জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক অ্যান্টিবায়েটিকমুক্ত ব্রয়লার উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। “গ্রিণ ব্রয়লার” নামে এ ব্রয়লার মুরগি ২৫-২৭ দিন বয়সের মধ্যে ওজন দেড় থেকে দুই কেজি হয়। স্বাদ ও মানের দিক থেকে সাধারণ ব্রয়লারের চেয়ে অনেক ভালো বলে দাবি গবেষকদের।

এছাড়া, ৩২ দিনে প্রতিটি মুরগির ওজন দুই কেজি ছাড়ায়। ৩৬তম দিনে পৌনে তিন কেজি থেকে তিন কেজি হয় বলে জানান গবেষকরা।

রাবির গবেষকদের উৎপাদিত অ্যান্টিবায়েটিকমুক্ত ব্রয়লার মাংস বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিগত তিন বছর ধরে প্রথম অবস্থায় ২৫০টি মুরগি দিয়ে গবেষণা শুরু করে সর্বশেষ পাঁচশ ব্রয়লার মুরগির ওপর গবেষণা চালিয়ে এ মুরগি উৎপাদনে সক্ষম হন।

আরোও পড়ুন: ডিম-মুরগির দাম নির্ধারণ করে কারা, কেন ধরা খায় খামারিরা?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগের দুই শিক্ষক ড. শরিফুল ইসলাম ও ড. হাকিমুল হকের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী গবেষণাকাজটি করছেন।

জানতে চাইলে গবেষক ড. হাকিমুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমাদের ভক্ষণযোগ্য অন্য প্রাণীদের জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। মুরগিতে অ্যান্টিবায়োটিকের পরিবর্তে আমরা উদ্ভিদের নির্যাস ব্যবহার করি। কৃমিনাশক ওষুধের পরিবর্তে নিমপাতা ও দ্রুত বৃদ্ধির জন্য গ্রোথ হরমোনের পরিবর্তে সজিনার পাতা ব্যবহার করি। সজিনা পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও গ্রোথ বর্ধক গুণ রয়েছে যা মুরগির রোগ প্রতিরোধের কাজ করে।শীতকালে মুরগির শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে আদা খাওয়ানো হয়।

নতুন উদ্ভাবিত গ্রিন ব্রয়লারের মৃত্যুর হার দুই শতাংশের কম বলেও দাবি এ গবেষকের। তিনি বলেন, আমরা প্রথম ধাপে ২৫০টি মুরগির ওপর এক্সপেরিমেন্ট করি। যেখানে মাত্র ৫টি মুরগি মারা যায়। সর্বশেষ ৫০০টি মুরগির মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল দুই শতাংশেরও কম।

আরোও পড়ুন: কমলো ব্রয়লার ও দেশি মুরগির দাম

গবেষকরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত ব্রয়লারের মৃত্যুর হার কম। গবেষক দলের সদস্য ড. শরিফুল ইসলাম বলেন, সাধারণ ব্রয়লারের মতো গ্রিন ব্রয়লার ২৭ দিনে ১.৭ থেকে ১.৯ কেজি হয়।

গবেষকরা জানান, খামারিদের মতো তারাও ভ্যাকসিন ব্যবহার করেন। তবে রোগ-প্রতিরোধ ও দ্রুত বৃদ্ধির জন্য বাজারের যে অ্যান্টিবায়োটিক তা ব্যবহার করেন না তারা। পরিবর্তে প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত বিভিন্ন উদ্ভিদের নির্যাস ব্যবহার করছেন গবেষকরা। সাধারণ ব্রয়লারের মতো এসব মুরগিও দ্রুত বাড়ে।

ব্যয়ের বিষয়ে ড. ইসলাম বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করলেও ব্যবস্থাপনায় খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে হয়। অন্য খামারিরা যেখানে দুই-তিন দিন পর পরিষ্কার করে সেখানে আমাদের প্রতিদিনই পরিষ্কার করতে হয়। খেয়াল রাখতে হয় যাতে পরিবেশ স্যাঁতস্যাঁতে না হয়। এ কারণে একটু বাড়তি জনবলের প্রয়োজন পড়ে।

তবে, এই নতুন উদ্ভাবিত মুরগি কিনছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বাইরে বাজারজাত করা হয়নি।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ