নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশে পোল্ট্রি খাতে যেন ক্ষরা চলছে। ডিম-মুরগির দামে উঠানামায় নাজেহাল খামারিরা। চলতি বছরে কয়েক দফায় খাদ্যের দাম বেড়েছে। ফলে উৎপাদন খরচের সাথে কিছুতেই পোল্ট্রিপণ্যের দামের হিসাব মেলাতে পারছেন না খামারিরা। শুধুমাত্র নভেম্বরের শুরুর ৭ দিনে ৪ বার ডিম-মুরগির দাম উঠানামা হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও খামারিরা লাভের মুখ দেখতে পান না। আতঙ্কগ্রস্ত খামারিরা বাজার স্থিতিশীল রাখার দাবি জানিয়েছেন পোল্ট্রি সংশ্লিষ্টদের প্রতি।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ (বি.পি.কে.আর.জে.পি) এবং পোল্ট্রি প্রফেশনাল’স বাংলাদেশ(পিপিবি) প্রতিদিনের ডিম, মুরগি ও বাচ্চার দাম প্রকাশ করে থাকে। প্রকাশিত বাজারদর বিশ্লেষণ করে দেখা যায় পহেলা নভেম্বর ঢাকার গাজীপুরে লাল(বাদামী)ডিম ৯.৮০ এবং সাদা ডিম ৯.৬০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। সেইসাথে ব্রয়লার মুরগী ১৩৮ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।

এরপর ৫ নভেম্বর দাম প্রতি ডিমে ১০ পয়সা বেড়ে লাল(বাদামী) ডিম ৯.৯০, সাদা ডিম ৯.৬০, ব্রয়লার মুরগী ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে আরো দুবার দাম কমে গতকাল ৮ নভেম্বর লাল(বাদামী)ডিম ৯.৫০, সাদা ডিম ৯.৪০ এবং ব্রয়লার মুরগী ১৩৬ টাকা কেজি নির্ধারণ হয়। মূলত ডিম মুরগির দামে উঠানামা শুধুমাত্র রাজধানীতে এমন নয়; সারাদেশের বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে প্রতিটি স্থানে উঠানামা করছে ডিম মুরগির দাম।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

চাকরি ছেড়ে লেয়ার মুরগিতে বাজিমাত ইরাক ফেরত ফারুকের

শীতকালে লেয়ার গ্রোয়ার পালনে সতর্কতা ও নিয়মাবলী; পর্ব ১

শীতের সময়ে লেয়ার গ্রোয়ার পালনে ভ্যাক্সিন সিডিউল; পর্ব-৩

শীতকালে পুকুরের মাছ ও পানির ১০ সমস্যার সমাধান জানুন

দেশের আরেকটি পোল্ট্রি পণ্যের বৃহৎ স্থান চট্টগ্রাম। পহেলা নভেম্বর চট্টগ্রামে লাল(বাদামী) ডিম ১০.৫০, সাদা ব্রয়লার মুরগী ১৪০ টাকা,  কালবার্ড লাল ২৬০ টাকা, সোনালী মুরগী ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ ৩ তারিখে ও ৫ তারিখে দামে তারতম্যে লাল(বাদামী) ডিম ১০.২০, ব্রয়লার মুরগী ১৪২ টাকা এবং কেজিতে ১০ টাকা কমে কালবার্ড লাল ২৫০ টাকা ও সোনালী মুরগী ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এরপর সর্বশেষ গতকাল ৮ নভেম্বর ব্রয়লার মুরগী ১৪০ টাকা, কালবার্ড লাল ২৪৫ টাকা ও  সোনালী মুরগী ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। শুধু ঢাকা –চট্টগ্রাম নয়, রাজশাহী, বগুড়া, খুলনাসহ সব জায়াগায় ডিম-মুরগির দামে উঠানামা হয়েছে।

ডিম মুরগির দাম উঠানার প্রভাব বিষয়ে জানতে চাইলে খামারিরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখান। রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলার কিসমাড়িয়া এলাকার পোল্ট্রি খামারি আব্দুল মোমেন। যিনি গত তিন দশক ধরে পোল্ট্রি পালনের সাথে যুক্ত আছেন। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ডিম মুরগির দামে যে উঠানামা তাতে অনেক খামারি ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। আমার এলাকার ৬০ ভাগ খামার এখন বন্ধ। ডিমের দাম কিংবা মুরগির দাম উঠানামা হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় ব্যবসায়ীরা। কারণ, রাতে দাম কমে গেলে কম রেটে তারা কিনতে পারেন। ফলে ভোক্তাদের কাছে আগের বেশি দামেই বিক্রি করেন। ফলে লাভ হয় বেশি। আবার দাম বেড়ে গেলে দাম বাড়িয়ে দেন তাতে কোন সমস্যা হয়না। যদি কখনো কমায় তাহলে ৩ গুণ বাড়িয়ে ১ গুণ কমায়।

আরেক খামারি শামীম হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বাজারে ডিমের দাম বেশি কিন্তু খামারিদের কাছে কম দাম। গতকাল লাল ডিম ৯ টাকা দরে বিক্রি করেছি, সাদা ডিম ৮ টাকা ৮০ পয়সা। কিন্তু বাজারে ৪২ টাকা সাদা ডিম আর লাল ডিম ৪৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আমাদের কাছে দামের উঠানামা বুঝতে পারলেও ভোক্তারা কিন্তু বুঝতে পারেন না। কারণ হলো খুব জলদি ডিম মুরগির দাম উঠানামা হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

ডিম-মুরগির দাম নির্ধারণ করে কারা, কেন ধরা খায় খামারিরা?

ডিম মুরগির দাম বাড়ার আসল কারণ!

জানুন দেশি মুরগির সঠিক পালন পদ্ধতি, মরবেনা একটিও

এক কেজি মুরগির দাম ৪৫০ টাকা!

এদিকে ডিম-মুরগির দাম উঠানামার কথা স্বীকার করলেও কারসাজির কথা মানতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। ডিম ব্যবসায়ী শামীম হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমরা ডিমের দাম কমলে সেই দামে বিক্রি করি। আবার বাড়লে নতুন রেটে বিক্রি করি। এখানে কারসাজির সুযোগ নাই। কিছু ব্যবসায়ী কারসাজি করে। আগের দামে কিনে বেশি দামে পরে বিক্রি করেন। এরকম কিছু ব্যবসায়ীকে ভোক্তা অধিকার জরিমানা করার কারণে সেটা দূর হয়েছে।

মুরগি ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ১০ টাকা লাভ করতে হয় তা নাহলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারব না। আমরা দালালের কাছে মুরগি কিনি। তাদের ৫ টাকা লাভ হলে দেখা যায় বাজারে যে মুরগি ১৭০ টাকা সেই মুরগি খামারে  ১৪০ টাকা। মাঝখানের ৩০ টাকা বাড়ে হাতবদলের কারনে। আমাদের কোন দোষ নেই। দাম বাড়লে বেশি দামে বিক্রি করতে হয় আবার কমলে কম দামে।

কথা হয় পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা এনামুলের সাথে। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৭০ শতাংশ পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা চাই পোল্ট্রি খাত টিকে থাকুক। কিন্তু পোল্ট্রি খাতের সিন্ডিকেট অনেক গভীরে। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন কারসাজির কারনে ডিম মুরগির দাম উঠনামা হচ্ছে। এর ফলে প্রান্তিক খামারিরা দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের উৎপাদিত বাচ্চা, খাদ্যের ডিম-মাংস উৎপাদন করছে। কিছুদিন পর দেখা যাবে কর্পোরেটরা এই খাত নিয়ন্ত্রণ করছে আর খামারিরা পথে বসছে। ডিম মুরগির দাম বেধে দেওয়া প্রয়োজন বলেই মনে হচ্ছে। আমরা এটা নিয়ে আন্দোলনও করেছি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ