অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলতি বছরজুড়ে পাম অয়েলের দামে ব্যাপক টালমাটাল পরিস্থিতি দেখা গেছে। দামের উঠানামা কিছুতেই স্থিতিশীল হয়নি। আগামী বছরেও পাম ওয়েলের দামে তীব্র অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার মধ্যে কাটবে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বোর্ড।

বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর পাম অয়েলের দামে ব্যাপক টালমাটাল পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে। পণ্যটির দাম কখনো রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। আবার কখনো এক লাফে অনেক কমেছে। বৈরী আবহাওয়া, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে এর পেছনে দায়ী করেছেন তারা।

আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ দুই পাম অয়েল উৎপাদক দেশ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় মৌসুমী ঝড় অব্যাহত থাকবে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে পাম অয়েল সরবরাহ ব্যাহত হবে। ফলে এ সময় পণ্যটির বাজারদর থাকবে চড়া। মালয়েশিয়ায় এখন বর্ষা মৌসুম চলছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে দ্বিতীয় শীর্ষ পাম অয়েল উৎপাদক দেশটিতে চলছে বন্যা।

সম্প্রতি এক অনলাইন সেমিনারে মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বোর্ডের মহাপরিচালক আহমেদ পারভেজ গোলাম কাদির বলেন, আগামী বছরও পাম অয়েলের বৈশ্বিক বাজারে অনিশ্চয়তা লেগে থাকবে। আবহাওয়ার প্যাটার্ন পরিবর্তন হওয়ায় পণ্যটির চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য কমে যেতে পারে। তার ওপর শ্রমিক সংকট, মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা পরিস্থিতিকে আরো কঠিন করে তুলবে।

তিনি আরো বলেন, কয়েক বছর আগেও অংশীজনরা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বাজার সম্পর্কে একটি সম্ভাব্য ধারণা দিতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে সেটি অনেকটাই দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

চীনে ২৫ লাখ টন পাম অয়েল বিক্রি করবে ইন্দোনেশিয়া

২০ লাখ টন পাম ওয়েল মজুদ মালয়েশিয়ার

মালয়েশিয়ার পাম ওয়েলের মজুদ সর্বোচ্চে পৌঁছেছে

১৫ মাসের সর্বনিম্নে নেমেছে মালয়েশিয়ান পাম অয়েলের দাম

খাদ্যশস্যের পাশাপাশি সূর্যমুখী তেলবীজ উৎপাদনে নেতৃস্থানীয় দুই দেশ ইউক্রেন ও রাশিয়া। কিন্তু দেশ দুটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে তেলবীজটির বাণিজ্যে ভাটা পড়ে। সূর্যমুখী তেলের ভোক্তারা বিকল্প পণ্য হিসেবে পাম অয়েলের ব্যবহার বাড়ান।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই পণ্যটির চাহিদা ও দাম—দুটোই বেড়ে যায়। যুদ্ধের প্রভাবে মার্চে মালয়েশিয়ান বাজার আদর্শ পাম অয়েলের দাম রেকর্ড উচ্চতায় আরোহণ করে। প্রতি টনের মূল্য দাঁড়ায় ৭ হাজার ২৬৮ রিঙ্গিত বা ১ হাজার ৫৮৬ ডলার ২১ সেন্টে। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত দাম প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে।

এদিকে বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ পরিস্থিতির সঙ্গে প্রতিনিয়তই সংগ্রাম করছে পাম অয়েলের বাজার। এছাড়া স্থানীয় বাজারে খাদ্যের সরবরাহ সুরক্ষিত রাখতে ইন্দোনেশিয়া অস্থায়ীভাবে পাম অয়েল রফতানি বন্ধ করে দিয়েছিল। বিষয়টিও ভোজ্যতেলের বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

দ্বিগুণ পরিমাণ পাম অয়েল আমদানি করছে ভারত

মালয়েশিয়া থেকে পাম ওয়েল আমদানি কমাতে পারে চীন

রাতারাতি বাড়লো মালয়েশিয়ান পাম অয়েলের দাম

বিদেশে পাম ওয়েলের লিটার ৭১, দেশে ১৫৪ টাকা

রাষ্ট্রায়ত্ত মালয়েশিয়ান পাম অয়েল কাউন্সিল জানায়, রিঙ্গিতের বিনিময় মূল্য কমে যাওয়ার পাশাপাশি বন্যা নিয়ে দেশটিতে উদ্বেগ বাড়ছে। ফলে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত পণ্যটির দাম টনপ্রতি ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৪০০ রিঙ্গিতের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে।

মালয়েশিয়ান পাম অয়েল কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী আইশা ওয়ান হামিদ বলেন, আগামী বছরের মার্চ নাগাদ প্রতি টন পাম অয়েলের মূল্য দাঁড়াতে পারে টনপ্রতি ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার ৩০০ রিঙ্গিতে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে দাম আরো কমে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ রিঙ্গিতে অবস্থান করবে। সর্বশেষ গতকাল ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি টন পাম অয়েল ৪ হাজার ১৭২ রিঙ্গিত বা ৯১০ ডলার ৫২ সেন্টে বিক্রি হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ