এগ্রিকেয়ার প্রতিবেদক: গত ৮ বছরে দুধের উৎপাদন প্রায় ৩ ‍গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া মাংস ও ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ৬ ও ৩ গুণ (প্রায়)। এরপাশাপাশি দৈনিক মাথাপিছু দুধ, মাংস ও ডিমের প্রাপ্যতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

আজ (৮ জানুয়ারি) রোববার বাংলাদেশ সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া নারায়ন চন্দ্র চন্দ সাংবাদিক এসব তথ্য জানান। মন্ত্রীর নতুন দায়িত্ব পাওয়ায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে নারায়ন চন্দ্র চন্দ গত কয়েক বছরে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। দুধের সার্বিক তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দুধ-উৎপাদন ছিল ২২.৯ লক্ষ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থ-বছরে দুধের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৯২.৯ লক্ষ মেট্রিক টনে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দৈনিক মাথাপিছু দুধের প্রাপ্যতা প্রতিদিন জনপ্রতি ৫১.০ মিলি থেকে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১৫৭.৯৭মিলি তে।

মাংসের উৎপাদন সম্পর্কে মন্ত্রী জানান, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মাংসের উৎপাদন ছিল ১০.৮ লক্ষ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭১.৬ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দৈনিক মাথাপিছু মাংসের প্রাপ্যতা ছিল ২০.০ গ্রাম, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২১.৭৪ গ্রাম/দিন/জন।

নারায়ন চন্দ্র চন্দ জানান, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ডিম উৎপাদন ছিল ৪.৬৯ বিলিয়ন টি, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৪.৯৩ বিলিয়নটিতে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাৎসরিক মাথাপিছু ডিমের প্রাপ্যতা ছিল ৪০টি কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২.৭৫টি/বছর/জন।

বাংলাদেশকে দুগ্ধ উৎপাদনে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের মাধ্যমে ৪টি গরুর জন্য সর্বোচ্চ ২.০ লক্ষ টাকা দেশের ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বন্ধকবিহীন ৫ শতাংশ সরল সুদে জনগণের মাঝে ঋণপ্রদান কার্যক্রমটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৩/০১/২০১৬ খ্রিঃ তারিখে উদ্বোধন করেন। এই কার্যক্রমে ক্ষুদ্রখামারী ও নারী উদ্যোক্তাদেরকে প্রধান্য দেওয়া হয়েছে।

বিগত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট গরুর সিমেন উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৫.৮৪ লক্ষ ডোজ (হিমায়িত-১৭.৯৭ লক্ষ ডোজ+তরল-৭.৮৭ লক্ষ ডোজ) এবং প্রজননকৃত গাভীর সংখ্যা ছিল ২২.৭১ লক্ষ। অন্যদিকে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে সিমেন উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১.৮২ লক্ষ ডোজ (হিমায়িত-৩০.০ লক্ষ ডোজ+তরল-১১.৮২ লক্ষ ডোজ) এবং প্রজননকৃত গাভীর সংখ্যা ৩৬.৬৮ লক্ষটিতে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতন মুরাহ্ জাতের মহিষের সিমেন আমদানি করে সফলভাবে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। 

ইতোপূর্বে দেশে টেকসই এবং লাভজনক মাংসল জাতের ক্যাটল ছিল না। মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ”বীফ ক্যাটল উন্নয়ন” শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ব্রাহমা জাতের ক্যাটলের সিমেন আমদানি করে মাংসল জাতের ক্যাটল উন্নয়ন করা হচ্ছে এবং যার ফলাফলপ্রাপ্তি কৃষকপর্যায়ে শুরু হয়েছে।

গবাদিপশুর জন্য ০৭টি (তড়কা, বাদলা, গলাফুলা, ক্ষরারোগ, পিপিআার, জলাতাংক, গোট প্লেগ) এবং হাঁস-মুরগীর জন্য ০৯টি (রানীক্ষেত, বাচ্চার রানীক্ষেত, মুরগির বসন্ত, মুরগির কলেরা, হাঁসের প্লেগ, পিজিয়ন পক্স, গামবোরো, মারেক্স এবং সালমোনেলা) টিকা উৎপাদন, বিতরণ ও প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।

গত ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে গবাদিপশুর জন্য ৮৮ লক্ষ ৮৮ হাজার ৩৭১ ডোজ এবং পোল্ট্রির জন্য ২৩ কোটি ৪০ লক্ষ ৫৬ হাজার ২০০ ডোজ বিভিন্ন প্রকার টিকা উৎপাদিত হয়। ম্যানুয়্যালী টিকা উৎপাদনের বদলে “টিকা উৎপাদন প্রযুক্তি আধুনিকায়ন ও গবেষণাগার সম্প্রসারণ প্রকল্প’র” আওতায় অটোমেকানাইজেশনের মাধ্যমে টিকা উৎপাদনের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফলোশ্রুতিতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে গবাদিপশুর জন্য ১ কেটি ৬১ লক্ষ ৯২ হাজার ৬০ ডোজ এবং পোল্ট্রিতে ২৩ কোটি ৭৫ লক্ষ ৪১ হাজার ৪০০ ডোজ টিকা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রাণিসস্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছে বিএলআরআই লেয়ার স্ট্রেইন-২ বা

“স্বর্ণা” নামক ডিমপাড়া মুরগির জাত। অটো-সেক্সিং সুবিধাযুক্ত উদ্ভাবিত স্ট্রেইনটির বাৎসরিক ডিম উৎপাদন ক্ষমতা ২৯৫-৩০০ টি, ডিমের গড় ওজন ৬৫-৬৬ গ্রাম/ডিম, খাদ্য রূপান্তর দক্ষতা ২.২০-২.৩০।