প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: আমের নতুন রাজধানী নওগাঁ হলেও সারাদেশে সুপরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। এ অঞ্চলের প্রধান ফসল আম। বিপুল পরিমাণ আম বাগানের ফাঁকা জমি ফেলে না রেখে বাগানের পতিত জমিতে চাষ হচ্ছে মিষ্টি কুমড়া। জেলার ভোলাহাটের চাষিরা বাড়তি ফসল হিসেবে পাচ্ছেন এই সবজি।

জানা গেছে, বাগানের পতিত জমিকে কাজে লাগিয়ে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে প্রতি বিঘায় গড়ে ৫০ হাজার টাকা লাভ করছেন তারা। এই পদ্ধতিতে মিষ্টি কুমড়া চাষে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ থাকায় তাই আগ্রহ বাড়ছে অন্য কৃষকদেরও।

উপজেলা কৃষি দপ্তরের তথ্য মতে, ভোলাহাট উপজেলায় এই বছর ৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর আম বাগানের ২০০ হেক্টর জমিতে এবার মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদ হচ্ছে। যা গত বছর ছিলো মাত্র ৪০ হেক্টর।বাগানের পতিত জায়গায় মিষ্টি কুমড়া চাষে বিঘা প্রতি ৫০ থেকে ৬০ মণ ফলন পাওয়া যাবে।

আম বাগানের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষি আজম আলী বলেন, ‘বাগানে বছরে মাত্র একবারই আমের ফলন পাওয়া যায়। অসময়ে বাগানের জমিগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে, এবার ১৫ বিঘা পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছি। সুন্দর আবহাওয়া থাকায় ভালোই ফলন হয়েছে। এই জমিতেই মৌসুমে বাগান থেকে আম আর মিষ্টি কুমড়া আবাদ করে বাড়তি টাকা আয় হচ্ছে। আগামী বছরে ৫০-১০০ বিঘা আম বাগানে প্রজেক্ট হিসেবে মিষ্টি কুমড়া আবাদ করবো।’

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

একেকটি সাদা কুমড়া ২৫০ টাকা!

তৈরি করুন মিষ্টি কুমড়ার ‘বেগুনি’

কুমড়া চাষে স্বাবলম্বী কৃষকরা, অল্প খরচে লাভ তিন গুণ

শীতে তৈরি করুন চালকুমড়ার মিষ্টি

তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরে মাত্র কয়েক বিঘা আম বাগানের জমি মিষ্টি কুমড়া আবাদ করেছিলাম। অল্প খরচ আর কম পরিশ্রম করেই বাড়তি আয় হয়েছে। যার কারণে এবার ১০ বিঘা জমি কুমড়া আবাদ করছি।

বাগানের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করলে বিঘায় ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়। বিক্রি করতে কোথাও যাওয়া লাগে না, মাঠ থেকে খরিদদার কিনে নিয়ে যায়। সব খরচ বাদে গড়ে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়।’

আশরাফুল ইসলাম নামের অপর এক কৃষক বলেন, ‘আম বাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে সবদিক দিয়ে লাভ আছে। মিষ্টি কুমড়া চাষে পোকা মাকড় থেকে রক্ষা পেতে কিটনাশক ব্যবহারে আম গাছে কম সার প্রয়োগ করতে হচ্ছে। এতে বাগানের কোনো ক্ষতি হয় না, খরচ কম হয়। পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে অতিরিক্ত অর্থ পাওয়া যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন; ‘বছরের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকেই মিষ্টি কুমড়া আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করি। জমি প্রস্তুত হয়ে গেলে সপ্তাহ খানেক পরেই বীজ রোপণ করি।

সব মিলিয়ে ৮০-৮৫ দিনের মাথায় মিষ্টি কুমড়া বাজারজাত করার মতো হয়ে যায়। ঢাকা থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীরা মাঠে এসে নগদ টাকা দিয়ে মাল নিয়ে যান। ফলে কোন ভোগান্তি পহাতে হয়না।’

ভোলাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আলী বলেন, গত বছরের চেয়ে প্রায় ১৬০ হেক্টর বেশি জমিতে এবার মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদ হচ্ছে। যেসব আম বাগান গুলোতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করার সুযোগ আছে, সেখানে মিষ্টি কুমড়াসহ অন্য আরও সাথী ফলস উৎপাদন করে প্রতি ইঞ্চি জায়গাকে কাজে লাগানোর জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। আগামীত ১ হাজার হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ