ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলতি শীতকালে বেড়েছে শশা-খিরার কদর। বাজারে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে এ সবজি। দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় প্রায় ৪ বছর আগে থেকে শসার পাইকারি বেচাকেনা শুরু হয় নড়াইলের বিভিন্ন বাজারে। ভোরের আলো আসার আগে থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগমে মুখর হয়ে উঠে শসার বাজার। জেলার অন্তত ৩০ গ্রামের শসা বিক্রি হচ্ছে। মন প্রতি বর্তমানে ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

জানা যায়, সারা বছরই এই এলাকার অসংখ্য মৎস্য ঘেরের পাড়ে এসব শসার চাষ হয়। সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের আড়পাড়া, মির্জাপুর, রুখালী, চাকই, মধুরগাতী, আরাজি মরিচা, আকবপুর, রুন্দিয়া, আটঘরা ও মুশুড়ীসহ প্রায় ৩০ গ্রামের কৃষকেরা এসব বাজারে শসা নিয়ে আসেন।

এখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার শসা বেচাকেনা হয় বলে জানিয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। নড়াইল ছাড়াও ঢাকা,কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে শসা কিনে নিয়ে যান। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক জেলার ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে শসা কেনেন এসব বাজার থেকে। প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেকে বাজার পুরোদমে শুরু হয়ে চলে তিন থেকে চার ঘণ্টা।

দেখা যায়,বিছালী ইউনিয়নের বর্ণি মোড়বাজার, মালাধারার মোড়, চাকই চৌরাস্তা, আড়পাড়া-মির্জাপুর মোড়, বিছালী, আটঘরা,বড়াল,বনখলিশাখালী গ্রামের প্রধান সড়কের মোড়গুলো ঘিরে বসেছে বিশাল শসার বাজার। প্রতিদিন ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে সরগরম থাকে এ শসার বাজার। সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চলে পুরোদমে কেনা-বেচা। এরপর পাইকাররা ট্রাকযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে তা পাঠিয়ে থাকেন।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরো নিউজ পড়তে পারেন:

ছাদ বাগানে বস্তায় চাষ করুন শশা

শশার কেজি ৪ টাকা

কাঁচা বাজারে এসেছে স্বস্তি, সোনালী ব্রয়লারে বেড়েছে ২০ টাকা

মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষে সফল কৃষকরা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে,এ বছর জেলায় ১৭৫ হেক্টর জমিতে শসা ও ক্ষীরাই চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ২৫ হেক্টর বেশি জমিতে শসার চাষ হয়েছে। সদরের তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ গ্রামেই প্রধানত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ শসা ও ক্ষীরাই চাষ হচ্ছে। জুলাই মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত শসা লাগানোর উপযুক্ত সময়। আড়াই মাসে শসা তোলা যায়। এ শসা চলবে পুরো ডিসেম্বর মাস ও জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।বর্তমানে প্রতি সপ্তাহের তিনদিনে ২০ থেকে ৩০ ট্রাক শসা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

দেখা যায়, চারিদিকে সবুজের সমারোহ। রাস্তার পাশে বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে শুধুই সবুজে ঘেরা শসা ও ক্ষীরাই ক্ষেত। ঘেরের পাড় বা আইলে সারি সারি মাচায় ঝুলছে শসা আর শসা। এসব গ্রামে রয়েছে ছোটো বড়ো অসংখ্য মৎস্য ঘের। মাত্র কয়েক বছর আগেও এসব ঘেরের পাড়ে তেমন কোনো ফসল চাষ করা হতো না।

এখন মাছের ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে গ্রামের কৃষকদের জীবনে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী। শসা চাষ করে বেকার সমস্যার সমাধানের পথও খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। এভাবে হাজার হাজার কৃষক মাছের ঘেরের পাড়ে হাইব্রিড জাতের শসা চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ঘেরের পাড়ে উৎপাদিত শসা কেনা- বেচার জন্য গ্রামগুলোর মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠেছে শসার পাইকারি বাজার।

মির্জাপুর ও আড়পাড়া গ্রামের একাধিক শসা চাষি জানান,দুই বিঘা জমিতে শসা চাষ করতে খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। তিন মাসে শসা বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় হয়ে থাকে। পরিকল্পিতভাবে মৎস্য চাষের পাশাপাশি পরিচর্যা করলে শসা চাষে অধিক লাভ পাওয়া যায় বলে তারা জানান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নড়াইলের উপ-পরিচালক দীপক রায় এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, নড়াইল জেলার অনেক জায়াগায় মাছ চাষ হয়। পুকুরের পাড় সাথে মাছের ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করছেন অনেকে। ঘেরের পাড়ে তুলনামূলক কম খরচে শসা চাষ করা যায়। আমরা বিভিন্ন পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা দিই। শীতে বেড়েছে শশা-খিরার কদর, ১৫০০ টাকা মণ বিক্রি সংবাদের তথ্য বাসস থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ