মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: রাতে খামারে জ¦লছে বৈদ্যুতিক বাতি। সাদা সাদা মুরগিতে পড়েছে সেই আলো। ঝাঁক বেঁধে এক কোন থেকে অপরকোনে পাঁয়চারি করছে প্রায় ৪ হাজার হোয়াইট লেগ হর্ণ জাতের সাদা মুরগি। বয়স খুব কম, মাত্র ৬০ দিন। এসব মুরগি ডিম উৎপাদনের আগে পুলেট হিসেবে বিক্রি করে দুই চালানে লাখ পাঁচেক টাকা পকেটে তুলেছেন মো: মোমেন হোসেন।

রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের কিসমারিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোমেন। প্রায় তিন দশক ধরে পোল্ট্রি সেক্টরে আছেন। আগের তুলনায় বর্তমানে লাভের পরিমাণ কমার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন তিনি। তারপর নতুন এ কৌশলে নেমে পড়েন। এতে লাভের সংখ্যা প্রচলিত ডিম উৎপাদন ব্যবসার চেয়ে কিছুটা লাভজনক হিসেবেই দেখছেন তিনি। অন্তত ব্যবসা বন্ধের চেয়ে জীবন ধারণের জন্য নতুন কৌশল না হলে টিকে থাকা যাবে না- বলছেন তিনি।

গত ৯ নভেম্বর সরেজমিনে এই অভিজ্ঞ খামারির কয়েকটি শেড ঘুরে দেখা যায়, একটা শেডে লাল লেয়ার মুরগি রয়েছে ৩ হাজার। এসব মুরগি নিজেই একদিনের বাচ্চা থেকে পালন করে উৎপাদনের নিয়ে এসেছেন তিনি। পাশেই রয়েছে সাদা পুলেট উৎপাদনের জন্য শেড। এক শেডে রয়েছে আড়াই হাজার সাদা হোয়াইট লেগ হর্ণ। আরেকটি শেডে ৬০ দিন বয়সের ১ হাজার ৮০০ পুলেট রয়েছে। মোট দুই শেডে ৩৮০০ পুলেট আর ১৪ মাস বয়সী লাল লেয়ার মুরগি নিয়েই আপাতত টিকে আছেন এই খামারি।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

চাকরি ছেড়ে লেয়ার মুরগিতে বাজিমাত ইরাক ফেরত ফারুকের

শীতকালে লেয়ার গ্রোয়ার পালনে সতর্কতা ও নিয়মাবলী; পর্ব ১

শীতের সময়ে লেয়ার গ্রোয়ার পালনে ভ্যাক্সিন সিডিউল; পর্ব-৩

জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমি ৩০ বছরের মতো সময় পোল্ট্রি সেক্টরে আছি। আগে যে খাদ্যের দাম ১২’শ টাকা ছিল তা বর্তমানে ৩৪’শ টাকা। ডিমের দাম আগে সাড়ে ৫ টাকা বিক্রি করে যে লাভ পেয়েছি এখন ৯ টাকা বিক্রি করে লাভ পাচ্ছি না। তাই ভাবলাম নতুন কিছু করা যায় কিনা। তারপর পুলেট মুরগি তৈরির কাজে নেমে পড়লাম। ইনভেস্ট যে পরিমাণ করতে হচ্ছে তাতে লাভের তুলনায় টিকে থাকা ছাড়া অন্য কিছু করা সম্ভব নয়।

পুলেট পালনের বিষয়ে জানতে চাইলে এই অভিজ্ঞ খামারি বলেন, আমার বর্তমানে পুলেটে ইনভেস্ট করা আছে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। ৪ হাজার মুরগিকে খাবার, ঔষুধ, তারিখ ধরে ধরে ভ্যাকসিন করা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এসব করতে ডাক্তার খরচ সব মিলিয়ে পরিশ্রম করে ৫ লাখ টাকা লাভ তেমন কিছু না। আমার কাছে অর্ডার আসছে প্রচুর তাই তৈরি করে দিচ্ছি। খামারিরা শেড তৈরি করে ৯০ দিন বয়সের পুলেট নিয়ে গিয়ে খাঁচায় তুলছে তারপর ১২০ দিনে ডিম উৎপাদন শুরু হয়ে যাচ্ছে। এজন্য খামারিরা আমার কাছে এসে অর্ডার করছে। ৩ মাসের মধ্যে শেড রেডি করছে আর আমি মুরগি দিচ্ছি। এইভাবেই মূলত সহযেই খামার তারা করতে পারছে।

দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে আসলে আমি যে দাম না নিলেই নয় সেটাতে বিক্রি করে দিই। খুববেশি লাভ হয়না। আর গ্যারান্টি দিয়ে দিই-সবগুলো ভ্যাকসিন প্রাণিসম্পদের ডাক্তার দিয়ে করানো হয়। যারা এরমধ্যে নিয়ে খামারে তুলেছে আমার মুরগি তারা এখন ডিম বিক্রি করছে দিব্যি। আল্লাহর রহমতে কোন সমস্যা আজ পর্যন্ত হয়নি। আমার প্রথম চালানে ২১’শ মুরগি একজনকেই দিয়েছি পড়ে ৩১’শ দিয়েছি ৯২ দিন বয়সের মুরগি। দুই চালানে আমার লাভ এসেছে ৫ লাখ টাকার মতো। তবে, ৪০-৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ৫ লাখ টাকা লাভ এটা আসলেই বেশি নয়। যদি হটাৎ কিছু হয়-আল্লাহ না করুক; তাহলে একবারে অর্ধেক চলে যাবে। দাঁড়ানো যাবে না।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

মাছ মাংস ডিমের উৎপাদন রপ্তানির পর্যায়ে পৌঁছেছে

ডিমের দামে হতাশ খামারিরা, উঠছেনা উৎপাদন খরচ

মাছ, মাংস, দুধ, ডিম উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে

পুলেট পালন কেন? এমন প্রশ্নে মোমেন বলেন, একদিনের মুরগির বাচ্চা খামারে তোলার পর মারা যাওয়ার শঙ্কা থাকে, সঠিক ব্রুডারিং করতে পারেনা নতুন খামারিরা, আবার শিডিউল অনুযায়ী ভ্যাকসিন করতে পারেনা। রাণীক্ষেত, গামবুরো, কলেরা ইত্যাদি রোগে অনেক নতুন উদ্যোক্তা লোকসান করেন। তাদের জন্য আমি ভাবলাম মুরগি তৈরি করে দিলে তারা নতুন খামারে মুরগি তোলার পরই লাভে আসতে পারবে। তাছাড়া মুরগি কেনার পর এক মাসের জন্য অনেক ডিলারের কাছে খাদ্য বাঁকিতে নিয়ে পরে শোধ করে দেন। এক্ষেত্রে লাভ হয়।

এসব খামারে নিয়মিত টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করেন নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ল্যবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট আতাউল হক। জানতে চাইলে তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে, সবগুলো মুরগি সুস্থ্যতার গ্যারান্টি দেওয়াই যায়। আল্লাহর রহমতে কোন সমস্যা আজ পর্যন্ত হয়নি। অত্যন্ত যত্নের সাথে মুরগিগুলো বড় করা হয়। টিকা দেওয়া হয় শিডিউল অনুযায়ী। ফলে রোগ বালাই নিয়ে চিন্তা নাই।

নতুন এ পদ্ধতিতে পোল্ট্রি সেক্টরের উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করেন দূর্গাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো; আব্দুল লতিফ। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমাদের উপজেলায় খামারিদের আলাদা আলাদা তালিকা তৈরি করা আছে। নতুনভাবে পুলেট পালন করে সেটা বিক্রি করতে পারলে তা অবশ্যই ভালো একটি বিষয়। আমি সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে খামারি মোমেন হোসেনের সাথে কথা বলব। বুড় বড় খামরিদের সাথে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ করা হয়। খোঁজ খবর নেওয়া হয়। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রাণিসম্পদ খাত এগিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ