মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সেচ খরচ বাঁচাতে ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন রাজশাহীর চাষিরা। জেলায় গত তিন বছরে বোরো আবাদ কমেছে, অপরদিকে বেড়েছে ভুট্টা চাষ। ফলন বেশি ও খরচ কম হওয়ায় ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

বরেন্দ্র অঞ্চলে ক্রমাগত ভূ-গর্ভস্থ পানির পরিমাণ কমতে থাকায় বাড়ছে নতুন জাতের ফসল চাষ। কৃষি বিভাগ থেকে যেসব ফসলে পানির পরিমাণ কম লাগে এমন ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে দু-একবার সেঁচ দিয়ে ভুট্টা ঘরে তোলা যায়, পরিশ্রম ও তুলনামূলক লাভ বেশি এমন ফসল চাষে আগ্রহ কৃষকদের। এরই ধারাবাহিকতায় বাড়ছে ড্রাগণ চাষ, এভোকাডো, মাল্টা, পেয়ারা, চায়না লেবুসহ বিভিন্ন ফলের চাষ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬৯ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে বোরো এবং ১৫ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছিল। ২০১৯-২০ সালে বোরো চাষ হয় ৬৬ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে। মাত্র ৩ বছরের মাথায় বোরো চাষের জমি কমে যায় ৩ হাজার হেক্টর। অপরদিকে ২০১৯-২০ সালে সেই আবাদ বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টরে। আর চলতি বছর ২০ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

চলতি রবি ২০২০-২১ মৌসুমে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। যা এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমিতে রোপন শেষ হয়েছে।আগামী খরিপ-১ মৌসুমে ভুট্টা চাষে ঝুঁকবেন চাষিরা এমনটিই বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। জেলায় সবচেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ করা হয় বাগমারা ও গোদাগাড়ী উপজেলায়।

আরোও পড়ুন: ৮০০ থেকে শুকালেই দাম বেড়ে ৫ হাজার টাকা!

চলতি অর্থবছরেও বোরো ধান চাষের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা ২০১৭ সালের তুলনায় ১ হাজার ১৫ হেক্টর জমি কম।তবে বোরো চাষের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা নিয়ে শঙ্কার কারণ নেই। চলতি বছরে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বোরো চাষের কমবেশি হয় মূলত দাম কমা বাড়ার কারণে। যে বছর ধানের দাম বেশি থাকে সে বছরে ধান চাষ বেড়ে যায়। গত মৌসুমে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এবার ধান চাষে বেশ আগ্রহ রয়েছে চাষিদের।

পবা উপজেলার বাতাসমোল্লা এলাকার কৃষক মিলন উদ্দিন (৩৮) এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “এ বছর বাড়িতে খাওয়ার জন্য দেড় বিঘা জমিতে বোরো লাগিয়েছেন। আর ২ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছেন। ভুট্টাতে সেচ খরচ কম লাগে। দাম ভালো পাওয়া যায়, লাভও বেশি হয়। আলু তুলে জমিতে ভুট্টা লাগালে খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। খরচ করতে হয় না।”

আরোও পড়ুন: দিশেহারা মাছচাষিরা, প্রতি কেজিতে উধাও ৫০-৮০ টাকা

বাগমারা উপজেলার সোনাডাঙ্গা এলাকার কৃষক মোতাহার এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “ধান চাষে লাভ বলতে খুব একটা নেই। গরুকে খাওয়ানোর খড় পাওয়া যায়। ধান কিনে খেতে হয়। ধানের দাম ১২’শ টাকা মণ থাকলে লাভ হয়। ধানের খরচের তুলনায় ভুট্টার খরচ একেবারে নেই বললেই চলে।” অনেকে ধানের পরিবর্তে আদা, বেগুন, মরিচসহ সবজিজাতীয় ফসল বিশেষ করে ভুট্টার আবাদের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকেরা।

জেলার বাগমারা, পবা, গোদাগাড়ী এলাকার একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বোরো চাষে ১২০ দিন পর্যন্ত নিবিড় পরিচর্যা করতে হয়। অন্যদিকে ভুট্টা চাষে তেমন পরিশ্রমের বালাই থাকে না। জেলার বেশিরভাগ কৃষক আলুর জমিতে ভুট্টা চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন। এতে চাষ ছাড়াই ভুট্টা বীজ রোপন করা যায়। মাত্র ৩ সেচ দিলেই এ অঞ্চলে ভুট্টা চাষ করা যায়। দামের দিক দিয়ে ভুট্টাকেই বেছে নিচ্ছেন অনেক চাষি।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামছুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে অগভীর নলকূপের সাহায্যে সেচ কাজ পরিচালনা করতে হয়। পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ার কারণে ধান চাষে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। কম সেচে যেসব ফসল হয় সেসব চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে ভুট্টা, মাল্টা, পেয়ারা, মরিচসহ সবজি জাতীয় ফসল চাষ বেশি হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, রাজশাহীতে খরিপ-১ মৌসুমে আলু তোলার পর বেশি ভুট্টা চাষ হয়। এখানকার চাষকৃত ভুট্টার সব হাইব্রিড জাতের। কোহিনুর, কাবেরী, এনকে-৪০ এই জাতসহ বিভিন্ন জাতের ভুট্টা চাষ হচ্ছে। নিয়মিত কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। মাঠে সরাসরি তদারকি করা হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ