মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: দেশে সাধারণ জনগণের প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস এখন মুরগির ডিম ও মাংস। সহজলভ্য হিসেবে পাওয়া যায় পাড়ার টঙ দোকান থেকে শুরু করে সুপারশপ পর্যন্ত। তবে এসব উৎপাদনকারী বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা সারাবছরই তুঙ্গে থাকে। কিন্তু অনেকের জানা থাকেনা কয়েক হাতবদলেই লাভ হারাচ্ছে ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনকারী খামারিরা।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ব্রয়লার মুরগির খামারি আব্দুল মোতালেব। কয়েক বছর ধরে ব্রয়লার মুরগির পালন করছেন। কঠিন শীত আর কোরবানির ঈদসহ ৩ থেকে ৪ মাস কোন মুরগি থাকে না খামারে। তাছাড়া সারাবছরই মুরগির চালান হয় তার। কয়েক চালান থেকে লাভ লোকসান মিলিয়ে সমান সমান। লাভের ভাগে কিছুই আনতে পারেন নি। কারণ হিসেবে মুরগির ফড়িয়া বা দালালদের হাতবদলের কারণে দাম কমছে বলে তাঁর মত।

আব্দুল মোতালেব এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম যখন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কিনতে হয় তখনও রেডি মুরগি বিক্রি করতে হয় ১৩০ টাকা আবার যখন ৩০ টাকা বাচ্চার দাম থাকে তখনও রেডি মুরগি বিক্রি হয় ১২৫ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে। এতো হিসেব করে তো আর ব্যবসা চলেনা। এক চালানে লাভ আসলে আরেক চালানে চলে যায়। কোনমাসে ২০ হাজার আসে আবার কোন মাসে ১৫ হাজার চলে যায়।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

ডিমের দাম নিয়ে কারসাজি, শীঘ্রই ব্যবস্থা

ডিমের দাম কমাতে আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে

রাজশাহীতে প্রতিপিস ডিমের দাম ১৪ টাকা!

স্থিতিশীল ডিমের বাজার, নতুন বছরে বাড়বে মুরগির দাম

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আমরা যে মুরগি ১২০ টাকা বিক্রি করি সেই মুরগি কিনে দালাল। সে ১০ টাকা লাভে দেয় গাড়িতে। গাড়িতে ১০ টাকা কেটে দোকানদারদের কাছে যায়। দোকানদার ১০ টাকা লাভে বিক্রি করে ১৫০ টাকা। যদি মূল বাজারের বাইরে হয় তাহলে আরোও ১০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকা হয়। আসলে আমরা সারামাস মুরগি রেডি করে কেজিতে ১৫ টাকা লাভ পাইনা। অথচ একদিকে আমরা কম দামে বিক্রি করছি অন্যদিকে জনগণ বেশি দামে কিনছে। ঘুরেফিরে মানুষ আবার খামারিদেরই দোষারোপ করে।

জানতে চাইলে আরেক খামারি আশরাফুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, খাবারের দাম বেড়েছে অনেক। ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বেড়েছে বস্তাপ্রতি। আগে মুরগি বিক্রি করতাম ১১০ টাকা। এখন ১২৫ টাকা। কিন্তু আগে খাবারের বস্তা ১৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। এখন সেই খাদ্যের বস্তা ২৮০০ টাকায় পাওয়া যায়না। এগুলো দেখার কেউ নাই। যে যার মতো কোনমতে ব্যবসা ধরে রেখেছে। পারলে ব্যবসা ছেড়ে চলে যেতাম।

হাতবদলের কারনে দাম কমলে খামারিদের কি করা প্রয়োজন এ বিষয়ে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, কি আর বলব ভাই। আসলে খামারিরা যা চিন্তা করে তা যদি হতো খুব ভালো হতো। খাবারের দাম কমালে সবচেয়ে বেশি লাভ হতো তাদের। আমাদের দেশে পোল্ট্রি খাত দেখার মতো আসলে কেউ নাই।

করোনার পর থেকে আমাদের দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা যদি সরকার ভালোভাবে দেখতো তাহলে এ অবস্থা হতো না। হাতবদল না করে উপায় নাই। খামারিরা যদি সরাসরি দোকানে মুরগি সরবরাহ করে তাহলে দাম কমে যাবে। আবার খামারিদের কাছে থেকে ঐ দামে দোকানদাররা কিনবেও না।

প্রতিদিন যে পরিমাণ রেডি মুরগি লাগে তা একক খামারি সরবরাহ করতেও পারবেনা। ফলে এই সিন্ডিকেট ভাঙ্গার কোন উপায় আছে বলে তো মনে হয়না। আমাদের এভাবেই চলতে হবে। কিন্তু সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগের উচিত হবে ফিড মিল কোম্পানিদের সাথে কথা বলে ফিডের দাম কমিয়ে দেয়া।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ