সেই খাদ্য এখন ৩ হাজার টাকা। ডিম তখন বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৬ টাকা থেকে সাড়ে ৭ টাকা। আর এখন ৯ টাকা ডিম। কোন লাভ নাই। সব হিসেব কষে বছর শেষে বিনিয়োগ মাটি।

মালেক বলেন, বিদেশ থেকে ৬০ টাকা নিয়ে দেশে এসেছি। ইলেকট্রনিক সেক্টর, মুদিখানা কিংবা অন্য সেক্টরে যদি এ বিনিয়োগ করতাম তাহলে আমাকে এত হতাশ হতে হতো না। আমার টাকার হদিস নাই। পোল্ট্রি সেক্টরে আসা আমার সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে। আর একবার দেখব। না হলে সবকিছু বিক্রি করে ব্যবসা বাদ দেব।

পোল্ট্রি সেক্টরের সমস্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চোখের সামনে ১৫ জন খামারি তাদের খামার বন্ধ করে দিয়েছে। আমি লোকসান দিয়ে টিকে আছি। বড় বড় কোম্পানি চাচ্ছে যে ছোট খামারিরা ধংস হয়ে যাক তারপর তারা ইচ্ছেমতো সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে। এজন্য খাদ্য, বাচ্চা, আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের অন্যান্য নিউজ পড়তে পারেন:

ব্রয়লার খামারেই সোনালী, ঝুঁকিতে পোল্ট্রি

বাজারে লেয়ার মুরগি উধাও, হাইব্রিড সোনালীতে সয়লাব

ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালী মুরগির সর্দির লক্ষণ কারণ এবং প্রতিকার

মান্দা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বেনজির আহম্মেদ এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমরা সাধ্যমতো খামারিদের খামার পরিদর্শন করি। আমি নতুন এসেছি। বাণিজ্যিকভাবে যেসব খামার গড়ে উঠেছে তাদের বেশি অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি প্রান্তিক খামারিদের সাথেও আমরা যোগাযোগ করি। নতুনভাবে কেউ খামার করতে আগ্রহী থাকলে কিংবা গরুর খামার করতে চাইলে সরকার ৪ শতাংশ সুুদে ঋণ দিচ্ছে। সেখানেও সাপোর্ট দিয়ে থাকি।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ল্যাবরেটরি এটেনডেন্ট আতাউল হক বলেন, মালেক নামের খামারির সাথে কথা হয়। বিদেশ থেকে আসার পর তিনি খামার শুরু করেছেন। লাভের দিক দিয়ে কেমন লাভ করেছেন তা জানা নাই। পোল্ট্রির রোগ বালাই রোধ এবং খাদ্যের দাম কমালে খামারিরা লাভবান হতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ