খুব অল্প সময়ে যাত্রা শুরু হলেও ইতিমধ্যে কৃষকের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে পারটেক্স এগ্রো লিমিটেড দেশের কৃষিখাতে অন্যতম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মূলত সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই ব্যবসায় এসেছে

দেশের কৃষি তথা কৃষককে লাভজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে অবদান রাখার লক্ষ্যেই কৃষি ব্যবসা পরিচালনা করছে পারটেক্স স্টার গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পারটেক্স এগ্রো লিমিটেড উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ, গবেষণা, কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ নানা কার্যক্রম সম্পাদনের মাধ্যমে কৃষিতে অবদান রাখছে প্রতিষ্ঠানটি

পারটেক্স এগ্রো লিমিডেট হেড অব অপারেশন মো. আইয়ুব আলী  নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে সফলভাবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় মূল দায়িত্ব পালন করছেন তিনি মূলত দক্ষ ঊর্ধতন কর্মকর্তার দক্ষতা অভিজ্ঞতার আলোকে প্রতিষ্ঠানটি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যতে আরও নানামুখি পদক্ষেপ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির এসব নিয়ে এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আবু খালিদ

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পারটেক্স এগ্রো লিমিটেড পথ চলার শুরুর কিছু কথা বলবেন।

আইয়ুব আলী: ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু পারটেক্স এগ্রো লিমিটেড যাত্রা শুরু করে। তবে প্রাথমিকভাবে পণ্য নিবন্ধনের প্রক্রিয়াসহ সবকিছু গুছিয়ে নিতে প্রায় কয়েক বছর লেগে যায়। ২০১৩ সাল থেকে পুরো দমে কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত আমরা মাঠ পর্যায়ে ৭টা উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের বীজ সরবরাহ করেছি। এর মধ্য অন্যতম হলো বালিয়া টু।

দেশে আমরাই প্রথম উচ্চ ফলনশীল সুগন্ধি জাতের ধানের বীজ বাজারে নিয়ে আসি। প্রথম বছরেই ভালো সাড়া পাওয়া যায়, প্রায় ২০০ টন বীজ বিক্রি হয়। পরের বছর বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৬০০ মেট্রিক টনে পৌঁছায়।

এর পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নত জাতের সবজির বীজ বাজারে সরবরাহ শুরু হয়। ইতিমধ্যে আমাদের নিজস্ব গবেষনা প্রতিষ্ঠান থেকে ৫টি সবজির উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাত অবমুক্ত হয়েছে। যা দেশের কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

আমাদের পণ্যের মান খুবই ভালো। বিভিন্ন উন্নত দেশেল শীর্ষ সব প্রতিষ্ঠান থেকে বীজ আমদানি করে থাকি। এ কারণে মানের দিক দিয়ে খুবই উন্নত হয়। এতে কৃষকেরাও ভালো ফলন পান।

যেমন ধরুণ থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বড় কোম্পানি চিয়াতাই থেকে শশা, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন (এ প্রতিষ্ঠানটি ১০০টি দেশে পণ্য বিপণন করে) পণ্য নিয়ে আসছি। এতে বাজারে আমাদের খুব দ্রুত বড় পরিসর তৈরি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির উন্নত মানের একাধিক পণ্য আছে, যা দেশের কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এ ছাড়া আমাদের গবেষণা উন্নয়ন কার‌্যক্রম কেন্দ্র আছে। কীটনাশক, সার, মাছ, খাদ্য নিয়েও কাজ করছি।

ভালো মানের ভুট্রা নিয়েও কাজ হচ্ছে। আমরা এমন একটা পণ্য নিয়ে আসছি যে পণ্যটি ভুট্রার আগাছা দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আশা করি পারটেক্স এগ্রো শিগগিরই দেশের কৃষিতে বৃহৎত্তর পরিসরে অবদান রাখবে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: প্রতিষ্ঠানটি কৃষি ব্যবসাকে বেছে নেয়ার কারণ কী?

আইয়ুব আলী: বাংলাদেশে পারটেক্স স্টার গ্রুপের প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা আছে। আমাদের ব্যবসার মূল উদ্যোক্তা হলেন দুজন নারী। একজন হলেন মিসেস তাবাসসুম কায়সার, আমাদের চেয়ারপার্সন ম্যাডাম। আরেকজন সাবেরা এইচ মাহমুদ, উনি আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

বাংলাদেশের প্রতিটি খাতেই কিন্ত পারটেক্স কাজ করছে। তাই উনাদের ভাবনায় আসে কৃষিকে নিয়ে কিছু করা যায় কিনা। ভাবনাটি এই দুজন উদ্যোক্তার মাঝে কাজ করে। এরপর দেশের কৃষি খাতে অবদান রাখার উদ্দেশ্যেই তারা এ পদক্ষেপ নেন। এই প্রেক্ষাপটেই কৃষি ব্যবসা শুরু। উনাদের অনুপ্রেরণায় ছিলেন আমাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মহাদয় এম এ হাসেম সাহেব।

ধীরে ধীরে কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির পরিসর বাড়ছে। এটি ধৈয্যর ব্যবসা। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। যার কারণে আজকে প্রায় ৮ বছর বয়স প্রতিষ্ঠানের, তারপরও আমরা খুব বড় আকারে যেতে পারি নি। তবে আশানুরুপ এগিয়ে যাচ্ছি।

কৃষি ব্যবসাকে ভালোবাসার কারণে নাটোরে ১০৫ বিঘা জমির উপর একটা বড় আকারে কৃষি প্রসেসিং সেন্টার করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এখানে গবেষণার কাজও চলবে। প্রত্যকটা ক্ষেত্র নিয়ে কাজ হবে, যেমন বাংলাদেশে জনপ্রিয় ব্রি ধান ২৮, ২৯ জাত নিয়েও কাজ হবে এখানে। কাজটি ইতিমধ্য শুরুও হয়ে গেছে।

পারটেক্স’র অনেক বড় একটা ডেইরি ফার্ম আছে। সেখান থেকে প্রচুর দুধ বাজারজাত হচ্ছে। এগুলো যে লাভজনক হিসাবে করা হয়েছে তা কিন্তু নয়, সামাজিকভাবে অবদান রাখার জন্যই এসব পদক্ষেপ। সামাজিক মূল্যবোধের কারণেই কৃষি নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত দেশের খাদ্য নিরপত্তা ও দারিদ্র বিমোচনে অবদান রাখার জন্যই কৃষিতে পারটেক্স এগ্রো’র যাত্রা শুরু।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কনফারেন্স, প্রদর্শনীতে গিয়ে আমরা দেখি কোন ফসল আমাদের দেশের জন্য উপযোগী। সেগুলো নিয়ে আসার পর আমাদের একটি টিম রয়েছে তারা গবেষণা ও মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর পরবর্তীতে বাজারে সরবরাহ করি। আমাদের কৃষিবিদ, বিজ্ঞানী, গবেষকসহ নানা বিষয়ে দক্ষতা সম্পন্ন কর্মী রয়েছেন।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বর্তমানে কৃষি ব্যবসা সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু বলবেন।

আইয়ুব আলী: বর্তমানে কৃষি ও কৃষি ব্যবসার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। খাদ্য নিরাপত্তার প্রেক্ষিতে কৃষিতে যে বিপ্লব চলে এসেছে তার উপর ভর করে এখন প্রত্যেকটা মানুষই কৃষির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছেন। যারা এক সময়ে কৃষি অলাভজনক বলে কাজ করে নি, তারাও এখন কিন্তু কৃষির প্রতি ঝুঁকছেন।

অনেক কর্মসংস্থান হচ্ছে এ খাতে। দারিদ্র বিমোচনে বড় ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কেননা কৃষির ক্ষেত্র এখন নানামুখি হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পারটেক্স এগ্রো লিমিটেড এর ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও কী কী কাজ সম্পাদন করতে যাচ্ছে, এ বিষয়ে কিছু বলবেন।

আইয়ুব আলী: ভবিষ্যত পরিকল্পনার মধ্য রয়েছে বড় আকারের একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় যেসব জাত রয়েছে সেসব জাতকে উচ্চ ফলনশীল জাতে কীভাবে নিয়ে যাওয়া যায় এরকম কিছু ব্যতিক্রম ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর কাজ সম্পাদন হবে।

দুই নম্বর হচ্ছে দেশে উন্নত মানের বীজ সরবরাহ করা, যে বীজের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখবে। কেননা শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের মাত্রা নির্ধারণ করে কী মানের বীজ আমরা কৃষকের হাতে পৌঁছে দিচ্ছি তার ওপর।

দেখুন ধানের ক্ষেত্রে একই বীজ দিয়ে হেক্টর প্রতি দুই মেট্রিক টন আবার ওই জমিতেই আরও উন্নত মানের বীজ দিয়ে হেক্টর প্রতি ১১ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যাচ্ছে। আমরা এমন বীজ কৃষকের মাঝে তুলে দিতে চাই, যে বীজ দিয়ে কৃষক সর্ব্বোচ্চ ফলন নিশ্চিন্তে ফলাতে পারেন। চাষাবাদকে যেন কৃষক লাভজনক ভাবে দেখতে পান।

সর্বপরি খাদ্য নিরপত্তায় অবদান রাখা। লক্ষ্য করবেন, কৃষি এখন শুধু কৃষি কাজ নয়, কৃষি ব্যবসায় রুপান্তর হচ্ছে। মোট কথা কৃষককে লাভজনক অবস্থায় নিয়ে গিয়ে তাদের জীবন মান উন্নয়নই পারটেক্স এগ্রো’র মূল উদ্দেশ্যে বা লক্ষ্য।

বাংলাদেশে কিন্তু বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কৃষি ব্যবসায় আসে নি। কারণ হলো আয়ের দেখা পেতে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় এবং এখানে মুনাফার পরিমাণও খুবই কম। মূলত একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসাবে দাঁড় করানোর জন্যই কাজ করে কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

যেমন ধরেন, আমরা থাইল্যান্ড থেকে টমেটোর উনড়বত জাত ঝিলিক ১৫ নামের একটি জাত বাজারজাত করছি। এই জাতের টমেটোর ১টা গাছ থেকে ১৩ কেজি টমেটো পাওয়া যাবে। এই জাতের বীজ মুনাফা ছাড়াই কৃষকের মাঝে দিচ্ছি। ইচ্ছে করলে অনেক দামে বিক্রি করা যেত। না করার কারণ হলো কৃষককে সমৃদ্ধশালী করা। দেশে প্রচুর পরিমাণে টমেটো আমদানি করতে হয়, এটা যেন না করতে হয়। আমরা ডাল জাতীয় ফসল, কাঠবাদাম নিয়েও কাজ করছি।

কৃষক যেন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়। আমরা চাই তার ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করুক। আমরা একেবারে কৃষকের দোড়গোড়ায় কৃষি সেবা নিয়ে যেতে চাই। জেলা থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন এরপর প্রতিটি গ্রাম। দেশের মোট এক কোটি ৪৬ লাখ কৃষকের মধ্যে অন্তত ৫০ লাখ কৃষকের কাছে যেন যেতে পারি সেটাও একটা লক্ষ্য।

এছাড়া ধীরে ধীরে কৃষির প্রতিটি খাতে আমাদের যাওয়ার আগ্রহ রয়েছে। ফিস, পোল্ট্রি, কোল্ডস্টোরেজ, টিসু কালচার, এনিমেল হেলথ নিয়ে কাজ করবে প্রতিষ্ঠানটি। ফুলকে সতেজ রেখে রপ্তানী করতে পারি সেই প্রযুক্তি নিয়েও কাজ চলছে। আলু নিয়েও বেশ কিছু কাজ রয়েছে আমাদের।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: এ খাতের বাজারব্যবস্থা কেমন চলছে বলে মনে করেন।

আইয়ুব আলী: অনেক সময়ে বলতে শোনা যায় সবজির দাম অনেক বেশি। কিন্তু আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে দেখি যে কোনো সবজি যদি কৃষক ৪০ টাকার নিচে বিক্রি করেন তাহলে তার মুনাফা হবে না। শ্রমিক, কীটনাশক, সারসহ নানা উপকরণে একজন কৃষকের অনেক খরচ হয়।

এর পাশাপাশি প্রাকৃতিক দূর্যোগ তো আছেই। তাই কৃষক যেন ন্যায্য দাম পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আর কৃষককে লাভবান করতে হলে উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর উৎপাদন বাড়ানোর প্রধান শর্ত হলো ভালো মানের বীজ সরবরাহ।

যেমন ধরুণ, আমরা ঢেরশের শোভা নামের একটি জাত নিয়ে আসছি। একটি গাছ থেকে ৫৬ বার ফসল তোলা যাবে। তিনমাস ফলন থাকবে। এ ধরণের ফসল আনতে পারলেই কৃষক লাভবান হবেন। আমাদের কৃষকরা জমি, নিজের শ্রমের দাম ধরেন বলেই বলেই তারা লাভ কিছুটা বুঝতে পারেন। অথচ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সব কিছু ধরে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দীর্ঘ সময় ধরে কৃষির সঙ্গে কাজ করার কিছু অভিজ্ঞতা জানাবেন।

আইয়ুব আলী: আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কীটতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর এমবিএ কোর্স সম্পন্ন করি। আমার প্রায় ৩২ বছর ধরে কৃষি ব্যবসার সঙ্গে পথচলা। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে যেটা সবচেয়ে বেশি দেখেছি তা হলো বাংলাদেশের কৃষক বঞ্চিত, অবহেলিত, কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাঞ্চিত।

কারণ হলো এ দেশের কৃষকরা সারের জন্য রক্ত দিয়েছেন। অথচ আমাদের এই কৃষকরা অনেক বড় গবেষক, সৃষ্টিশীল। অনেক নতুন নতুন সৃষ্টিশীলতা রয়েছে দেশের কৃষকের মাঝে। চলনবিলের দিকে তাকালে দেখা যায় কৃষকদের উদ্ভাবিত চাষ ছাড়াই কাঁদার মধ্যে রসুনের আবাদ করছে কৃষকেরা।

আবার কৃষকরা বিজ্ঞানী না হয়েও তারা অনেক বড় বড় উদ্ভাবন করছে। আগাম ফসল চাষাবাদ এর মূল কারিগর কিন্তু কৃষক। খাদ্য নিরপত্তায় তারাই সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে। আমার অভিজ্ঞতা বলে ভালো মানের প্রযুক্তি নির্ভর সেবা দেয়া যায় তাহলে কৃষি ব্যবসাও লাভের মুখ দেখবে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: এ মহুর্তে কৃষি ব্যবসায় মূল চ্যালেঞ্জ কী বলে মনে করেন?

আইয়ুব আলী: বর্তমানে কৃষি ব্যবসায় মূল চ্যালেঞ্জ হলো বাকিতে পণ্য বিক্রয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক নগদে কৃষি উপকরণ কিনতে পারেন না। ফসল উঠার পরে টাকা পরিশোধ করেন। আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ হলো কৃষি আবহাওয়া। ২০১৭ সালে যে বৃষ্টি হয়েছে তা কিন্তু গত কয়েক বছরে হয় নি। জলবায়ু পরিবর্তনও বড় চ্যালেঞ্জ। আশ্বিন মাসে বর্জ্য বৃষ্টি হচ্ছে। এ বছর চারবার বীজ কিনতে হচ্ছে কৃষককে। তাই কৃষকের ওপর ভূর্তিকি কমানো যাবে না। তবে হ্যাঁ বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার হওয়ায় কাজটা সহজ হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পারটেক্স এগ্রো নাটোরে বড় একটি কাজ করতে যাচ্ছে, এ বিষয়ে কিছু বলবেন।

আইয়ুব আলী: নাটোরে আমরা আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর একটি বীজ প্রক্রিয়া জাতকরণ কেন্দ্র গড়ে তুলছি। এছাড়া এখানে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান হবে। সীড টেকনোলোজির ওপর একটা ল্যাবরেটরি হবে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পারটেক্স এগ্রো’র বাজার ব্যবস্থাপনা এবং কীভাবে কৃষকের সঙ্গে কাজ করছে, এ বিষয়ে কিছু বলবেন।

আইয়ুব আলী: আমাদের ১০০ জন কৃষিবিদ, বিজ্ঞানী, বাজারজাতসহ অন্যান্য কর্মী রয়েছেন। দিন যতই যাচ্ছে এর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া আমাদের সরাসরি ৪০০ ডিলার এবং ৩০০০ রিটেইলার রয়েছেন। ৪০০০ হোল সেলার রয়েছেন।

বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ কৃষক আমাদের বীজ ব্যবহার করেন। এসব কৃষকদের জীবনমান ও চাষাবাদ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো কৃষক। ১৫ লাখ কৃষি পরিবারকে আমরা সরাসরি সহায়তা দিচ্ছি। আমাদের ৭৮ জন কর্মী রয়েছেন যারা মাঠে সরাসরি কৃষকের সঙ্গে কাজ করেন।

কৃষকদের শিক্ষা লাভের জন্য কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিডিও চিত্র তৈরি করি। তা প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া আমাদের নিজস্ব পণ্যের ওপরও এসব চিত্র দেখানো হয়। এর পরিসর দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কীভাবে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে লাভবান হওয়া যায় এরকম থিম নিয়ে তৈরি করা নাটক প্রত্যেক দিন গ্রামে সন্ধ্যার পরে প্রদর্শন করি। বিনোদনের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে তুলছি। এগুলোর মাধ্যমে কৃষকের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। আমরা বলি, অনেকেই বিদেশে গিয়ে ছোট কাজ করছেন, তারা কিন্তু কৃষি কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। আমাদের থিম হলো কৃষিকে অবহেলা না করে কৃষিকে ব্যবসা হিসাবে নাও।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কৃষিতে ক্যারিয়ার সম্পর্কে কিছু বলবেন।

আইয়ুব আলী: কৃষিতে সব সময়ই উজ্জল ক্যারিয়ার আছে। কেননা এর ব্যবসার কোনো শেষ নেই। দুনিয়া যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন খাদ্যের দরকার হবে। আর খাদ্যের যোগানটা আসবে কৃষি থেকেই। এছাড়া এখন সময়পোযোগী প্রযুক্তি এসেছে। চাইলে যে কেউ এখান থেকে ভালো মানের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কৃষকদের বীজ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে?

আইয়ুব আলী: মাঠ পর্যায়ে মূল সমস্যা হলো কৃষকের বাড়িতে বীজ রাখার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। কৃষক বীজ সংরক্ষণ করে রাখতে পারলে তার জন্য বেশ সুবিধা হয়। অনেক সময়ে বীজ কিনে নিয়ে আসলো, কিন্তু প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে বপন করতে একটু দেরি হলো, ওই সময়ে ভালোভাবে বীজ সংরক্ষণ করতে পারলে তার জন্য ভালো হয়। আমাদের দেশে এ রকম ব্যবস্থা নেই। খুচরা ব্যবসায়ীদেরও এ বিষয়ে তেমন ব্যবস্থা নেই। তবে বিদেশে কিন্তু এই ব্যবস্থাপনা আছে। এগুলোর দিকে নজর দেয়া উচিত।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আপনাকে ধন্যবাদ।

আইয়ুব আলী: আপানাকেও ধন্যবাদ।

 

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৮