অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ইউক্রেনের তিনটি সমুদ্রবন্দরে সাতটি জাহাজে খাদ্য লোড করা শুরু হয়েছে। যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে ৬৬ হাজার ৫০০ টন গম, ভুট্টা এবং সূর্যমুখী তেল সরবরাহ করবে। আজ শনিবার ইউক্রেনের সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য জানিয়েছে।

তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেনের চোরনোমর্স্ক বন্দর থেকে শস্যবাহী আরও দুটি জাহাজ ছেড়ে গেছে। জুমরুত আনা এবং এমভি ওশান এস নামের জাহাজ দুটিতে যথাক্রমে ৬ হাজার ৩০০ টন সূর্যমুখী তেল এবং ২৫ হাজার টন গম রয়েছে।

এর আগে জাতিসংঘের সমঝোতায় শস্য রপ্তানি চুক্তির অধীনে ইউক্রেনের ব্ল্যাক সাগর বন্দর থেকে মোট ২৭টি জাহাজ ছেড়ে যায়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় এসব খাবার ফ্রান্স, সুদান, তুরস্ক এবং নেদারল্যান্ডে পৌঁছে দেয়া হবে। ইউক্রেনের অবকাঠামো মন্ত্রী ওলেক্সান্ডার কুব্রাকভ বলেছেন, ইউক্রেনীয় কৃষ্ন সাগর বন্দরে আরও ১০টি পণ্যবাহী জাহাজে শস্য বোঝাই করা হচ্ছে এবং চালানের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের তিনটি বন্দর থেকে ২৫টি জাহাজ পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে ৬ লাখ ৩০ হাজার টন কৃষি পণ্য রয়েছে।

পড়তে পারেন: গম কিনতে ৫৩০ কোটি ইউয়ান ঋণ দিচ্ছে চীনা কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক

এর আগে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি কমে যায়। কারণ রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ রুট কৃষ্ন সাগর বন্দরগুলি বন্ধ ছিল। এর ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম বেড়ে যায় এবং আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হয়। এমন অবস্থায় জুলাইয়ের শেষের দিকে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় মস্কো এবং কিয়েভের মধ্যে একটি চুক্তির অধীনে তিনটি কৃষ্ন সাগর বন্দর অবরোধ মুক্ত করা হয়।

এদিকে রাশিয়া থেকে প্রাথমিকভাবে তিন লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ। এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)।

পড়তে পারেন: রাশিয়া থেকে ৩ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করবে বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সান্ডার ভিকেনতেভিচ মান্টিটস্কির সাক্ষাৎকালে দুই দেশ এ বিষয়ে সম্মত হয়।

সচিবালয়ে সাক্ষাৎকালে তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও গম আমদানি-রপ্তানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। এ সম্পর্ক বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্গঠনে রাশিয়ার সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।

পড়তে পারেন: ০ বছরের সর্বনিম্নে নামতে পারে গমের বৈশ্বিক ব্যবহার

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে রাশিয়া ভূমিকা রাখতে আগ্রহী। তিনি বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় গম রপ্তানির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেনসহ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

দেশীয় বাজারে গমের চাহিদা বেশি। মানুষের পাশাপাশি গোখাদ্য, মাছ ও হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবেও ব্যবহার বাড়ছে গমের। ফলে বছরের ব্যবধানে গমের আমদানি বেড়েছে ৫ গুণ।

পড়তে পারেন: গমের কেজিতে বাড়লো ৮ টাকা

২০২১-২২ অর্থবছর ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গম আমদানি আগের বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়েছে। ব্যবসায়ী ও মিলাররা বলছেন, দেশীয় বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় আমদানিতে এ উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে।

ভোমরা শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব শাখা থেকে জানা গিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-জুন পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে গম আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭০২ টন, যার মূল্য ১ হাজার ৫৭২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আগের অর্থবছর এ বন্দর দিয়ে গম আমদানি হয় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৭৩ টন, যার মূল্য ৪৮৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে আমদানি বেড়েছে পাঁচ গুণ।

পড়তে পারেন: ভারত থেকে ঢুকছে গম, কমেছে দাম

ভোমরা স্থলবন্দরের গম আমদানিকারক হারু ঘোষ জানান, দেশীয় বাজারে গমের চাহিদা বেশি। মানুষের পাশাপাশি গোখাদ্য, মাছ ও হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবেও ব্যবহার বাড়ছে গমের। ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার কারণে পণ্যটির দাম বেড়েছে। গত বছরের এ সময় প্রতি কেজি গম ২৬-২৭ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এ বছর তা বেড়ে ৩৬-৩৭ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত কাস্টমসের বিভাগীয় সহকারী কমিশনার আমীর মামুন জানন, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে গম আমদানি বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু পণ্যটি আমদানি করলে সরকারের কোনো রাজস্ব আসে না। কৃষিপণ্য হিসেবে এটি শুল্কমুক্ত।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ