দেশের পোল্ট্রি শিল্পে যন্ত্রপাতি প্রক্রিয়াজাত পোলট্রিজাত পণ্যের মেশিনারি এবং কারিগরি সহায়তা দিয়ে গ্রাহকের সর্বোচ্চ আস্থা অর্জন করেছে অন্যতম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এক্সন। সততা, কমিটমেন্ট আর স্বল্প মূল্য এই তিন নীতির উপর ভর করে ১৬ বছরে পা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

দেশে পোল্ট্রি প্রক্রিয়াজাত হিমায়িত মাংসের যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে তাদের প্রায় সবাই কারিগরি এবং যান্ত্রিক সহযোগিতা নিয়েছে এক্সন থেকে। এর বাইরে প্রক্রিয়াজাত হিমায়িত খাদ্য তৈরির বিভিন্ন পাউডার মসলাজাতীয় উপাদান আমদানি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করছে এক্সন। সম্প্রতি এক্সন মাছের প্রক্রিয়াজাত হিমায়িত খাদ্য তৈরি বিপণনও শুরু করেছে। যার ব্র্যান্ড নাম (সিপ)

 এক্সন এর চাকাকে সচল ও উজ্বল করে রেখেছেন জাহিদুল ইসলাম। যে সময় দেশের অধিকাংশ মানুষ পোলট্রি মাংসের সাথেই খুব বেশি পরিচিত হয়ে উঠে নি সেই সময়েই পোল্ট্রিজাত হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতের স্বপ্ন দেখা এই মানুষটি নিজেকে মনে প্রাণে একজন কৃষক ভাবেন। দেশের কৃষিকে সেবা দেয়াই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। সম্প্রতি এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর সাথে এক্সন নিয়ে কথা বলেছেন জাহিদুল ইসলাম। তারই চুম্বক অংশ সাক্ষাতাকার আকারে তুলে ধরা হলো। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আবু খালিদ।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সাধারণত পড়াশোনা ও বেড়ে ওঠা দেশের বাইরে হলে কেউ দেশে আসেন না। কিন্তু আপনি ব্যতিক্রম। বিদেশ ছেড়ে দেশের কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যবসার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করার কারণ কী?

জাহিদুল ইসলাম: আপনি ঠিকই বলেছেন, আমার পড়াশোনা ও বড় হয়ে ওঠা বিদেশে। মূলত বিয়ের উদ্দেশ্যে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে আসি। এখানে আমার শশুরের পরিবারের পোল্ট্রি শিল্পে বড় আকারের ব্যবসা ছিলো। উশা গ্রুপ। একদিন শশুড় বললেন এতো বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে, দেখো এখানে থেকে কিছু করা যায় কি না। তখন পরিচালক হিসেবে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়েই শুরু হয় পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে যাত্রা। দু বছর কেটে যায়।

এরই মাঝে হঠাৎ করে উশা গ্রুপের ৬ থেকে ৭টি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দেয়া হয়। তখন আমি অনেকটা উৎসাহ হারিয়ে ফেলছিলাম। মনে মনে বলতে লাগলাম, ভালো লাগা শুরু করলো এ সময়েই সব বিক্রি করে দেয়া হলো। তবে আমি উষা গ্রুপে কাজ করার সময়ে বেশ কিছু গ্যাপ দেখেছি। ভাবলাম উশায় কাজ করার অভিজ্ঞতা আর নিজের সৃষ্টিশীলতা দিয়ে কিছু করা যায় কিনা।

এছাড়া আমাদের অনেক ইচ্ছে যে পোল্ট্রি শিল্পকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু সেই সময়ে প্রযুক্তির অভাব ছিলো তীব্র। উষায় থাকার সময়ে বেশ কিছু বিদেশী ও ইউরোপিয়ান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরিচিতিও ঘটে। বেশ কিছু যন্ত্র পাতিও কিনেছিলাম। এরপর স্বল্প পুঁজি নিয়ে কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা ছাড়াই একটা চ্যালেঞ্জ নিলাম, যে দেখি কিছু করা যায় কিনা এ শিল্পে।

সার্ভিস দেয়া শুরু করলাম। বিদেশী প্রতিষ্ঠানদের আহ্বান জানালাম। বিভিন্ন সেবা দেয়ার মাধ্যমে আমি বাংলাদেশে ইনোভেটিভ প্রযুক্তি দরকার এটা বোঝানো ও পরিচিতি করা শুরু করলাম। আমি যখন এটা শুরু করি তখন দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের চোখে পড়ে। যেমন কাজী ফার্মস, নারিশ, সিপি, আফতাব, প্রভিটা, প্যারাগনসহ একাধিক নামকরা বাণিজ্যিক প্রতিষ্টানগুলোর চোখে পরলে তারাও আমাদের বিজনেস দেয়া শুরু করে।

এভাবে কাজ করতে করতে বিদেশী কিছু নামকরা ও প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। ভালো ব্র্যান্ডের কিছু পণ্যসামগ্রী নিয়ে আসা শুরু করলাম। সেবার মান ভালো হওয়ায় ব্যবসা দ্রুত প্রসারিত ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠলো।

এরই মাঝে এসোসিয়েশনে যুক্ত হলাম। ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি)’র ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছি। নিয়মিত সবকিছু করতে করতে এই পর্যন্ত এসেছি। দেশের কৃষি শিল্পকে আপন করে নিয়ে পথ চলছি।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পোল্ট্রি শিল্পে নতুন প্রযুক্তি বিস্তৃতির অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিছু বলেন।

জাহিদুল ইসলাম: আমি অনেক সময়ে খেয়াল করে দেখেছি যে, বাংলাদেশে আমরা ঠিকই উন্নযন করছি, শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছি, কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে থেমে যাচ্ছি। সেটার কারণ হলো ভার্টিক্যালি ইন্টিগ্রেশন নাই। ধরুণ একটা চিনেক ফ্রাই করলাম। এরপর এটা নিয়ে আরও কী কী করা যায় এসব নিয়ে তেমন কোনো কাজ নেই আমাদের। এসবের ওপর কিছু গবেষণা করি,  বেশ পরিশ্রমও করতে হয়, এখনো করছি।

এরপর ভাবলাম ফ্রোজেন ফুড, এটা তো করা যায়। কেন আমরা ফার্ম টু টেবিল এই কনসেপ্টটা ডেভেলপ করছি না। তখন আমি প্রথম সোর্সিং করি এবং আফতাবে ওদের নাগেটস ফুডস তৈরির প্রযুক্তিটি প্রথম সরবরাহ করি।

মেশিনারিজ থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরণের সহায়তা দেই। শুরুতে কিন্তু এটাকে মানুষ খুব নেতিবাচক ভাবে নিয়েছে। বাংলাদেশে সসেজ, এটা কে খাবে। কিন্তু আমার একটা ভিশন ছিলো অবশ্যই খাবে। যেহেতু আমরা আমদানি করে আসছি। আমরা যদি বলি এই জিনিসটা এইভাবে খেতে হবে তাহলে অবশ্যই খাবে। সারাবিশ্বে কিন্তু এসব আছে।

আমদের দেশের মানুষও ইউরোপ আমেরিকা ঘুরছে থাকছে তারাও তো খাচ্ছে, তারা যদি দেশে এসে এসব পণ্য পায় তাহলে কেন খাবে না? এরপর সিপি যখন সসেজ নিয়ে আসলো তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আমাকে নক করা শুরু করলো, কীভাবে এটা করা যায়, কেমন বিনিয়োগ, এমন নানা প্রশ্ন করতে থাকে।

কাজী, ব্র্যাক, বেঙ্গল, ইয়ন, আফতাব, প্রভিটা, প্যারাগন, প্রাণ, এজিসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় সব প্রতিষ্ঠান আমাদের ক্লায়েন্ট। আমরা শিখেয়েছি। আমরাই প্রযুক্তির উন্নয়ন এর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি।

এরপর ভাবলাম এখন কী করা যায়। এর বাইরেও তো পণ্য আছে। যেমন পরেটা সমুজা এগুলো ডেভেলপ করতে থাকি। আমার পরিচিতিটা ফ্রোজেন ফুডের দিকে এগুতে থাকে। ব্যবসায় যদি আপনি সততা ও কমিটমেন্ট রাখেন তাহলে কিন্তু ওই ধরণের সংশ্লিষ্ট প্রজেক্ট কেউ শুরু করতে গেলে আপনাকেই বলবে আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন।

দেখা যায় অনেকেই বিভিন্ন ধরণের সেবা চেয়ে বসেন। আমরাও এগুতে থাকি। এভাবে এরপর টোটাল সার্ভিসে যোগ দেই এবং তা পুরোপুরি দিতে সমর্থ হই। ফার্ম টু ফুড সম্পূর্ণ প্রযুক্তি আমরাই প্রথম সরবরাহ করছি। 

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পোল্ট্রির বাইরেও তো এখন কাজ করছেন?

জাহিদুল ইসলাম: পোল্ট্রি নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি এখন মাছ, ডেইরী নিয়ে কাজ করছি। ফার্ম টু টেবিলে খাবার সরবরাহ পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রযুক্তিগতসহ আনুসঙ্গিক সব ধরণের সেবা আমরা দিচ্ছি। এ ধরণের পণ্য তৈরি করতে গেলে আপনার নির্দিষ্ট কিছু উপকরণ দরকার হয়।

যেমন মশলা, সসেজ, কেসিংসহ একাধিক উপকরণ। এগুলো সবাই জানেও না। এসব আমি ডেভেলপ করি। এক বছর ধরে শুরু করেছি আমরা এখন মার্কেট লিডার। 

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ক্রেতা বা ব্যবসায়ী ধরে রাখার জন্য এক্সন এর মূল মন্ত্র কী?

জাহিদুল ইসলাম: একজন ব্যবসায়ী বা ক্রেতা দেখছেন যে, আমি তার কাছ থেকে কী পাচ্ছি! মেশিনারিজ পাচ্ছি, টেকনোলজি পাচ্ছি, এগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শও পাচ্ছি। এক জায়গায় থেকেই সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে।

সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো আমরাও খুব গর্ববোধ করি আমাদের কাছ থেকে কেউ সেবা নিলে অন্যখানে যায় না। কারণ হলো আমাদের সেবাই হলো প্রথম ও মুখ্য। 

আমাদের এখানে যারা কাজ করেন তারা সবাই সার্ভিস রিলেটেড। আমরা তিনটা বিষয়ে বিশ্বাষ করি তাহলো কমিটমেন্ট, কমিটমেন্ট দিলে তা শতভাগ রক্ষা করা হয়, দ্বিতীয় হলো সার্ভিসটা খুবই স্বল্প মূল্যে দেই এবং তৃতীয় হলো অবশ্যই সার্ভিসের গুণগত মান শতভাগ রক্ষা করি। আমাদের যাদের যারা ক্লায়েন্ট আছেন তারা কিন্তু খুবই নির্বাচিত। আমরা তাদের সাথেই কাজ করি যারা এই মর্যাদাটা দেয় ও বুঝতে পারে।

দেখা গেছে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ব্যবসায়ীরা আমাদের সার্কেলের মধ্য পরে গেছে। আমরা প্রায় বিদেশের ৩৫ থেকে ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করছি। এবং এসব প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ডের দিক দিয়েও প্রথম সারিতে আছে। এসব প্রতিষ্ঠান অধিকাংশ আমেরিকা ও ইউরোপ মহাদেশের।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রেষ্টুরেন্ট নিয়েও তো আপনার কাজ রযেছে।

জাহিদুল ইসলাম: পোল্ট্রির পর আমরা রেষ্টুরেন্টের দিকে মযোযোগ দেই। যেহেতু ফুড আমার প্যাশন। আমি নিজেও রান্না করতে পছন্দ করি। অনেকেই বলতে শুরু করলেন যে আমাদের বিক্রির ব্যবস্থা করে দেন। নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করা বা আউটলেট দেয়া এসব বিষয়ে অনেকেই পরামর্শ চাইতে শুরু করলেন।

রেস্ট্রুরেন্ট লেবেলে আমি তাদের সেটেল করে দেয়া শুরু করি। আইডিয়া, ইকুপমেন্টসসহ নানা সেবা দেয়া শুরু করলাম। এভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফুড ডেভেলপ করে দিয়েছি।

মোট কথা একটা গাছ লাগাবেন সেই গাছ লাগানো থেকে শুরু করে গাছের ফল সংগ্রহ, সরবরাহ, রেস্টুরেন্টে পরিবেশন অর্থাৎ ফার্ম টু টেবিল পর্যন্ত আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

ভোক্তা লেবেল পর্যন্ত যত প্রযুক্তির দরকার হয় তার সবই আমরা সরবরাহ করছি। আমরা শাকসবজি নিয়েও কাজ করছি। স্টোরেজ, রপ্তানীযোগ্য পণ্য তৈরি ও রপ্তানী এসব নিয়েও নিয়ে কাজ করছি। আমরা সব ধরণের সাপোর্ট দেই।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশে এক্সন’ই প্রথম বৃহৎ আকারে মাছের নাগেটস, বলসহ নানা আঙ্গিকে পণ্য তৈরি করছে, এ বিষয়ে কিছু বলবেন।

জাহিদুল ইসলাম: আমাদের দেশে মাছের উৎপাদন ও চাষ দুই বাড়ছে। কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার খুব বেশি করতে পারছি না। এসব ভাবনা থেকে আমি মাছ নিয়ে কাজ করা শুরু করলাম। এবার আমি নিজেই ফিস একটা ফ্যাক্টরি করি।

চিকেন নাগেটস, চিকেন বল যেভাবে করা হয় ঠিক সেভাবে একই স্টাইল ও ধারণা নিয়ে ১০০ ভাগ মাছ ব্যবহার করে সিপ ফিস নাগেটস, বল তৈরি করে বাজারজাত শুরু করি। আমাদের ফিস ফিঙ্গার, ফিস বল, শ্রিম্প বল, ফিস নাগেটস, ক্যাজুয়ান শ্রিম্প বাইটস এবং ক্রিসপি ফিস বল এ ৬টি পণ্য দিয়ে আপাতত যাত্রা শুরু হয়েছে।

প্রসেসিংয়ে মাছের প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে আমরাই প্রথম কাজ শুরু করছি। মজার বিষয় হলো গত কয়েক মাসে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি, তা ক্রমাগত বাড়ছে। সবাই যেন খেতে পারেন তেমন একটা দাম নির্ধারণ করেছি। আমদানি করা এ ধরণের পণ্য যদি আনেন তার দাম আড়াই থেকে তিনশ টাকা লাগবে।

আমরা দেড়শ টাকায় বিক্রি করছি। মাছের ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি, বাচ্চাদের কাছে যেন মাছ পৌঁছায়, প্রোটিন যেন পায় মূলত এসব লক্ষ্যে মাছ নিয়ে আমাদের এই কাজ। আমাদের সবচেয়ে বড় কাস্টমার হলো বাচ্চারা। ফিস ফিঙ্গার, ফিস নাগেট এগুলো বাচ্চারা খুব পছন্দ করে। এই একটা ইনোভেশন উদ্বোধন করেছি।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: এক্সন ও নিজের সম্পর্কে কিছু বলেন।

জাহিদুল ইসলাম: এক্সন খুব ছোট একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এর কার্যক্রম, নেটওয়ার্ক, দায়িত্ব অনেক বড়। এক্সন মূলত ফার্মিং নিয়ে কাজ করে। আমাদের দশভাগের এক ভাগ কাজ হলো প্রক্রিয়াজাতকরণ। মূলত ফার্মিং, হ্যাচারি, খাবার তৈরির মিল কারখানা, স্টোরেজ করা, কমার্সিয়াল খাঁচায় রাখা, ফুড প্রসেসিং, প্রোসেসিং ফ্রোজেন এরপর রেস্ট্ররেন্ট, আউটলেট, কিচেন। এসবের সবই আমরা করছি।

আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। অনেক প্যাশন, ভিশন আছে। বাংলাদেশে বড় হই নি, তবে এখন দেশের সাথে যেন মিশে গেছি। বাংলাদেশে যে আন্তরিকতা পেয়েছি তা বাইরে পাই নি। যতদিন আছি ততদিন দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাবো। মানুষের সম্মানটা বড় জিনিস, এই সম্মানটা কিন্তু আমরা পাচ্ছি। এবং এটা উপলব্ধি ও উপভোগ করছি। আমরা বিভিন্ন সময়ে নানা ভাবে সহযোগিতা করে থাকি। নিজের হাতে সহযোগিতা করি। আমরা কিন্তু একটি পরিবারের মতো থাকি। এখানে কেউ চাকরি করে না।

সবাই কিন্তু মানি এবং পাওয়ার চায়। আমি কিন্তু এদের দলে নই। আমি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের মানুষ। বাবা ও শশুড়ের পরিবার উভয়ই দিক থেকেই আমরা অনেক বেশি হাই প্রোফাইলের। সততা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি, উপভোগ করছি।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আমার অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ শোনার জন্য ডাক দেয়। আমি কিন্তু বিনা পারিশ্রামিকে গিয়ে তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ শেয়ার করি। যখন সম্পর্কটা উন্নয়ন হয় তখন উনি যদি এমন কিছু করেন যে আমার তাতে সংশ্লিষ্টতা আছে তখন উনি আমার কাছ থেকে পণ্য ও সেবা নেন।

বাংলাদেশে কাজ করতে গিয়ে অনেক ধরণের বিষয় চোখে দেখেছি। অনেকেই কুইক মানির জোরে দ্রুত ধনী হতে চান। আমাদের তা দরকার নাই। কারণ আমরা জন্মগ্রহণই করছি একটি স্ব-শিক্ষিত পরিবারে। সবাই শিক্ষিত। যে পরিবারে শিক্ষা আছে তাদের খুব বেশি দরকার হয় না।

আমি সেটাই শিখি যে, আমি একা নয় আমরা সবাই বেনিফিটেড হবো। আমি কোনো প্রডাক্ট বিক্রি করি না যতক্ষন পর্যন্ত আমি সেই প্রডাক্ট সম্পর্কে না জানি। 

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কৃষিতে কেমন কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন?

জাহিদুল ইসলাম: কৃষিতে অনেক কিছু করার আছে। শুধু লাভ লোকসান না দেখে দেশের উন্নযন হবে এমন চিন্তা থেকে কাজ করলে অনেক কিছু করা সম্ভব। যে দেশের জনসংখ্যা বড় আর সেই দেশ যদি কৃষি নির্ভর হয় তাহলে সেই দেশে কাজ করার অনেক কিছু আছে।

আমাদের কিন্তু দুটাই আছে। সুতারাং প্রচুর সুযোগ আছে। আহ্বান করবো উদ্যোক্তাদের যে, আমরা যেন কৃষি নিয়ে আগাই। নিজের দেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি বাইরে রপ্তানীর করার অনেক সুযোগ আছে।

আশেপাশের দেশগুলো ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত এতো রপ্তানী করছে মাংস, মাছ, শাকসবজি এবং এদের বাই প্রডাক্টস। আমাদের এতো থাকার পরও আমরা বাইরের লোকের ওপর নির্ভর করছি।

আমাদের পণ্যকেই অনেক কিছু করার যায়। আমার কাজ সংশ্লিষ্ট কারো যদি কিছু জানার থাকে আমার কাছে আসুন, আমি শিখাবো। আমি সারাদিন এগুলো নিয়েই কাজ করি। বিদেশসহ বিভিন্ন জায়গায় কেউ যদি কিছু করতে চায় তাহলে বিনা পারিশ্রামিকে পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দিবো।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কাজ করার উদ্যোমটা বা অনুপ্রেরণা কোথায় পান?

জাহিদুল ইসলাম: আমার অনুপ্রেরণাটা মূলত আসে উষা কোম্পানিতে পরিচালক হিসেবে কাজ করার সময়ে। তখন এখন আমি শক্তি পাই ইন্ড্রাস্ট্রি থেকে। ইন্ড্রাস্ট্রির চাহিদা, কার্যক্রম এগুলো থেকে। বাংলাদেশের জনগণের যে সম্মান ও কৃষির যে সম্ভাবনা, সুযোগ রয়েছে এগুলো থেকেও অনুপ্রেরণা পাই। 

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: উদ্যোক্তাদের প্রতি কিছু বলবেন।

জাহিদুল ইসলাম: কৃষিতে ভবিষ্যত অবশ্যই ভালো। তবে সঠিক দিকনির্দেশনা ও পন্থায় এগুতে হবে। অর্থ্যাৎ প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্পূর্ণই ভাবনা ও জ্ঞান থাকতে হবে। শুধু জানলে হবে না কীভাবে এর ব্যবহার করা যাবে তার সম্পর্কেও পুরো দক্ষতা থাকবে হবে। 

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আমাদের দেশে বাজার ব্যবস্থা কেমন, কোনো প্রতিবন্ধততা আছে কিনা?

জাহিদুল ইসলাম: আমাদের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা হলো পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই। কৃষির চাষ সম্পর্কে জ্ঞান আছে কিন্তু এটাকে ব্যবহার করে রপ্তানী যোগ্য পণ্য হিসেবে গড়ে তোলা, প্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন পণ্য হিসেবে তৈরি করার জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা খুবই কম।

এগুলো নিয়ে সরকারকে প্রচারণায় আসতে হবে। বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। সরকারের উচিত কৃষি খাতকে প্রধান করে সেটাকে লাভবান করতে দেশের স্বার্থে যেসব কাজ করা দরকার তা হাতে নেয়া।

রিসোর্স ও নলেজ দরকার তা সরকারকে সরবরাহ করতে হবে। সঙ্গে নিতে হবে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। রপ্তানীর জায়গায় সরকারকে মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে। 

প্রক্রিয়াজাত করণ খাবারে সরকারের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। নরমাল মশলা আমদানি করতে যে খরচ পড়ছে আবার প্রক্রিয়াজাতকরণের মশলাতেও একই খরচ। এগুলো নিয়ে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এতে নতুন উদ্যোক্তারা অধিক উপকৃত হবেন।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আমরা সরকারের কাছে কী এসব উপস্থাপন করতে পারছি?

জাহিদুল ইসলাম: চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বিভিন্নভাবে সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। তবে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি মনে করি সরকার চাইলে এই খাতকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে।

গার্মেন্টসকে যে চোখে দেখা হয় তার দশভাগের এক ভাগ দেখলেই যথেষ্ট। আমাদের চাষা না ভেবে গ্রোয়িং শিল্প ভাবলেই চলবে। গার্মেন্টস খাতের চেয়ে এই খাত এসব সুযোগ সুবিধা পেলে বেশি আয় সম্ভব। কেননা দেশের বৃহদাংশ মানুষের সম্পৃক্তা রয়েছে এই খাতের সঙ্গে। পোল্ট্রি খাতের বিস্তৃতি হওয়ায় এখন দেড়শ টাকায় ব্রয়লার মুরগির পাওয়া যাচ্ছে। হাতের নাগালে ডিম পাচ্ছি।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ভবিষ্যতে নিজেকে কীভাবে দেখতে চান?

জাহিদুল ইসলাম: একজন কৃষক হয়ে থাকতে চাই। প্রক্রিয়াজাতকরণ, ফার্মিংয়ে ফিস, ডেইরী, পোল্ট্রি এগুলোর উন্নত করতে যে ধরণের প্রযুক্তিগত যে উন্নয়ন দরকার তা করতে চাই। আরও উন্নত প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প দেখতে চাই। অধিক ধরণের গুণগত মান রক্ষা করে প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবারের পরিমাণ বৃদ্ধি হোক।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে কোনো বার্তা আছে কিনা?

জাহিদুল ইসলাম: সম্মিলিত ভাবে কাজ করার আহ্বান জানাবো। আমাদের সবার উদ্দেশ্যে এক হওয়া উচিত। গুণগত মান ধরে রেখে পণ্য তৈরি করা, যেন সেই পণ্য সবাই গ্রহণ করতে পারেন। বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের কথা চিন্তা করে যেন তারা পণ্য তৈরি করেন এটাই আমার চাওয়া।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আপনাকে ধন্যবাদ।

জাহিদুল ইসলাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।