কামরুল হাসান, পটুয়াখালী প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সারিবদ্ধ গাছগুলোর পাতা ঝরে পড়ছে। রং পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কিছু গাছ মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। গাছগুলোর যেন নেই কোনো প্রাণ।

সম্প্রতি সরেজমিনে উপকূলের পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বনায়ন ঘুরে এমন দৃশ্য প্রতিবেদকের চোখে পড়ে।

বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের মতে ভাইরাস, কৃত্তিম সমস্যা, খরায় দাবদাহ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও ভূপৃষ্ঠের খাদ্যোপাদান হারানোর কারণে পাতা ঝরে গাছ মারা যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

উপজেলা সদর থেকে সড়ক পথে ২ কিলোমিটার পূর্বদিকে পূর্ব বাহেরচর। সেখানকার রাস্তার দু’পাশে বন বিভাগের ননম্যানগ্রোভ প্রজাতির আকাশ মনি ও শিশু গাছের সারি। তবে সেইসব গাছের কিছু আছে পাতাবিহীন। যেসব গাছে পাতা আছে, তাও ঝরে পড়ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গাছের রং পরিবর্তন হয়ে কালো রূপ ধারণ করে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ওখান থেকে এক কিলোমিটার পূর্ব দিকে গনিখালী ঘাট। সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার যোগে চরমোন্তাজ ইউনিয়নের বুড়াগৌরাঙ্গ নদী পাড়ি দিয়ে দুই ঘন্টা পর দেখা মিলে সোনারচর অভায়ারণ্যের।

ওখানে বন বিভাগের সবুজ ননম্যানগ্রোভ এবং ম্যানগ্রোভ প্রজাতির ঝাউ, কেওড়া, গোলপাতা, সুন্দরী, বাইন, ছইলাসহ বিভিন্ন গাছের বিশাল বনায়ন। কিন্তু সবুজের তেমন ছোঁয়া নেই সেই বনে। কিছু গাছের পাতা ঝরে যাওয়ায় এ অবস্থা। আর পাতা ঝরেই মারা যাচ্ছে গাছ।

অপরদিকে উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার নদীপথে দারছিরা নদী পাড়ি দিয়ে হল জাহাজমারা চর। সেই চরেও রয়েছে বন বিভাগের বনায়ন। তবে সেখানকার কিছু গাছও পাতা ঝরে মারা যাচ্ছে। শুধু পূর্ব বাহেরচর রাস্তা, সোনারচর কিংবা জাহাজমারা নয়, এভাবে উপজেলার চরতাপসি ও চরতুফানিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পাতা ঝরে গাছ মরে যাওয়ার কিছু দৃশ্য দেখা গেছে।

তবে এসব গাছের পরিমাণ খুব একটা বেশি নয়। জানতে চাইলে বন বিভাগের রাঙ্গাবালী রেঞ্জ কর্মকর্তা ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘ভাইরাস জনিত কারণ, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও ভূপৃষ্ঠের খাদ্যোপাদান কমে যাওয়ার কারণে পাতা ঝরে গাছ মরে যাওয়া বাড়ছে।’ চরমোন্তাজ রেঞ্জ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এসব এলাকার নদ-নদী ও সমুদ্রের বালু গাছের গোড়ায় কিংবা শেখরে দীর্ঘদিন জমে থাকার কারণে কিছু গাছ মরে যেতে পারে।

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পাপড়ি হাজরা এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ‘ওইসব এলাকার সয়েল্ট টেস্টিং ছাড়া পাতা ঝরে গাছ মরে যাওয়ার বিষয়ে কথা বলাটা খুবই অসম্ভব।

কিছুটা লবণাক্ততার কারণে পাতার রং পরিবর্তন হয়ে যায়। তবে ফাংগাস বা ভাইরাস আক্রান্তের কারণে পাতা ঝরে গাছ মারা যাচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।’