নিজস্ব প্রতিেেবদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সকল মানুষের জন্য দৈনিক ২ হাজার ১২২ কিলোক্যালরি খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে দারিদ্র্য এখনও অন্যতম বাধা। বাংলাদেশে এখন প্রায় আড়াই কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। গত দশ বছরে অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৭ লাখ।

আজ মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ক্রিশ্চিয়ান-এইডের সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘নারী ও কন্যাশিশুদের খাদ্য পরিস্থিতি এবং খাদ্য অধিকার’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন।

বক্তারা বলেন, অন্যান্য বিষয়ের মতো নারী ও কন্যা শিশুর খাদ্য পরিস্থিতি আরো নাজুক। বিদ্যমান সামাজিক কাঠামো ও পশ্চাদপদ ধারণার কারণে আমাদের সমাজে এখনও অনেক ক্ষেত্রে মায়েরা পরিবারের পুরুষ এবং ছেলে শিশুদের ভাল খাবারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেন এবং কন্যাশিশুদের খাইয়ে যা অবশিষ্ট খাকে তাই খান অথবা কোন কোন সময় অভূক্ত থাকেন।

তারা জানান, এরকম বাস্তবতায়, নারীর স্বাস্থ্য রক্ষায় বয়ঃসন্ধিকাল, যৌবনকালসহ সব বয়সে প্রয়োজন অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে নারীর পুষ্টিহীনতার হার হ্রাস আশাব্যঞ্জক নয়। সামাজিকভাবে নারীর প্রতি অধস্তন দৃষ্টিভঙ্গীর কারণেও নারী ও কন্যা শিশুরা চাহিদা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য ও পুষ্টি পায় না।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে নারী ও কন্যশিশুর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিগত দিক দিয়ে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। উৎপাদন থেকে শুরু করে খাদ্য টেবিলে পৌছানো পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে সরকার নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে চায়।

এ সময় খাদ্য মন্ত্রী নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্যের পুষ্টিমান সম্পর্কে প্রতিটি স্তরে সকলকে সচেতন হতে হবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে। উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়পক্ষের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে সরকার সচেতন ও উদ্যোগী ভুমিকা রাখছে। এক্ষেত্রে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সেমিনারে উত্থাপিত সুপারিশসমূহের বেশকিছু বিষয় সরকারের বিবেচনায় রয়েছে জানিয়ে বলেন, এই সুপারিশসমূহ নিয়ে মন্ত্রণালয় সমৃদ্ধ হবে এবং এর আলোকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ এর ভাইস-চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, সামাজিক প্রক্রিয়ার বিষয়গুলো শুধুমাত্র আইন দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট সময় এবং সচেতনতা। নারী ও কন্যা শিশুদের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাা নিশ্চিত করতে আচরনগত ও মানষিক পরিবর্তন অপরিহার্য।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী রওশন আক্তার খাদ্যাভাসের ইতিবাচক পরিবর্তনে বিভিন্ন উদ্যোগ ও প্রশিক্ষনের বিষয়ে আলোকপাত করেন।

সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় যুগ্ন সচিব আব্দুল করীম (এনডিসি) বলেন, খাদ্য অধিকার একটি মানবাধিকার, অন্যান্য মানবাধিকার নিশ্চিত করতে খাদ্য অধিকার সর্বাগ্রে নিশ্চিকত করতে হবে। সকল বেসরকারি সংগঠনকে এই বিষয়কে তাদের কর্মসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করার বিষয়ে আলোকপাত করেন তিনি।

ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এ- ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন দুর্যোগকালীন নারী ও কন্যা শিশুদের খাদ্য পরিস্থিতি বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি নারী-পুরুষের সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন জোরদার করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

একশন এইড বাংলাদেশ দেশীয় পরিচালক ফারাহ কবীর কবির খাদ্য নিরাপত্তার অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ-এর দেশীয় পরিচালক সাকেব নবী বলেন, একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য মা ও কন্যাশিশুদের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ সচিবালয়ের সমন্বয়কারী কানিজ ফাতেমা। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী।

সেমিনারে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, প্র্যাকটিকাল একশন, বাউসি, ইফ্রি, ক্রিশ্চিয়ান এইড, ডব্লিউএফপি, বিউইকে, এফএও, বাস্তবসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন এর প্রতিনিধিগণ সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।

এরকম বাস্তবতায়, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে।