চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত কোরবানির

ডেইরি, প্রাণি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চাহিদার ‍তুলনায় উদ্বৃত্ত কোরবানির পশু ৯ লাখ, বিক্রিতে দুশ্চিন্তা দেখা গেছে খামারিদের মাঝে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তাদের।

এ বিষয়ে প্রথম আলো সংবাদ মাধ্যমে ইফতেখার মাহমুদ এর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটি এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর পাঠকের কাছে তুলে ধরা হলো।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, এবার ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য ১ কোটি ১০ লাখ গবাদিপশু দরকার হবে। কিন্তু সারা দেশে খামারগুলোতে ১ কোটি ১৯ লাখ গরু-ছাগল-মহিষ-ভেড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারি হিসাবেই চাহিদার তুলনায় ৯ লাখ গবাদিপশু বেশি।

এদিকে গত তিন মাসে করোনা পরিস্থিতির কারণে নিয়মিত বাজারে অর্ধেকের কম গবাদিপশু বিক্রি হয়েছে। এই অবিক্রীত গরুগুলো কোরবানির হাটে ওঠার অপেক্ষায় আছে। এগুলোর পরিমাণ ১০ থেকে ১৫ লাখ।

দেশের প্রধান হাটের ঠিকাদারদের হিসাবে, গত বছরও হাটে তোলা গবাদিপশুর ১০ শতাংশ বিক্রি হয়নি। প্রায় ১০ লাখ গরু-ছাগল বিক্রি করতে না পেরে খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েন। তবে হাটের শুরুতে যাঁরা বিক্রি করতে পেরেছিলেন, তাঁরা লাভের মুখ দেখেছিলেন।

দেশের গরু-ছাগলের খামারিদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, সরকার এবার কোরবানির হাটের যে চাহিদা নিরূপণ করেছে, তা থেকেও ২০ শতাংশ গবাদিপশু কম বিক্রি হবে। কারণ, ক্রেতাদের হাতে টাকা নেই। খামার থেকে হাটে গরু নিয়ে আসার মতো পুঁজি নেই। এবার ট্রাকভাড়াও বেশি।

এ বিষয়ে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান জানান, করোনার কারণে মানুষের আর্থিক সামর্থ্য কমে এসেছে। ফলে অন্যান্য খাতের মতো গবাদিপশুর খামারিদের সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তবে আমরা খামারিদের অর্থসহায়তার ব্যাপারে কাজ শুরু করেছি। আশা করি এই সংকট কেটে যাবে।

ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, দেশে সারা বছরে যত গবাদিপশু বিক্রি হয়, তার অর্ধেকেরও বেশি হয় কোরবানির পশুর হাটে। দেশে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগে সারা দেশে দিনে ৪৫ কোটি টাকার গরু কেনাবেচা হয়েছে। সাধারণত মাংস বিক্রির জন্য কসাইদের কাছে এসব গরু বিক্রি হয়। কিন্তু গত মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে দিনে গড়ে ১০ কোটি টাকার বেশি গরু কেনাবেচা হয়নি।

সংগঠনটি বলছে, কোরবানির হাটে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে সরকার কতটুকু উদ্যোগ নেবে, তা নিয়ে তাদের সংশয় রয়েছে। কোরবানির হাট এমনিতেই অপরিচ্ছন্ন থাকে। গরু রাখার জায়গাগুলো যদি নিরাপদ দূরত্বে না থাকে, তাহলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।

জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম মনে করেন, করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে যে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের কাছে নগদ অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে এবার গরুর হাটে বিক্রি কম হতে পারে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে সীমান্ত বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে এবারও ভারতীয় গরু বাংলাদেশে আসবে না। আমরা চেষ্টা করেছি ভারতীয় গরু ছাড়াই যাতে পশুর চাহিদা পূরণ করা যায়। এতে আমরা সফল হয়েছি।

আরও পড়ুন: আগামী ৬দিন (২-৭ জুলাই) যেসব অঞ্চলে ঝড়োহাওয়াসহ মাঝারি/ভারী বর্ষণ

দেশে শিক্ষিত তরুণেরা ইদানীং বিপুল উৎসাহে গবাদিপশুর খামার গড়ে তুলছেন। তাঁরা বেশির ভাগই পারিবারিক উৎস থেকে বিনিয়োগ করছেন। আবার ভালো লাভ পাওয়ায় সাধারণ কৃষকেরাও গরু-ছাগল লালন-পালন বাড়িয়ে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: প্রয়োজনে পশুরহাটের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে

ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান বলেন, এই উৎসাহী তরুণেরা এবং কৃষক এবার করোনার কারণে ক্ষতির মুখে পড়বেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য কোনো আর্থিক সহায়তা ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়নি।

চাহিদার ‍তুলনায় উদ্বৃত্ত কোরবানির পশু ৯ লাখ, বিক্রিতে দুশ্চিন্তা এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছেন খামারিরা। নইলে বড় ধরণের বিপাকে পরবেন তারা।