ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকদের ওপর জলবায়ুর প্রভাব অনেকটা বেশি। চাষাবাদের ক্ষেত্রে পোহাতে হয় নানান ঝামেলা। তাই উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকদের জন্য লবণসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) গবেষকরা।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিনিয়ত লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। ফলে লবণাক্ততা ছাড়াও বন্যাকবলিত নিম্নাঞ্চল ও খরাপ্রবণ অঞ্চলে ব্যাহত হচ্ছে ধান চাষ।

সম্প্রতি গবেষণা করে উপকূলীয় অঞ্চলে আবাদযোগ্য লবণসহিষ্ণু ট্রান্সজেনিক ধান উদ্ভাবন করেছেন শাবিপ্রবির গবেষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের গবেষকরা নতুন জাতের এ ধান উদ্ভাবন করেছেন। এছাড়াও বন্য ধান থেকে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশসহিষ্ণু সম্ভাব্য কার্যকর জিন উদ্ভাবন করেন তারা।

উদ্ভাবিত ধানগুলোর মধ্যে রয়েছে, এসটিএল-১, জলাবদ্ধতাসহিষ্ণু এসইউবি-১ এ ১ ও এসকে-১ এবং খরাসহিষ্ণু ডব্লিওআরকেওয়াই-২ উদ্ভাবন করা হয়েছ, যা থেকে প্রথমবারের মতো কন্সট্রাক্ট তৈরি করা হয়েছে।

জানা যায়, ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)-এর অর্থায়নে পরিচালিত জীবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধান উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা করা হয়। গবেষণাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিইবি বিভাগের নিজস্ব ট্রান্সজেনিক গ্রিনহাউস ল্যাবে পরিচালনা করা হয়। গবেষণাপত্রটি অ্যালসিভিয়ারের বায়োটেকনোলজি রিপোর্টার্স জার্নালেও প্রকাশিত হয়। উদ্ভাবিত ধানের জাতটি বর্তমানে মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

খরা সহিষ্ণু আউশ ও আমন মৌসুমের নতুন ধান বিনা-১৯

১৫ দিন পানিতে ডুবে থাকলেও মরে না নতুন ধান বিনা-২৩

বিঘায় ফলন ২২মণ ব্রিধান ৭৫, খুশি চাষিরা

কালো ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছে কৃষক, ফলন ভালো দাম বেশি

গবেষকরা জানান, বন্য ধান থেকে লবণসহিষ্ণু তিনটি জিন নির্ণয় করা হয়েছে, যা থেকে ধানের উন্নত জাতের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে লবণসহিষ্ণু ট্রান্সজেনিক ধান উৎপাদন করা হচ্ছে। কেবল ধান নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রেও লবণসহিষ্ণুতার বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও শাবিপ্রবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের যৌথ গবেষণায় লবণসহিষ্ণু ধান উৎপাদন নিয়ে আরও গবেষণা চলছে।

গবেষক দলের সদস্য ও মাস্টার্স থিসিসে অধ্যয়নরত জেবা ফাইজাহ্ রহমান জানান, আমাদের ল্যাবে বিভিন্ন জিন কন্সট্রাক্ট তৈরি করা আছে। এ জিনগুলো লবণাক্ততা, খরা এবং জলাবদ্ধতাসহ প্রতিকূল পরিবেশে উদ্ভিদ বাঁচিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখে। এ জিন কন্সট্রাক্ট বিভিন্ন জীবপ্রযুক্তি পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল ধানের জাতে ট্রান্সফার করা হবে। জিন ট্রান্সফারের ফলে এই ধানের জাতগুলো লবণাক্ততা, খরা এবং জলাবদ্ধতা সহনশীল জাতে উন্নীত করা যাবে। এতে দেশের প্রতিকূল পরিবেশের অঞ্চলগুলোতে উচ্চফলনশীল ধান চাষ করা যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক প্রধান বলেন, প্রতি বছর আমাদের দেশে বিভিন্ন কারণে চাষাবাদযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে। তাই বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত, সুনামগঞ্জের জলাবদ্ধ ও উত্তরের খরাপ্রবণ জমিতে কীভাবে ধান উৎপাদন করা যায় তা নিয়েই আমরা গবেষণা করছি।

ইতোমধ্যে সমুদ্রের লবণাক্ত পানিসহিষ্ণু ট্রান্সজেনিক ধানের চারা উদ্ভাবন করেছি। ভবিষ্যতে কীভাবে এর পরিসর বাড়ানো যায় সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।

উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য লবণসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন সংবাদের তথ্য বাংলানিউজ চট্টগ্রাম থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ