হাপায় ফলি মাছের নার্সিং

মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বিলুপ্তপ্রায় ফলি মাছ সহজেই চাষ করে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রিয় মাছ চাষি হাপায় ফলি মাছের নার্সিং ব্যবস্থাপনা ও পোনা উৎপাদনের কৌশল নিয়ে বিস্তারিত তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।

হাপায় ফলি মাছের নার্সিং ব্যবস্থাপনা: পুকুরে দৈর্ঘ্যে ৩ ফুট  এবং প্রস্থে ৩ ফুট আকারের ফিল্টার নেটের হাপা ৪টি বাঁশের খুটি স্থাপন করে বেঁধে দিতে হবে।

অতপর উৎপাদিত ফলি মাছের রেণু পোনাকে পুকুরে স্থাপিত হাপায় প্রতিপালন করতে হবে। প্রতি ঘনমিটারে হাপা প্রতি ৫-৭ দিন বয়সী ৩০০-৫০০টি রেণু পোনা মজুদ করা যায়।

খাদ্য হিসেবে ক্ষুদ্র প্রাণিকণা, জীবিত যে কোন  মাছের রেণু সরবরাহ করতে হবে।  খাদ্য নিশ্চিতকরণের জন্য যে কোন মাছের রেণু পোনা অধিক ঘনত্বে মজুদ করতে হবে।

পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করা হলে পোনার বেঁচে থাকার হার ৯০%। সপ্তাহে ১ দিন হাপা পরিষ্কার  করে দিতে হবে। খাদ্য সরবরাহ ঠিক থাকেলে ১৫ দিনে মাছ ১-১.২৫ ইঞ্চিতে পরিনত হয় এবং এই সময় মাছের গায়ে জেব্রার মতো দাগ ফুটে উঠে।

স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পোনার শরীর থেকে এই দাগ বিলুপ্ত হয়ে যায়। রেণু পোনার আকার ২-৩ ইঞ্চি না হওয়া পর্যন্ত লালন করতে হবে এবং পরবর্তিতে নার্সারী পুকুরে স্থানান্তর করতে হবে।

প্রজননক্ষম মাছ সনাক্তকরণ: স্ত্রী এবং পুরুষ মাছকে সনাক্ত করার প্রধান বৈশিষ্ট হলো পৃষ্টপাখনার সাথে সংযুক্ত কাঁটা। প্রজননক্ষম পুরুষ এবং স্ত্রী মাছ সনাক্তকারী বৈশিষ্টগুলো নিচে ছকে উল্লেখ করা হলো।

পোনা উৎপাদন কৌশল: কৃত্রিম প্রজননের জন্য প্রজনন মৌসুমের শুরুতে স্ত্রী এবং পুরুষ মাছকে ভিন্ন ভিন্ন পুকুরে মজুদ করতে হবে। দেহ ওজনের ৫-৩% হাওে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।

আবহাওয়ার তারতম্য ভেদে এবং সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগের ওপর ফলি মাছের প্রজনন অনেকাংশে নির্ভর করে। সাধারণতঃ মে থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই মাছ প্রজনন করে থাকলেও জুন মাসের মাঝামাঝি হলো সর্বোচ্চ প্রজননকাল।

প্রজনন মৌসুমে মাছ পরীক্ষা করে প্রজননক্ষম মাছ নির্বাচন করতে হবে। প্রথমত জননাঙ্গ পর্যবেক্ষণ করে স্ত্রী এবং  পুরুষ মাছকে সনাক্ত করতে হবে।

পাশাপাশি প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী মাছের পেট পরিপক্ক ডিমের জন্য ফোলা থাকে ও নরম থাকে। পেটের দুইপাশ অনেকটা সুপারির আকার ধারণ করে। কৃত্রিম প্রজননের  জন্য পুরুষ এবং স্ত্রী ফলি মাছের পৃষ্টপাখনার নীচে পিজি দ্রবনের ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়।

পিজি দ্রবনের ইনজেকশন প্রয়োগ ২৪ ঘন্টা পর পুরুষ মাছকে কেটে গোনাড সংগ্রহ করে টুকরা টুকরা কেটে ০.৮% লবণ দ্রবণে মিশিয়ে শুক্রাণুর দ্রবণ তৈরী করা হয়।

অতপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে স্ত্রী মাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করে শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত করা হয়। তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে নিষিক্ত ডিম থেকে ৩-৪ দিন পর রেণু পোনা বের হয়।

পরবর্তীতে ২-৩ দিন পর ওহপঁনধঃরড়হ জার থেকে রেণু পোনাগুলো সরিয়ে ট্রেতে নেওয়া হয় এবং সেখানে ১৫ দিন লালন করা হয়। ডিম প্রস্ফুটনের ৪-৫ দিন পর ডিম্বথলি নিঃশেষিত হওয়ার পর রেণু পোনাকে প্রতিদিন চারবার (৬ ঘন্টা পর পর) সেদ্ধ ডিমের কুসুম ৪-৫ দিন পর্যন্ত খাদ্য হিসেবে সরবরাহ করতে হবে।

হাপায় ফলি মাছের নার্সিং ব্যবস্থাপনা ও পোনা উৎপাদনের কৌশল সংবাদটির তথ্য মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফলি মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল