মাহফুজার রহমান মাহফুজ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ “পাট আবাদ করিবার যাইয়া হামরা (আমরা) মাঠে খাটি মরি আর লাভ করে ব্যাপারী। ক্যা বাহে তোরা সরকারের কাছে কবার পান না পাটার (পাটের) দাম যেন পরে না বাড়ায়। যা বাড়ার আগোতে যেন বাড়ায়।” অনেকটা আক্ষেপের সুরে কথা গুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরাম গ্রামের পাট চাষি এসলাম মিয়া।

পাট চাষি এসলাম মিয়া বলেন “পরে দাম বাড়েয়া (বাড়িয়ে) হামার গুলার (আমাদের) লাভ কি হয় তোমরায় কন তো বাহে (বাবা)? এ্যালা (এখন) হামার টাকার দরকার পাটা বেচা নাগে তা এ্যালা দাম কম। যখন হামার পাটা বেচা শ্যাষ তখন দেখো তরতর করি দাম বাড়ি যায়। এগুলো কোন কথা বাহে!”

পড়তে পারেন: বর্ষা মৌসুমে পাট নিয়ে বিপাকে চাষীরা

এদিকে গত কয়দিন ধরে প্রতিমণ পাট ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে কিনছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারীরা। আর চলমান বাজার দরে পাট বিক্রি করলে নিশ্চিত লোকসান গুনতে হবে বলে জানিয়েছেন চাষীরা।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাট চাষিদের কেউ কেউ ক্ষেতের পাট কাটছেন। কেউ পাট জাগ দিচ্ছেন। কেউ কেউ পাট ধোয়া কিংবা শুকাতে ব্যস্ত। পাট চাষাবাদের বিষয়ে জানতে কথা উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরাম গ্রামের কৃষক রমাকান্ত রায়ের সাথে।

তিনি বলেন, এবছর আমি ৪ বিঘা জমিতে পাট বীজ বপন করেছিলাম। বন্যায় পাটক্ষেত ডুবে দুই বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। চার বিঘা জমিতে পাট চাষাবাদ করতে আমার প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জমিতে যে ফলন হয়েছে তাতে মণ দশেক পাট হতে পারে। ব্যাপারী প্রতি মণ পাট দাম ২৬০০ টাকা করে দিতে চাচ্ছে। এ দামে পাট বিক্রি করলে তো আমার দাহা লোকসান। পাটের মণ কমপক্ষে চার হাজার টাকা হলে অন্তত খরচের টাকা উঠে আসতো।

পড়তে পারেন: পাট চাষে বিঘায় খরচ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার

একই এলাকার কৃষক সাইফুর রহমান, লুৎফর রহমান ও অনিল চন্দ্র বলেন, এবারে পাট চাষাবাদ করতে গিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। পাট নিড়ানির সময় শ্রমিকের দাম বেশি দিতে হয়েছে। তারপরে তো বন্যার হানা। বন্যায় আমাদের অর্ধেকেরও বেশি জমির পাট নষ্ট হয়ে গেছে। যতটুকু বাকি ছিল তা কাটার পরে পাট যে জাগ দিব তার জন্য আবার পানি নাই। পরে কামলা নিয়ে বাড়তি টাকা খরচ করে নদীতে এনে পাট জাগ দিয়েছি।

এতো খাটাখাটুনি আর টাকা খরচ করে পাট আবাদ করি এখন দেখি পাটের দাম কম। পরে পাটের দাম অনেক বেড়ে যায়। যখন দাম বাড়ে তখন আমাদের ঘরে পাট থাকে না। আমাদের এক আবাদের ফসল বিক্রির টাকা দিয়ে আরেক আবাদ ধরতে হয়। মৌসুমের শুরুতেই যদি পাটের দাম বেশি দিত তাহলে আমারদের মতো কৃষকের উপকার হতো।

পড়তে পারেন: পাট জাগে পুকুর ভাড়া, বিঘায় গুণতে হচ্ছে দেড় হাজার!

পাটের দাম নিয়ে কথা হয় শাহবাজারের পাট ব্যাপারী শৈলান চন্দ্র রায়ের সাথে। তিনি বলেন, আমি ক্ষুদ্র ব্যাপারী। মহাজনের কাছে আগাম টাকা নিয়ে পাট কিনে মহাজনের কাছে পাঠাই। মহাজন যে দরে কিনতে বলে আমি সেই দরে কিনে দেই। পরে দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, পরে দাম বাড়লে আমার মতো ক্ষুদ্র ব্যাপারীদের লাভ কি? আমরা তো পাট মজুদ করে রাখতে পারি না। যারা মজুমদার তারাই দাম বাড়ার ফায়দা নেয়। তবে মৌসুমের শুরুতেই যদি পাটের দাম বেশি হতো তাহলে কৃষকরা লাভবান হতো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, প্রতিবছরই মৌসুমের শুরুতে পাটের দাম কম থাকে। কিছুদিন পরে পাট বিক্রি করলে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে কৃষকেরা লাভবান হতে পারবেন। তাছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মাঝে আমন চাষাবাদের জন্য প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে ধান বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ