নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: রাজশাহীতে লাল লেয়ার মুরগির ডিম মাঝামাঝি অবস্থায় রয়েছে। দেশী মুরগির ডিমের হালি ৬৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির ডিমের ক্রেতা কম হলেও দামের দিকে ডিমের রাজ্যে চড়া মূল্য। অন্যদিকে শুধু ডিমে নয় মুরগির দামও বাড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

খামারে উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণেই ডিমের প্রতিপিসে ২ টাকা বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আজ বুধবার (১২ অক্টোবর ২০২২) রাজশাহীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, সাহেববাজার মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজার ও লক্ষীপুরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব জায়গাতেই ডিমের দাম একই। তবে খুচরা মুদি দোকান ও টঙ দোকানগুলোতে হালিতে ৩-৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

ডিমের দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে রাজশাহীর সাহেব বাজার মাস্টারপাড়া এলাকার ডিম ব্যবসায়ী মিলন হোসেন বলেন, ডিমের যা দাম আছে তাতে কিছুটা কমতে পারে। আবার নাও কমতে পারে; বলা যায় না পোল্ট্রি সেক্টরের কথা! হটাৎ আমদানি বেড়ে গেলে দাম কমে যায়। আবার বাজার টান পড়লে দাম বাড়ে। এটা নিশ্চিত খামারিরা কিছুটা লাভ পেয়েছে। বর্তমান দাম থাকলে তারা ভালো থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু ভোক্তাদের অসন্তোস বাড়ছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

ডিম মুরগির দাম বাড়ার আসল কারণ!

সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পোল্ট্রি শিল্প

ব্রয়লারের দামে ধস, ব্যবসা গোটাচ্ছেন খামারিরা

ডিমের দামে লাইফ সাপোর্টে লেয়ার মুরগির খামারিরা

তিনি বলেন, শীতে ডিমের দাম কিছুটা বাড়ে। কিন্তু এবার সারবছরই চড়া দাম। প্রতিহালি (৪টি) লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকায়। সাদা ডিম ৪২ টাকা ও হাঁসের ডিম ৬০ টাকা, দেশী মুরগি ৬৬ টাকা হালি দরে বিক্রি করছি।

এদিকে মুরগি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে, ব্রয়লার ১৭০ টাকা দরে বিক্রি করছি। সপ্তাহে শুরুর দিকে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে কিন্তু হাটৎ ১০ টাকা বেড়েছে। সোনালী ২৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে আগে আর এখন ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এই ব্যবসায়ী আরোও বলেন, লাল লেয়ার ৩০০ টাকা, সাদা লেয়ার বাজারে তেমন নাই তবে প্যারেন্ট বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা, দেশী মুরগি নাই, পাতিহাঁস বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকা কেজি দরে যা ৩০০ টাকা দাম ছিল এবং রাজহাঁস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা কেজি দরে।

ডিমের দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, রাজশাহীর ৭০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়েছে। এ কারণে বাজারে ডিমের দাম বেশি। তবে এটি বেশি নয়। উৎপাদন খরচ বেড়েছে তাই বেশি মনে হচ্ছে। আমাদের খাপ খোইয়ে নিতে হবে। খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে অনেক ডিমপাড়া লেয়ার খামারি মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন। আর হাতবদলের কারণে ডিমের দাম বাড়ছে। খামার থেকে সংগ্রহ করেন একজন, সেখান থেকে ডিলারের কাছে আসতে দাম বাড়ে প্রতিপিসে ১ টাকা। আবার ডিলার নিজে নেন ৫০ থেকে ৬০ পয়সা। বাঁকি খুচরা যারা যা দামে বিক্রি করতে পারেন।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

ডিমের দাম নিয়ে কারসাজি, শীঘ্রই ব্যবস্থা

সোনালী মুরগির দাম বেড়েছে ৫০ টাকা!

ডিম, মুরগির দাম কমানো বাড়ানোর নেপথ্যে যাদের কারসাজি

পাকিস্তানে একটি ডিমের দাম ৩০ রুপি

ডিমের দাম আর বাড়বে না বলেই মনে হচ্ছে। খাদ্যের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৮০০ টাকা। কিন্তু ডিমের দাম সেই তুলনায় বাড়েনি। বড় বড় কোম্পানিগুলো ডিম উৎপাদনে নেমেছে তাই প্রান্তিক খামারিদের দু:খ ঘোঁচে না। আর খাদ্যের দাম বাড়ানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের উৎপাদনের তথ্য বলছে, দেশে ২০১০ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল ৬০০ কোটি পিস, যা এখন ১ হাজার ৭৩৬ কোটিতে পৌঁছেছে। এক দশকে উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদাও বেড়েছে। দেশে প্রতিদিন মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। পৃথক হিসাবে, কেবল মুরগির ডিম উৎপাদন হয় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি। তবে, হাঁসের ডিমের সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডিমের ভোগ ৭ দশমিক ২ গ্রাম থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ গ্রাম বেড়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ