মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সারাদেশে কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদন, বিপণন-বিক্রিতে উল্লেখযোগ্য জায়গা দখল করে আছে রাজশাহী। বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছরে মাছের দামে দিশেহারা এখানকার মাছচাষিরা। প্রতিকেজি মাছে নাই হয়ে গেছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চাহিদার চেয়ে যোগান বেশি। পর্যাপ্ত ক্রেতা না থাকায় স্থানীয় বাজারগুলোতেও কাঙ্খিত দামে বিক্রি হচ্ছে না কার্পজাতীয় মাছ। একদিকে অক্সিজেন স্বল্পতায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা, অন্যদিকে বাড়তি খরচে পুকুরে অতিরিক্ত মাছ মজুদ করতেও পারছেন না চাষিরা। ফলে লোকসান দিয়েই মাছ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

রাজশাহী জেলা মৎস্য সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলায় মৎস্য উৎপাদন ও বিপণন-বিক্রির সঙ্গে জড়িত জেলার প্রায় ৯ লাখ মানুষ। বর্তমানে মাছ উৎপাদন হয় ৮২ হাজার ৫৪৫ মেট্রিন টন। বার্ষিক মাছের চাহিদা ৫২ হাজার ৬৩ মেট্রিক টন। ফলে উদ্বৃত্ত থাকে ২৮ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২০ সালে মাছের উদ্বৃত্ত প্রায় আড়াই গুণ। সেইসাথে মোট জলাশয়ের সংখ্যা তিন ৪৮ হাজার ৪২৭টি থেকে বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৫১৫টিতে। বাড়তি উৎপাদিত রুই, কাতলা, ম্রিগেল, গ্রাসকার্প, ব্লাডকার্প, সিলভারসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছ কৌশলে ট্রাকে করে কয়েকবার পানি বদলিয়ে পৌঁছে যায় ঢাকার বিভিন্ন বাজারে।

আরোও পড়ুন: ঘুরে দাঁড়িয়েছেন রাজশাহীর ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিরা

রাজশাহীতে উৎপাদিত মাছের কার্প জাতীয় মাছ প্রায় ৮৫ শতাংশ। এছাড়াও কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদনে শীর্ষে থাকা রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন প্রায় ১৫০ ট্রাক মাছ রপ্তানি হয়ে থাকে। বর্তমানে ঢাকায় মাছের চাহিদা না থাকায় মার খাচ্ছেন এখানকার চাষিরা।

রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, মিরপুর-১০, মিরপুর-৬ এলাকার মৎস্য আড়তগুলোতে বিক্রি হয় রাজশাহীর মাছ।
মিরপুর-১০ এলাকার মানিক এন্টারপ্রাইজের মালিক মানিক হোসেন বলেন, “বাজারে চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশি। আবার শীতকালে মাছের লেজ-পাখনা পচা রোগ বেশি হয়। ফলে অনেক চাষি শীতের তীব্রতার সাথে সাথে মাছ বিক্রি করতে থাকেন। বেড়ে যায় মাছের আমদানি, কমে যায় দাম। আবার পুকুর-পুশকুনি শুকিয়ে যাওয়ার জন্য সব মাছ বাজাওে আসছে। আগামীতে মাছের দাম বাড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই।”

জেলার পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব হোসেন। প্রায় দুই যুগ ধরে মাছ চাষ করছেন। ছোট বড় মিলিয়ে তাঁর পুকুর সংখ্যা ২১ টি। যার আয়তন ২৫০ বিঘা ছাড়িয়ে। প্রতিবছর এসব পুকুর থেকে আয় হয় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু এবার লাভের জায়গায় লোকসান গুনছেন তিনি।

আরোও পড়ুন: রাজশাহীতে মিশ্র পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষে অপার সম্ভাবনা

এই মাছচাষি বলেন, গত বছরে ৩-৪ কেজি ওজনের রুই বিক্রি করেছি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এবার কেজিতে নাই হয়ে গেছে ৪০-৫০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা, ২৯০ টাকায়। ৫-৬ কেজির গ্রাস কার্প গতবছর এ সময়ে বিক্রি করেছি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি। এবার ২১০-২২০ টাকা কেজি কিনতে গড়িমসি করছেন পাইকারররা। গতবছর ৬-৭ কেজি ওজনের কাতল বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, এবার ৩০০-৩২০ টাকা কেজি। ১০ কেজি ওজনের কাতল গতবারে বিক্রি করেছি ৫০০ টাকা এবার সেই কাতল ৪০০-৩৯০ টাকা কেজি। কেজিতে লোকসান নব্বই-একশ টাকা। এক চালানেই ৫০ হাজার টাকা কম।

একই কথা বলেন পারিলা এলাকার মাছচাষি আইনাল হক, শফিকুল ইসলামসহ অনেকে। আইনাল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “জাল-দড়ি, বিষ, কামলার দাম সবকিছুই বেশি কিন্তু মাছের দাম কম। ছোট ভাই মাছ ধরতে নেমে উঠে গেলো, গাড়ি ফেরৎ দিলো। এভাবে চলতে থাকলে মোটা অংকের লোকসান হবে। আমাদের দেখার কেউ নাই, খাদ্যের দাম বাড়ছে, ঔষুধের দাম বাড়ছে কিন্তু মাছের দাম কেন বাড়ছে না বোধগম্য নয়।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মাছের দাম কমার কারণ মূলত আমদানি বেশি। করোনা ভাইরাসের শুরু থেকেই মাছের দাম কম। এসময় ছোট পুকুর, খাল শুকিয়ে মাছ ধরছে মাছচাষিরা। শীতকালে মাছের গায়ে ঘা হয় কিন্তু রাজশাহীতে এধরণের খবর পাওয়া যায়নি। চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ