মাহিদুল ইসলাম রিপন, দিনাজপুর প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ড্রাগন চাষে সফলতা পেয়েছেন তরুণ কৃষক আয়েতুল্লাহ খোমেনি। প্রাথমিক পর্যায়ে সখের বসে স্বল্প জমিতে চাষ করলেও অধিক আয় হওয়ায় বর্তমানে বড় আকারে করে উদ্যোক্তা বনে যান তিনি। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পায় তার।

দিনাজপুর সদর উপজেলার রাজারামপুর এলাকার ময়েজ উদ্দিনের ছেলে আয়েতুল্লাহ ২০১৪ সালে স্থানীয় হর্টিকালচার থেকে ৮০টি ভিয়েতনাম জাতের ৮০টি ড্রাগন গাছের চারা রোপন করে মাত্র ছয় শতক জমিতে। চারা রোপনের বছর খানেক পরই ফলের দেখা পান তিনি।  

যে ফল বিক্রি করে বছরে তিনি আয় করছে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। স্বল্প খরচে অধিক লাভ ও আয়ের একটি বড় উৎস বের হওয়ায় বড় পরিসরে বাগান করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন ড্রাগন ফল চাষী আয়েতুল্লাহ খোমেনি। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি একই জমিতে মাল্টা, লিচু, আমসহ বিভিন্ন ফলের চাষ শুরু করবেন এ উদ্যোক্তা।

আলাপকালে আয়েতুল্লাহ খোমেনি জানান, স্বল্প জমিতে এক কালীন পুজি বিনিয়োগ করে দুই যুগের অধিক সময় ফলন ও একই জমিতে অন্য ফসলের পাশাপাশি চাষাবাদ করা যায় ড্রাগন ফল। পুষ্টি-গুনে ভরপুর খেতেও সুস্বাদু হওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই ফলটি।

চারা রোপনের বছর খানেক পর প্রতিটি গাছ থেকে ১৫-২০টি ফল পায়। বর্তমানে পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে বছরে ৮০ থেকে ১০০টি ড্রাগন ফল পাচ্ছেন তিনি। প্রতি বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ও ফল বেশী ধরে।

শুধু ফলই নয় গাছ থেকে চারা তৈরি করে উপার্জন করছে অতিরিক্ত টাকা। সব মিলিয়ে আয়েতুল্লাহ খোমেনি ড্রাগন চাষের মাধ্যমে নিজেকে লাভবান করে তুলেছে।

জানতে চাইলে আয়েতুল্লাহ খোমেনি এগ্রি কেয়ার২৪.কম কে জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে সখের বসে স্বল্প পরিশরে চাষাবাদ শুরু করি। এককালীন খরচে পরিপূর্ণ গাছ থেকে বেশী ফলনে লাভবান হওয়ায় ড্রাগন চাষে আগ্রহ বেড়েছে।

দিনাজপুরের মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন ফল চাষের উপযোগী হওয়ায় ফল খেতে খুব স্বুসাদু। বর্তমানে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বাগান থেকেই ক্রেতারা ৫’শ টাকা দরে কিনছে।

চলতি মৌসুমে ২৫ কেজি ফল ইতিমধ্যেই বিক্রি করেছেন। আগামীতে বিক্রি যোগ্য আরও ফল গাছে রয়েছে। ড্রাগন ফলের চাহিদা দিনদিন বেড়েই চলছে।

তার উৎপাদিত ফল বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে হয় না। পরিপক্ক হলেই স্থানীয় ফল ব্যবসায়ীরা বাগানে এসেই ক্রয় করে নিয়ে যায়। যা পরে বাজারে বিক্রি করছেন।

ড্রাগন চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি জানান, ড্রাগন ফল চাষে প্রতিটি চারা অন্তত ২ মিটার পরপর সমান জমিতে রোপন করতে হবে। এর আগে নির্দিষ্ট খাল খনন করে সেখানে সার দিয়ে মাস খানেক রাখার পর চারা রোপন করতে হবে।

চারা রোপনের উপযুক্ত সময় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বর্ষা মৌসুমের পানি নিস্কাশনের ও শুস্ক মৌসুমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। এছাড়া পরিচর্যার ক্ষেত্রে পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই থেকে গাছকে রক্ষা করতে সার্বক্ষনিক কৃষি বিভাগের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. তৌহিদুল ইকবাল এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, ড্রাগন চাষ জেলায় ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ড্রাগন ফল চাষীদের সার্বক্ষনিক কৃষি বিভাগের সদস্যরা রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড়ের আক্রমন থেকে পরিত্রাণ পেতে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছে।

ড্রাগন ফল চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় ড্রাগন চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের।