প্রায় দেড় যুগের বেশি সময় ধরে পোল্ট্রি ও মৎস্য শিল্পে খামারিদের পাশে থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ডা. মো. মুসা কালিমুল্লাহ।

দেশের অন্যতম বৃহৎ কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান নারিশ পোল্ট্রি এ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেড এ সিনিয়র এজিএম (সেলস এ্যান্ড সার্ভিস) পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নিজের দক্ষতায় কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিভিএম পাশ করা ডা. মো. মুসা কালিমুল্লাহ খামারিদের স্বার্থে কাজ করার ব্রুত নিয়ে পোল্ট্রি শিল্পে পথ চলা শুরু করেন।

দেশের পোল্ট্রি শিল্পের কাস্টমার সার্ভিস, শিল্পটির সার্বিক অবস্থা ও নারিশ এর বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেছেন এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর সাথে। তারই চুম্বুক অংশ তুলে ধরা হলো। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর সিনিয়র প্রতিবেদক আবু খালিদ।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: খামারির কাছে কাষ্টমার সার্ভিস সেবাটি পৌঁছানোর গুরুত্ব কতটুকু?

ডা. মো. মুসা কালিমুল্লাহ: দেখুন খামারী হলো পোল্ট্রি শিল্পের মূল ভিত্তি। তারা যদি পোল্ট্রি সম্পর্কে না বুঝে, তাহলে কোন দিনই পোল্ট্রি শিল্প উন্নত হবে না। আর খামারিদের প্রশিক্ষিত করে তোলার পাশাপাশি সরাসরি সেবার অন্যতম মাধ্যম হলো কাস্টমার সার্ভিস। সুতারাং এর গুরুত্ব অনেক বেশি।

আমাদের দেশে কাস্টমার সার্ভিস সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন কাষ্টমার সার্ভিস বলতে ডাক্তার আসবে, দেখবে ট্রিটমেন্ট দিবে, চলে যাবে। আসলে এই পদ্ধতিতে পোল্ট্রি শিল্প কখনোই উন্নত হবে না। আমাদের কিছু পরিবর্তন করতে হবে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নারিশ এর কাস্টমার সার্ভিস সেবা সম্পর্কে কিছু বলবেন।

ডা. মো. মুসা কালিমুল্লাহ: খামারিকে হাতে কলমে শেখানোর মাধ্যমে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা কাস্টমার সার্ভিস বিভাগকে ডেভেলপ করেছি। পকেট সেমিনারের মাধ্যমে খামারির কাছে সেবা পৌঁছে দেই। ৮ থেকে ১০জন খামারীকে নিয়ে উঠোন বৈঠকের মত হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

খামার ব্যবস্থাপনা নিয়ে খামারিদের সাথে বসে আলোচনার পর তাদের কী কৌশল গ্রহণ করতে হবে সেসব বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

যেসব বিষয় গুরুত্বসহকারে খামারিদের কাছে তুলে ধরা হয় সেগুলোর মধ্য অন্যতম হলো কীভাবে কম ওষুধ ব্যবহার করে মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়, জীবাণু মুক্ত পানি সরবরাহের গুরুত্ব, লেয়ার ফার্মে বায়োসিকিউরিটির প্রয়োজনীয়তা, রোগ বালাই আক্রমণ যেন না হয় তা নিয়ে সতর্কতামূলক দিকনির্দেশনা।

মোটকথা সঠিক ব্যবস্থাপনায় খামার পরিচালনার জন্যে দরকারী সব ধরণের তথ্য ও সেবা খামারিদের দিয়ে যাচ্ছে নারিশ।

আমাদের এখানে প্রায় ৭০ জনের মতো প্রাণি চিকিৎসক রয়েছেন যারা প্রত্যেক মাসে এসব বিষয়ের ওপর পকেট সেমিনারের মাধ্যমে টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। এগুলো কিন্তু শুধু খামারিদের স্বার্থেই করা হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম:  পোল্ট্রি শিল্পে খামারিদের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু বলবেন।

ডা. মো. মুসা কালিমুল্লাহ: নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও পোল্ট্রি শিল্প টিকিয়ে রাখার অন্যতম মূল ভূমিকা পালন করছেন খামারিরা। সুতারাং এদের গুরুত্ব অনেক বেশি।

মনে রাখতে হবে পৃথিবীর অন্যসব দেশগুলোতে পোল্ট্রি শিল্প শিল্পপতিদের হাতে। আমাদের পোল্ট্রি শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে খামারিদের মাধ্যমে। সুতরাং  খামারিদের সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।

খামারিদের যদি প্রশিক্ষিত করে না তুলতে পারি তাহলে এই শিল্প কোনভাবেই সামনের দিকে আগাবে না। খামারিদের যদি লাভবান করতে না পারি তাহলে এই শিল্প কোনভাবেই টিকে থাকবে না।

কিন্তু দু:খের বিষয় হলো আমাদের দেশে অধিকাংশ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান খামারিদের কথা তেমন গুরুত্বসহকারে আমলে নেয় না। প্রায় সবারই মূল উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ে কীভাবে মুনাফা করবে।

যে খামারীকে নিয়ে ব্যবসা করছে ব্যবসায়ীরা, সে খামারী পোল্ট্রি সম্পর্কে কতটুকু জানে, কতটুকু লাভবান হচ্ছে, এসব চিন্তা কখনোই কেউ করে না।  অথচ পোল্ট্রি শিল্পের স্বার্থেই খামারিদের টিকিয়ে রাখা উচিত। নইলে  খামারী থেকে শিল্পটা শিল্পপতির হাতে চলে যাবে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: খামারিদের নিয়ে নারিশ এর কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু বলবেন।

ডা. মো. মুসা কালিমুল্লাহ: নারিশ শুরু থেকেই খামারিদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সব সময় নতুন নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা দেয়া হচ্ছে।

এরমধ্যে অন্যতম হলো ২০১৭ সাল থেকে ‘ফার্মার ফাস্ট’নামের ক্যাম্পেইন। আমরা মনে করি খামারি লাভবান হলেই এ শিল্প টিকবে।

যেসব খামারিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলছি তারা যদি আমাদের নির্দেশনা মতো খামার পরিচালনা করে লোকসানে পরে তাহলে আমরা তাদের পাশে থাকবে। কারণ তারা আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জানছে, শিখছে। আমরা তাদের বিভিন্নভাবে পুরুস্কার ও উপহার দিবো।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নারিশে কাজের পরিবেশ সম্পর্কে কিছু বলবেন।

ডা. মো. মুসা কালিমুল্লাহ: নারিশে শতভাগ কর্মীবান্ধব কাজের পরিবেশ রয়েছে। আমরা সবাই একে অপরের কথা বোঝার চেষ্টা করি। বন্ধুভাবাপন্নভাবে মিশি ও চলি।

যখন কোন সিদ্ধান্ত নেই তাতে সবার অংশগ্রহণ থাকে। এখানে জিএম ও ডিজিএম স্যার সবার কথা অনেক গুরুত্ব সহকারে শোনেন। প্রতিষ্ঠানটি অনেক বেশি কর্মী বান্ধব হওয়ার কারণেই কিন্তু এতো বেশি সফলতা মিলছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: অনেক সময়ে শোনা যায় যে প্রাণিসম্পদে সঠিক চিকিৎসা ব্যহত হচ্ছে, আসলে দেশের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত প্রাণি চিকিৎসক রয়েছে কী?

ডা. মো. মুসা কালিমুল্লাহ: এটা ঠিক দেশের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত প্রাণি চিকিৎসক নেই। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যে পরিমাণ চিকিৎসক থাকার কথা সেটাও নাই। এ শিল্পের মান বৃদ্ধিতে প্রাণি চিকিৎসকের বৃদ্ধি করার বিকল্প নেই। এদিকেও নজর দিতে হবে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি, আপনার পড়াশোনা ও নারিশ এর সাথে পথ চলা নিয়ে কিছু বলবেন।

ডা. মো. মুসা কালিমুল্লাহ: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ  থেকে ভেটেরোনারি অনুষদ থেকে ডিভিএম ডিগ্রি অর্জন করি ২০০০ সালে।  এরপর পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন শুরু।

২০০৩ সালে নারিশে যোগদান করি। শুরুতে নারিশে কাস্টমার সার্ভিস অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করি। তবে এখন কাজের পরিধি বাড়লেও পদবীতে কাস্টমার সার্ভিস নামটা রয়েই গেছে। এখন সেলস ও সার্ভিস উভয়ই দেখতে হয়।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম:  পোল্ট্রি শিল্পে পথ চলা নিয়ে নিজের অনুভূতি শেয়ার করবেন।

ডা. মো. মুসা কালিমুল্লাহ: আমি সব সময় চাই কোন মান সম্মত একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার মধ্য দিয়ে পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে অংশীদার হতে।

শুরু থেকেই খামারিদের স্বার্থে কাজ করার ইচ্ছে ছিলো প্রবল। খামারিদের পাশে থেকে নানাভাবে তাদের সহযোগিতা করতে পারছি, এটিই অনেক বড় পাওয়া। খামারিদের স্বার্থে আরও কাজ করতে চাই।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আপনাকে ধন্যবাদ।

ডা. মো. মুসা কালিমুল্লাহ: আপনাকেও ধন্যবাদ।