গলদার রেণু উৎপাদনে সফলতা

মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সীমাবদ্ধতার মাঝেও গলদার রেণু উৎপাদনে সফলতা মিলেছে। বেসরকারি বাণিজ্যিক হ্যাচারি বন্ধ থাকায় সরকারি বাগেরহাট সরকারি মৎস্যবীজ খামারে গলদার রেণু উৎপাদনে সফলতা পাওয়ায় পোনার সংঙ্কট অনেকটাই কমে আসবে।

এ খামার থেকে অন্তত আড়াই লাখ রেণু উৎপাদন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। চাহিদার তুলনায় এটা অনেক কম হলেও সীমিত বিনিয়োগ ও জনবল সংকটের মাঝে এ সফলতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন চিংড়ি খাত সংশ্লিষ্টরা।

এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যম বণিক বার্তা সীমাবদ্ধতার মাঝেও গলদার রেণু উৎপাদনে সফলতা শিরোনামের সংবাদ প্রকাশ করেছে। বাগেরহাট প্রতিবেদক আলী আকবর টুটুল এর প্রতিবেদনটি নিচে তুলে ধরা হলো।

বাগেরহাট সরকারি মৎস্যবীজ খামার সূত্র সংবাদ মাধ্যমটিকে জানায়, ১৯৬৪ সালে বাগেরহাট শহরতলির গোবরদিয়া নামক স্থানে ৮ দশমিক ৪ একর জমির ওপর মত্‍স্যবীজ উৎপাদন খামার প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৫৪ বছর অর্থাৎ ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ খামারে শুধু সাদা মাছের রেণু ও চারা পোনা উৎপাদন হয়ে আসছিল।

২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো এ খামারে গলদা রেণু উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়। ওই বছর এক লাখ রেণুর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে দুই লাখ অর্থাৎ দ্বিগুণ রেণু উৎপাদনে সক্ষম হন খামারের কর্মীরা। এ সফলতার ধারাবাহিকতায় এবার গলদা রেণু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে আড়াই লাখ। এরই মধ্যে ১০৫টি মা চিংড়ি থেকে প্রায় ছয় লাখ লার্ভা সংগ্রহ করা হয়েছে। সাতদিনের মধ্যে এগুলো রেণু পোনা হিসেবে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, খামারটির মূল সমস্যা বাজেট ও লোকবল। একজন করে টেকনিশিয়ান, হ্যাচারি অ্যাটেন্ড্যান্ট, ক্ষেত্র সহকারী, অফিস সহকারী ও দুজন নৈশপ্রহরী নিয়ে খামারটি পরিচালিত হচ্ছে। আর রেণু উৎপাদনে বাজেট মাত্র ৮০ হাজার টাকা।

এ বাজেট ও জনবল দিয়ে দুই লাখ রেণু উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। পর্যাপ্ত অর্থ ও জনবল পাওয়া গেলে এ খামারে বাণিজ্যিকভাবে গলদার রেণু উৎপাদন করে আয়ও বাড়ানো যাবে। কারণ শুধু বাগেরহাটেই প্রতি বছর দু-তিন কোটি গলদা চিংড়ির রেণুর চাহিদা আছে।

খামারের ব্যবস্থাপক নির্মল কুমার কুণ্ডু বলেন, যখন একের পর এক হ্যাচারি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা উদ্যোগ নিই গলদা চিংড়ি রেণু উৎপাদনে। ২০১৯ সালে মাত্র ৮০ হাজার টাকার সরকারি বাজেট নিয়ে রেণু উৎপাদনের চেষ্টা করি। প্রথম বছরেই আমরা সফল হই।

তিনি বলেন, এক লাখ রেণুর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে দুই লাখ উৎপাদন করতে সক্ষম হই। চলতি বছর পিরোজপুরের বলেশ্বর নদী থেকে ১০৫টি মা মাছ সংগ্রহ করি। মাছগুলো থেকে প্রায় ছয় লাখ লার্ভা পাওয়া গেছে, যা কয়েক দিনের মধ্যেই রেণুতে পরিণত হবে। আশা করি, এ দিয়ে প্রায় আড়াই লাখ রেণু হবে।

তিনি আরো বলেন, ৫৫ বছর আগের জনবল কাঠামো দিয়ে এ প্রতিষ্ঠান চলছে। সক্ষমতা ও উৎপাদন বাড়াতে হলে আগে জনবল ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন।

বাগেরহাট জেলা চিংড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন জানান, এ জেলায় বার্ষিক দুই থেকে তিন কোটি গলদা চিংড়ির রেণুর চাহিদা আছে। তার ওপর জেলার সব গলদা চিংড়ি হ্যাচারি বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি মৎস্যবীজ খামার দুই বছর ধরে গলদা চিংড়ির রেণু উৎপাদন করছে। এটা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হলেও আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক। চিংড়ি শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে সরকারিভাবে আরো বেশি পোনা উৎপাদন করা প্রয়োজন। আর প্রয়োজনীয় পোনা উৎপাদন না হওয়া পর্যন্ত প্রাকৃতিক উৎস থেকে পোনা সংগ্রহের অনুমতি দেয়া দরকার।

বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএফএম শফিকুজ্জোহা বলেন, খামারবাড়িতে যে রেণু উৎপাদন হয়েছে, আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। অল্পদিনের মধ্যে আমরাও গলদা রেণু উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করব।

জেলা মত্‍স্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বলেন, আমরা মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারে পরপর দুই বছর গলদা রেণু উৎপাদনে সফল হয়েছি। সাতদিন পর আমরা রেণু বিক্রি শুরু করব। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতেও আমাদের খামারে উৎপাদন থেমে নেই। বেসরকারি বাণিজ্যিক হ্যাচারিগুলো যদি আমাদের এ প্রযুক্তি নিতে চায়, আমরা তাদেরকে দেব।

গলদার রেণু উৎপাদনে সফলতা শিরোনামের সংবাদটির তথ্য বণিক বার্তা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: করোনায় রাজশাহীর হ্যাচারি মালিকদের ক্ষতি অর্ধ কোটি টাকা