নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: এবার পাম তেলের দাম লিটারে ৩ টাকা কমেছে। ভ্যাট প্রত্যাহারের কারণে সয়াবিন তেলের দাম কমানোর পর পাম ওয়েলের দাম কমলো বলেই জানিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটাবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।

গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে পাম তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, পাম তেলের দাম কমিয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সংগঠনের সচিব নুরুল ইসলাম মোল্লা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত মূল্যতালিকা অনুযায়ী পাম তেলের লিটারপ্রতি খুচরা মূল্য ছিল ১৩৩ টাকা, সেটা আজ মঙ্গলবার ১৩০ টাকায় বিক্রি হবে।

পড়তে পারেন: দাম বাড়লো পামওয়েলরও, কমেছে খোলা আটা-ডিমের

এর আগে গত রোববার মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য প্রতি লিটার ১৬৮ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় মন্ত্রণালয়।

পাঁচ লিটারের বোতলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৭৬০ টাকা, যা এতদিন ৭৯৫ টাকা ছিল। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা, যা এতদিন ১৪৩ টাকা নির্ধারিত ছিল।

 চলতি বছর ইন্দোনেশিয়ায় ৪ কোটি ৮০ হাজার টন পাম ওয়েল উৎপাদন হতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির পাম অয়েল অ্যাসোসিয়েশন (গাপকি)।

বিশ্বের শীর্ষ পাম অয়েল উৎপাদক ও রফতানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া। অপরিশোধিত অবস্থায় এ ভোজ্যতেল রফতানি বন্ধের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দেশটি। গত বছরের অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ান প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো এ পরিকল্পনার কথা জানান।

পাম অয়েল ও খনিজসম্পদ সমৃদ্ধ দেশটি প্রক্রিয়াজাত শিল্পের উন্নয়নে মনোযোগ বাড়াচ্ছে। উন্নয়নের এ ধারাকে উৎসাহিত করতে কাঁচামাল রফতানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।

পড়তে পারেন: বেড়েছে পাম অয়েলের দাম

গাপকির প্রতিবেদনে বলা হয়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার কারণে উৎপাদন বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বছর ইন্দোনেশিয়ায় ৪ কোটি ৮০ হাজার টন পাম অয়েল উৎপাদন হতে পারে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৪ কোটি ৬৯ লাখ টন। সে হিসেবে উৎপাদন ১১ লাখ টন বাড়বে।

এদিকে উৎপাদন বাড়লেও কমছে ইন্দোনেশিয়ান পাম অয়েলের রফতানি চাহিদা। চলতি বছর চাহিদা গত বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ২ কোটি ৯৮ লাখ টনে নামতে পারে। ফলে পণ্যটির মজুদ বেড়ে ৭০ লাখ টন বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন গাপকির নির্বাহী চেয়ারম্যান তোগার সিতাংগাং।

পড়তে পারেন: পাম অয়েল রফতানিতে ধাক্কা খেলো মালয়েশিয়া

জোকো উইদোদো বলেন, কোনো একসময় আমাদের অবশ্যই অপরিশোধিত পাম অয়েল রফতানি বন্ধ করতে হবে। পণ্যটি রফতানি করতে হবে প্রসাধনী, মাখন, বায়োডিজেলসহ অন্যান্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে।

প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, অপরিশোধিত পাম অয়েল রফতানি বন্ধ করলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মামলার ঝুঁকি রয়েছে। এর পরও আমাদের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে হবে। অপরিশোধিত পাম অয়েলের পাশাপাশি অপরিশোধিত বক্সাইট রফতানিও বন্ধের পরিকল্পনা রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার।

পড়তে পারেন:কম পামঅয়েল আমদানিতে রেকর্ড ভারতের

২০২১ সালে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় ভোক্তা পর্যায়ে খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু সে তুলনায় সরবরাহ ছিল নিম্নমুখী। ফলে বছরের প্রথম দিকেই বাড়তে শুরু করে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম। শেষ দিকে এসে যা এক দশকের সর্বোচ্চ পর্যায় অতিক্রম করে। মূল্যবৃদ্ধির এ ঊর্ধ্বগতিতে জ্বালানি জুগিয়েছে পাম অয়েল। নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে পণ্যটির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।

এদিকে চলতি বছরও আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম বাড়তির দিকে থাকবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছে কাউন্সিল অব পাম অয়েল প্রডিউসিং কান্ট্রিজ (সিপিওপিসি)।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ