ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দারুচিনি একটি মসলা বৃক্ষের নাম। স্বাভাবিক পরিবেশে এই বৃক্ষের উচ্চতা দশ থেকে পনের মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। আদি নিবাস শ্রীলংকায়। আজ কাল ইন্দোনেশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ ও চীন প্রভৃতি দেশে ও উৎপাদিত হচ্ছে। দেখতে কিছুটা তেজপাতা বৃক্ষের মতো এই বৃক্ষের চামড়াটা মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দারুচিনির সুগন্ধ যুক্ত তৈল ও পাওয়া যায়।

দারুচিনি এমন একটি মশলা যা বাংলাদেশের প্রায় সব রান্না ঘরে পাওয়া যায়।দাঁরুচিনি শুধু একটি মশলাই নয় এটি একটি ঔষধও। যাতে আছে antioxidants, যা বেশ কিছু অসুখ থেকে যেমন arthritis, diabetes এমন কি মারণ রোগ ক্যান্সার এর হাত থেকে ও সুরক্ষিত রাখে। এখন দেখুন দাঁরুচিনি আপনার শরীরের জন্য কতটা উপকারী আর কোন কোন রোগ প্রতিরোধে দাঁরুচিনি ব্যবহার করা হয়।

১। ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ
বর্তমানে প্রতি দুই থেকে তিন জনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি একটি চিন্তার বিষয়। খাওয়া দাওয়ার বিষয়ে যথাযথ নজর না দেওয়া, সঠিক যত্নশীল না হওয়া এবং সঠিক ভাবে শ্রম তথা যোগ ব্যায়াম, প্রাণায়াম না করার জন্য এই ওজন বাড়ার সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এমত অবস্থায় খাবারে দাঁরুচিনির ব্যবহার করলে ওই বর্ধিত ওজন জনিত সমস্যা বেশ অনেকটাই কমতে পারে। দাঁরুচিনি তে বর্তমান poly phenols একটি antioxidant যা ইন্সুলীন এর সংবেদনশীলতা কে বাড়িয়ে রক্তের glucose এর মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ করে।

কিন্তু আমাদের শরীর যখন সঠিক মাত্রায় ইন্সুলীন তৈরী পারে না তখনই রক্তে গ্লুকোস এর মাত্রা বেড়ে যায় এর ফলে স্থূলতা, মধুমেহ (ডায়াবেটিস্) এবং আরও কিছু রোগ এর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে পলি সিস্টিক ওভারীয়াণ (poly cystic ovarian disease) অসুখ আছে, তাদের ক্ষেত্রে দাঁরুচিনি ইন্সুলীন প্রতিরোধ কে কমিয়ে ওজন বেড়ে যাওয়া কে নিয়ন্ত্রণ করে।এ ছাড়া দাঁরুচিনির অ্যন্টি-ওবেসিটি প্রভাব স্থূলত্ব কে কম করে।

উপকরণ:

এক কাপ জল
এক চামচ দাঁরুচিনি পাওডার/ গুড়া
এক চামচ মধু
এক চামচ লেবুর রস
বানানোর পদ্ধতি :

প্রথমে জল কে ফোটাতে হবে। একটি কাপে দাঁরুচিনি গুড়ো বা পাওডার মধু আর লেবুর রস এক সাথে একটা মিশ্রণ তৈরী করতে হবে। এবার এই মিশ্রণে ঐ ফোটানো গরম জল মিশিয়ে একটা মিশ্রণ বানিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণ পান করতে হবে। ভাল ফল পেতে রোজ সকালে এই মিশ্রণ পান করতে হবে।

২। আর্থারাইটিসের ব্যাথা কমায় দারুচিনিঃ

বয়েস বাড়ার সাথে সাথে আমাদের হাড় গুলি দুর্বল হতে থাকে, আবার কেউ কেউ আর্থারাইটিসে আক্রান্ত হন। এই আর্থারাইটিসে দাঁরুচিনি ঔষধের মত কাজ করে। দাঁরুচিনি তে আয়রণ(লৌহ), ক্যালসিয়াম, ম্যান্গানিজের মত ধাতব লবন গুলি থাকে যে গুলি এই গাঁটের যন্ত্রণায় উপশম পাওয়া যায়। একটা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে রিউমাটয়েড আর্থারাইটিসে্ যে যন্ত্রণা ও ফোলা ভাব হয় তাতে এই দারুচিনী অনেক টা উপকার দেয়।

ব্যবহার এর পদ্ধতি:

উপকরণঃ

দারুচিনির তেল
চার ফোঁটা নারকেল তেল / সরষের তেল
বানানোর পদ্ধতি :

দারুচিনীর তেল তিন থেকে চার ফোটা নারকেল তেল বা সর্ষের তেলের সাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে মালিশ করতে হবে। এই মিলিশের ফলে ব্যাথায়ে অনেক টা আরাম পাওয়া যায়।

৩। দারুচিনি ব্লাড সুগার আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ

অনিয়মিত, অনিয়ন্ত্রণ জীবনযাত্রার জন্য আজকাল অনেকেরই ডায়াবেটিস্ তথা মধুমেয় রোগ এর শিকার হয়ে পড়ছেন। প্রাথমিক পর্যায় এই রোগ এর দিকে নজর না দিলে ভবিষ্যতে এই রোগের জন্য বিপদের আশংকা থেকে যায়। সময় এর সাথে সাথে ডায়াবেটিস্ আরো কিছু কিছু রোগের জন্ম দেয়। ডায়াবেটিস্ তথা মধুমেহ রোগী যদি খাদ্যে দারুচিনী ব্যাবহার করেন তবে এই ডায়াবেটিসের এর হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যায়। দাঁরুচিনি তে উপস্থিত আ্যন্টি আক্সিডেন্ট আক্সিডেটিস্ স্ট্রেস কে কমাতে সাহায্য করে যা নাকি ডায়াবেটিস্ এর একটি প্রধান কারণ।

এই মশলায় উপস্থিত ফেনলীক যৌগ এবং ফ্লবনাইড যা কিনা আ্যন্টি ইন্ফ্লামেটরি আ্যন্টি ডায়াবেটিক্ এমন কি আ্যন্টি ক্যানসরএবং কার্ডিয় প্রোটেকটিভ গুণ সম্পন্ন । একটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে দারুচিনী রক্তের শরকরা

মাত্রা কম করে। দাঁরুচিনি তে বর্তমান পলিফেনলস্ শরীরে ইন্সুলিন ক্ষরণের মাত্রা কে বাড়ায় তাই ডায়াবেটিস্ এর আশংকা কমে।

ব্যবহার এর পদ্ধতি:

উপকরণঃ

ছোট এক টুকরো আদা
দু চামচ লেবুর রস
এক টুকরো দারুচিনী
এক চামচ মধু
এক কাপ জল
বানানোর পদ্ধতিঃ

মাঝারি আঁচে জল গরম করতে হবে।আদা কে ছোট টুকরো বা ঘসে নিতে হবে। জল ফুটে উঠলে আদা গুলো দিয়ে দিতে হবে, এবার আঁচ কমিয়ে ওই মিশ্রণে দারুচিনী দিয়ে দিতে হবে, পাঁচ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। এর পর একটা কাপে জল টা ছেকে নিতে হবে। এই জলে লেবুর রস আর মধু দিয়ে খেতে হবে। এই জল দিনে যে কোন সময় খাওয়া যায়।

৪। স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিতেঃ
মস্তিষ্কের জন্য ও দাঁরুচিনি খুব উপকারী। দাঁরুচিনির সুগন্ধ মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি মস্তিষ্কের একটি টনিক। এটি যে শুধু মাত্র মস্তিষ্ক কে দ্রুত কাজ করতে সক্ষম করে তাই নয়, একাকীত্ব, ডিপ্রেশন ও আ্যন্গজাইটিতে ও উপকার দেয়। যারা এই দারুচিনীর তেলের ঘ্রাণ নেয় তাদের স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পায় (৮)। এছাড়া দারুচিনী তে বর্তমান আ্যন্টি আক্সিডেন্ট আ্যলজাইমার আর পারকিনসন্ এর মত রোগের হাত থেকেও রক্ষা করে(৯)।যখন আ্যলজাইমারে স্মৃতি শক্তি কমতে থাকে তখন অসতে আসতে শরীরে কম্পন শুরু হয়।

ব্যবহার এর পদ্ধতি:

উপকরণ :

এক কাপ বা আধা কাপ জল
ছোট এক টুকরো দাঁরুচিনি
এ চামচ মধু

বানানোর পদ্ধতি :

জলকে ফোটাতে হবে। একটি পাত্রে দারুচিনী নিয়ে তাতে ওই গরম জল ঢেলে দিতে হবে।দশ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে যাতে দারুচিনীর সব গুনাবলী ঐ জলে বেরিয়ে আসে। এর পর ঐ জল ছেকে তাতে মধু মিশিয়ে পান করতে হবে।

৫। সর্দি কাশি তে দারুচিনিঃ
দারুচিনিতে অ্যান্টি – মাইক্রবিয়াল আর অ্যান্টি ইনফ্লেমেটোরি গুন বর্তমান। এই গুণ আপনাকে সর্দি কাশি থেকে সুরক্ষা করে।

ব্যবহার এর পদ্ধতি:

উপকরণঃ

এক চামচ দারুচিনি গুড়ো
দুটো লবঙ্গর টুকরো
এক গ্লাস গরম জল

বানানোর পদ্ধতি : দারুচিনি আর লবঙ্গর টুকরো কে জলে দিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ফোটান আর ছেঁকে চামচ দিয়ে পান করুন।

ওজন কমাতে, ব্লাড সুগার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দারুচিনি শিরোনামে সংবাদের তথ্য স্টাইলক্রেজ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।