নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বর্তমানে রাজশাহীর বাজারগুলোতে ডিমের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। আসন্ন নতুন বছর ২০২৩ সালে প্রতিকেজি মুরগির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন পোল্ট্রি সংশ্লিষ্টরা।

গত তিন মাসে মুরগির দামে ব্যাপক উঠানামা হয়েছে। মুরগির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, মাংস উৎপাদনে ফিরেছেন খামারিরা, তবে তা খুব অল্প সংখ্যক। খাদ্যের দাম বাড়তি হওয়ায় কমে গেছে মুরগির খামার। হতাশ খামারিরা নতুন বাচ্চা খামারে না তুলে বন্ধ রেখেছেন। এছাড়া নতুন বছরে চাহিদা বাড়বে। সবমিলিয়ে মুরগির দাম বাড়ার আশ্বাস দিচ্ছেন খামারি ও পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট নেতারা।

রাজশাহী পোল্ট্রি এসোসিয়েশন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানিয়েছেন, মুরগির দাম বাড়তি থাকায় মাংস উৎপাদনের দিকে যেমন, ব্রয়লার, সোনালি, কক এসব মুরগির বাচ্চা আবারো খামারে তুলতে শুরু করেছেন খামারিরা। আগামীতে যে সংকটের কথা বলা হচ্ছে তাতে খাদ্যের দামের সাথে মুরগির দামও বাড়বে। বাজারে এখন যে দামে মুরগি বিক্রি হচ্ছে তারচেয়ে অন্তত ২০ টাকা বেশি দামে মুরগি বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গতকাল শনিবার (১০ ডিসেম্বর ২০২২) বিকেলে রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকার খুচরা ও পাইকারী দোকান ঘুরে দেখা গেছে,  ব্রয়লার মুরগির দাম এক সপ্তাহ আগের তুলনায় প্রতিকেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। খামারি পর্যায়ে ১১০-১১৫ টাকা দাম হলেও তা খুচরা বাজারে এসে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যদিও এ মুরগি ১৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

ডিম মুরগির দাম বাড়ার আসল কারণ!

সাত দিনে ৪ বার ডিম মুরগির দামে উঠানামা, ব্যবসায়ীর পোয়াবারো!

ডিমের দামে সর্বস্বান্ত লেয়ার মুরগির খামারিরা

থমকে আছে ডিমে, কেজিতে ৩০ টাকা বাড়তে পারে মুরগির দাম

মুরগি দোকানদার মিঠু হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, পোল্ট্রি মুরগি ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। কিন্তু দাম কমেছে এ সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ এবং সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজিতে। অথচ মুরগির দামে খামারির লাভ হচ্ছে না।

মাস খানেক আগের বাজারের তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে সোনালি ২৯০ টাকা, কক মুরগি ২৮০ টাকা, হাঁস ৩৫০ টাকা, রাজহাঁস ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। এখন কেজিতে ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা নাই হয়ে গেছে।

একই বাজারের ফাহিম ডিম ভান্ডারের মালিক মাসুদরানা এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ডিমের দামে খামারিরা লাভবান হচ্ছেন কিনা তা বলা যাবে না। খাবারের দাম বেশি থাকলে লাভ কিছুটা কম হয়। লাল ডিম পাইকারিতে হালি ৪৪ টাকা টাকা আর সাদা ডিম ৪২ টাকা দরে বিক্রি করেছি। ডিমে দাম কমে গিয়ে আবার স্থিতিশীল হয়েছে। ‍এখন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকা হালি এবং সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকা।

রাজশাহীর পবা উপজেলার পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তা মুজিবুর রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মূলত প্রান্তিক এক হাজার-দু-হাজার মুরগির খামারিরা ধ্বংশ হয়ে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে যেসব মুরগি ও ডিমের উৎপাদন হচ্ছে তা বাজারে আসলে দাম কমার আশঙ্কা রয়েছে। আবার নতুন বছরে দাম বাড়বে বলে নেতারা বলছে।

খাদ্যের দামে উৎপাদিত মুরগির ডিমের দাম তুলনামূলক ঠিক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৪-৫ দফায় পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়ে এখন আকাশচুম্বী। ১৮’শ টাকার খাদ্যের বস্তা এখন ৩৪’শ টাকা। সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই।

জানতে চাইলে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রাজশাহীতে করোনায় ৮০ ভাগ খামার বন্ধ। মাঝখানে উৎপাদন খরচ আরো বেড়ে গেলো, কারণ ভুট্টা, সয়াবিন মিল, প্রোটিনের দাম বেড়েছে। রেডি মুরগির দাম কমায় খামারিরা আরো বিপাকে পড়েছে। ডিম মুরগির দাম বাড়ছে আবার পাল্লা দিয়ে খাদ্যের দামও বাড়ছে। লাভের পরিমাণ কিন্তু আগের চেয়ে কমে গেছে।

নতুন বছরে আশার আলো দেখবে কিনা্ জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন বছরে ডিম-মুরগির দাম বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। আর দাম না বাড়লে খামারিদের চলা মুসকিল হয়ে যাবে। জারে এখন যে দামে মুরগি বিক্রি হচ্ছে তারচেয়ে অন্তত ২০ টাকা বেশি দামে মুরগি বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ