মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকেঝাঁকে ইলিশ। ফিশিং ট্রলারভর্তি ইলিশ নিয়ে কূলে ফিরছেন জেলেরা। কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা ফিশারিঘাট এলাকায় ১৫ লাখ টাকার ইলিশ এসেছে যা ধরা পড়েছে এক ট্রলারে!

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইলিশবোঝাই একটি ট্রলার ঘাটে ভিড়ল। ট্রলার থেকে প্রথমে মাছগুলো ডিঙিনৌকায় নেওয়া হলো। এরপর সেগুলো খালাস করে স্তূপ করে রাখা হলো ফিশারিঘাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে।

পড়তে পারেন: ইলিশে সয়লাব মৎস্য আড়ত, মিলছে কম দামে

কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে ব্যবসায়ীরা এসে দামদর শুরু করলেন। অবশেষে ট্রলারের ২ হাজার ৫০০টি ইলিশ কিনলেন তিনজন ব্যবসায়ী, ট্রলারের জেলেরা পেলেন ১৫ লাখ টাকা। তবে লক্ষাধিক টাকা দাম পেয়েও খুব বেশি খুশি নন ট্রলারের মাঝি আলী আকবর।

৪৫০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৪০০-৪৫০ টাকায়, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮০০-৯০০ টাকায়। এক কেজি বা এর বেশি ওজনের ইলিশ সাড়ে ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

পড়তে পারেন: পুকুরে মিললো ১০ ইলিশ, এলাকায় চাঞ্চল্য

আলী আকবর বলেন, সাত দিন ধরে বঙ্গোপসাগরের সেন্ট মার্টিন উপকূলে ট্রলার চালিয়ে ইলিশের সন্ধান করা হয়েছে। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ট্রলারের এক জালেই ইলিশগুলো ধরা পড়েছিল। তবে প্রায় ৮০ শতাংশ ইলিশের ওজন ৫০০ গ্রামের কম। বাকি ২০ শতাংশ ইলিশের ওজন ৯০০ গ্রামের বেশি। সব ইলিশের ওজন যদি ৯০০ গ্রাম হতো, তাহলে সব মিলিয়ে ৪০ লাখ টাকা পাওয়া যেত।

একই সময় ১ হাজার ৫০০টি ইলিশ বিক্রি করে এফবি সেলিম নামে আরেকটি ট্রলারের জেলেরা পেয়েছেন প্রায় ৮ লাখ টাকা। ট্রলারের মাঝি শামসুল আলম বলেন, গভীর সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উপকূলের দিকে ছুটে আসছে। জানুয়ারির শেষের দিকে তাঁরা এক থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত ওজনের ইলিশ পেয়েছেন। তবে এখন ছোট আকারের ইলিশ ধরা পড়ছে। বেশির ভাগ ইলিশের ওজন ৩৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম।

পড়তে পারেন: ইলিশের গায়ে চিহ্ন দিয়ে নদীতে ছাড়ছে ভারত

আজ সকাল ছয়টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ফিশারিঘাটে প্রায় ৫০টি ট্রলার এসেছে। প্রতিটি ট্রলারে প্রচুর ইলিশ নিয়ে আসতে দেখা গেছে। তবে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইলিশের ওজন কম হওয়ায় তাঁরা কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না। ইলিশের দাম ওঠানামা করে ঢাকার বাজার পরিস্থিতির ওপর। ইলিশের পাশাপাশি প্রতি ট্রলারে লাইক্ষ্যা, কোরাল, গুইজ্যা, চাপা, মাইট্যাসহ নানা সামুদ্রিক মাছও ধরা পড়েছে।

ফিশারিঘাটে পাইকারি দরে ওজন অনুযায়ী ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে। ৩৫০-৪০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৩০০-৩৫০ টাকায়, ৪৫০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৪০০-৪৫০ টাকায়, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৫০০-৫৫০ টাকায়, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮০০-৯০০ টাকায়। এ ছাড়া এক কেজি বা এর বেশি ওজনের ইলিশ সাড়ে ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। শহরের বাহারছড়া, কানাইয়ারবাজার, কালুরদোকান, বড়বাজারসহ অন্য খুচরা বাজারগুলোতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।

পড়তে পারেন: বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনে শীর্ষে বাংলাদেশ

কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, প্রতিটি ট্রলারে ৪০০ থেকে ৩ হাজার পর্যন্ত ইলিশ ধরা পড়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য মাছও ধরা পড়ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণ ইলিশ চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হচ্ছে। গত বছরের জুলাই-অক্টোবরে দুই দফায় টানা ১০৫ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। এতে সাগরে ইলিশের প্রজনন বেড়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, শীত মৌসুমে খাদ্যের সন্ধানে গভীর সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উপকূলের দিকে ছুটে আসছে। এ জন্য জেলেরা প্রচুর ইলিশ পাচ্ছেন। বিধিনিষেধ মেনে চলায় বঙ্গোপসাগরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। ইলিশের প্রজনন ও আকার বেড়েছে। গত বছর জেলায় ১৫ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ হয়েছিল। এবার ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার মেট্রিক টন। এখন যেভাবে ইলিশ ধরা পড়ছে, সেটা অব্যাহত থাকলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সম্ভাবনা আছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ